‘সাজা কম হলে জামিন দেওয়ার প্রথা আছে’

প্রকাশিতঃ 7:37 pm | February 22, 2018

সিনিয়র প্রতিবেদক, কালের আলো:

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদনে তার আইনজীবীরা বলেছেন, আদালতের প্রথা আছে সাজা কম হলে জামিন দেওয়ার।

আপিল গ্রহণ হওয়ায় সেটি কার‌্যতালিকায় নিয়ে জামিন শুনানির জন্য দুদক আইনজীবী অভিমত দিলে আদালত তাদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেন। একই সঙ্গে আদালত দুদককে আগামী রবিবার বেলা দুইটায় শুনানির প্রস্তুতি নিতে সময় দেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি শুরু হলেও দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আগামী রবিবার বেলা দুইটায় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর জামিন আবেদনের শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ সময় আদালত কক্ষে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। শুনানির আগে আইনজীবীরা হইচই শুরু করলে তাদের শান্ত হওয়ার জন্য ১০ মিনিট সময় দিয়ে এজলাস ছেড়ে যান দুই বিচারপিত।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশিদ আলম খান।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। তার ছেলে তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের জেল এবং আসামিদের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার করে জরিমানা করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে করা খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শুরু হলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমাদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত রয়েছেন। তবে আপিলটি শুনানি করবেন এ জে মোহাম্মদ আলী।’

এরপর এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১০(১) ধারায় আপিলটি করা হয়েছে। আমি আপিল শুনানির জন্য গ্রহণের আবেদন করছি। আপিল গ্রহণ হলে জামিন আবেদন দেওয়া হবে। ৪০৯ ধারায় আপিলকারীকে সাজা দিয়েছে ওই আদালত।’

আদালত বলেন, ‘অ্যাডমিশনে কি প্রেয়ার আছে না শুধুই আপিল অ্যাডমিশন চেয়েছেন? অ্যাডমিশনের পরে আর কী প্রেয়ার আছে?’

এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একটা আপিল অ্যাডমিশনের আবেদনে নরমালি যা যা থাকে আমরা তা-ই চেয়েছি।’

নথি দেখে আদালত বলে, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী সাজা বা দণ্ড স্থগিতের বিধান আছে। কনভিকশন কি স্থগিত করা যায়? ক্রিমিনাল অ্যাক্ট ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে কনভিকশন স্থগিতের বিধান নাই। আপনারা তো কনভিকশনও স্থগিত চেয়েছেন।’

এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এটা গতানুগতিক, এটা ঠিক করে দিব। সাধারণত এটা একটা প্রথা। সে জন্য এটা আমরা চেয়েছি।’

এরপর আদালত আপিল আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দেন। আপিল শুনানির জন্য আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতের মামলার নথি উচ্চ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আর আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর‌্যন্ত খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড স্থগিত রাখার আদেশ দেন আদালত।

এরপর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করেন এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘১৫ দিন ধরে তিনি (খালেদা) কাস্টডিতে আছেন। যেহেতু তাকে শর্ট সেনটেন্স দেওয়া হয়েছে, সেজন্য আমরা তার বেইল চাচ্ছি। বয়স, সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় জামিন পাওয়ার হকদার তিনি।’

এ পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘আপিল ইতিমধ্যে আদালত গ্রহণ করেছেন। আজকে সকালে আমরা জামিন আবেদন পেয়েছি। রেকর্ড আসার পর বিষয়টি তালিকায় এনে শুনানি করা হোক।’

আদালত বলেন, ‘আপিলকারীরা বলেছেন এই মামলায় সাজা তো কম। আদালতের প্রথা আছে সাজা কম হলে জামিন দেওয়ার।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই মামলায় মেরিট আছে। এ কারণে এটা আমরা কার‌্যতালিকায় এনে শুনানি করতে চাই।’

খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘আমরা অ্যাডমিশনের শুনানি করতে পারি নাই।’

আদালত বলেন, ‘যখন শুনানির প্রয়োজন তখনই আপনাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

এরপর দুদক আইনের ৩৩(৫) ধারা দেখিয়ে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘এ ধরনের বিশেষ আইনের মামলার ক্ষেত্রে দুদককে যুক্তিসঙ্গত সময় দিয়ে শুনানি করতে হবে। আর আমরা আজ ৯টা ৩১ মিনিটে জামিনের আবেদনরের কপি পেয়েছি।’

আদালত বলেন, ‘তারা তো অন মেরিট জামিন চাচ্ছে না। পুরো রেকর্ডের কি দরকার আছে?’

খুরশিদ আলম খান, ‘ফৌজদারি আইন ব্যবস্থায় নারী বলে আদালত জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু দুদক আইনে সে সুযোগ নেই। জামিনের আবেদন অনেক বড়, গ্রাউন্ডও অনেক।’

আদালত বলেন, এ কারণেই তো টকশোতে আপনি আলোচনার সুযোগ পেয়েছেন।

খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি কার‌্যতালিকায় এনে শুনানি করা হোক।’

এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সাধারণত কম সাজা হলে আপিল করলে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়।’

আদালত বলেন, ‘আপিল বিভাগের অনেক আদেশ আছে কম সাজা হলে জামিন দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো বিশেষ আইন প্রণয়নের আগে। যেহেতু দুদক আইনে আছে তাদের যুক্তিসঙ্গত সময় দেওয়ার তাই আমরা রবিবার দুপুর ২টায় শুনানির জন্য রাখলাম।’

কালের আলো/এমএস

Print Friendly, PDF & Email