‘পরিবেশ পুলিশ’ কেন প্রয়োজন, জানালেন আইজিপি
প্রকাশিতঃ 7:14 pm | April 06, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
পরিবেশ দূষণে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। চারপাশে থাকা ইটভাটা, শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়াসহ নানা কারণেই দূষণের মাত্রা বাড়ছেই। ঢাকাকে ঘিরে বুড়িগঙ্গা এবং শীতলক্ষ্যাসহ নদীগুলোর দূষণের মাত্রা সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
এখন দেশের অন্য শহরগুলোর মানুষও রেহাই পাচ্ছে না দূষণ থেকে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এই দূষণের মাত্রা তৈরি করছে সঙ্কটময় পরিস্থিতি। পরিবেশ অধিদফতর কার্যত ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হয়ে থাকায় অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে পরিবেশ পুলিশের।
পরিবেশ রক্ষায় এমন পরিস্থিতিতে ‘পরিবেশ পুলিশ’ গঠনের সুতীব্র প্রয়োজনের দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটায়ারী, বিপিএম (বার)।
তিনি বলেছেন, ‘পরিবেশ অধিদফতর পরিবেশ বিঘ্নিত হলে আইন প্রয়োগ করে থাকে। সত্যিকার অর্থে যদি পরিবেশ রক্ষা করতে হয় তাহলে পরিবেশ পুলিশের প্রয়োজন আছে।’
বাংলাদেশ পুলিশে দীর্ঘ ৩৩ বছরের বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতায় বাস্তববাদী, জীবন ও পরিবেশ সচেতন পুলিশ প্রধান ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছেন নিজ চোখে। চাকরির সুবাধেই গোটা দেশ চষে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের নানা ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করেই আইজিপি বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ পুলিশের প্রয়োজন রয়েছে।
অভিজ্ঞতার আলোকেই তিনি বলেছেন, ‘যেখানে সেখানে রাস্তার আশে পাশে যে পরিমাণ ইটভাটা তৈরি হচ্ছে তাতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এক কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের সময় ৮ থেকে ১০ টি ইটভাটা চোখে পড়ে। ইট ভাটাগুলো যেভাবে মাটির টপসয়েল নষ্ট করে জমির উর্বরতা ধ্বংস করছে, তাতেও আশেপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’
শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইলে পুলিশ অফিসার্স মেস উদ্বোধনকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন পুলিশ প্রধান।

পরিবেশ অধিদফতরের সমালোচনা না করলেও বাস্তবতার নিরিখেই আইজিপি বলেছেন, ‘পরিবেশ অধিদফতর সরকারের আলাদা একটি সংস্থা। তাদের নিজস্ব গতিতে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পরিবেশ যেখানে বিঘ্নিত হয় সেখানে তারা আইন প্রয়োগ করে থাকে।
কৃষি জমিতে কৃষি পণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য ইটভাটাগুলোকেই দায়ী করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ইটভাটার ধোঁয়ায় মানুষও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলেছেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ‘এসব সমস্যা সমাধানে পরিবেশ অধিদফতরের পর্যাপ্ত পরিমাণ জনবল আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে এসব সমস্যার জন্য যদি পরিবেশ পুলিশ থাকতো তাহলে আমরা সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারতাম’ বলেছেন পুলিশ প্রধান।
দূষিত বর্জ্যে আঁধারে পরিণত হয়েছে বুড়িগঙ্গা। অথচ এক সময় বুড়িগঙ্গার অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক আবাসিক প্রতিনিধি জন টেইলর লিখেছিলেন, ‘বর্ষাকালে যখন নদীটি পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন দূর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো।’
বুড়িগঙ্গাসহ অন্য নদীগুলোর দূষণ প্রবাহেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পুলিশ প্রধান। টাঙ্গাইলে তিনি বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি নদী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ আশেপাশের নদীগুলোর পানিকে আর পানি বলা যাবে না।
বুড়িগঙ্গার পানির কালার ও দুর্গন্ধের কারণে নদীর কাছে যেতে ইচ্ছে করে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নদীগুলো নির্মল থাকে। নদীর পাড়গুলো এমনভাবে থাকে যেখানে মানুষ বেড়াতে যায়।

উন্নত দেশের নদীগুলো সংরক্ষণ করা হয়। আমাদের এদেশেও সম্ভব। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। যারা নদীতে ময়লা আর্বজনা ফেলে তাদের নিষেধ করতে হবে। নদীকে সংস্কার করে যেভাবে ব্যবহার করা উচিত যেভাবে ব্যবহার করলে পরিবেশ বজায় থাকবে।’
পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী গত বছরের সেপ্টেম্বরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই পুলিশ বাহিনীর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কীভাবে পুলিশকে বদলে দিয়েছিলেন তাঁর অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণী চিত্রও উপস্থাপন করেছিলেন।
পুলিশ প্রধান বলেছিলেন, পুলিশের পেশাগত স্পন্দন অনুভব করেই বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর, দক্ষ ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), টুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশসহ বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নির্দেশনায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে বিনিয়োগ হিসেবেই সব সময় উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তাঁর সরকার একটি নিরাপদ শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের কৌশলগত পরিকল্পনা, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করে কর্মক্ষেত্রে পুলিশের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথাও উচ্চারণ করেন।
সচেতন সাধারণ মানুষ মনে করেন, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সবুজ আবাস নিশ্চিত করতে হলে পরিবেশ পুলিশ এখন সময়ের দাবি। দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীর প্রধান নিজেও এই বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা যেখানে তাঁর দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি সবিশেষ সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করেছেন।
সময়ের প্রয়োজনেই পুলিশের নতুন নতুন ইউনিট গঠন করেছেন। সেখানে পরিবেশ বিপর্যয় রক্ষায় ‘পরিবেশ পুলিশ’ গঠনেও অতীতের মতোই কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করবেন বলে আশাবাদী পরিবেশবাদীরাও।
কালের আলো/এএ