‘ছদ্মবেশীদের’ টার্গেট ধর্ম প্রতিমন্ত্রী?

প্রকাশিতঃ 6:24 am | March 25, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো: আব্দুল্লাহকে নিয়ে রীতিমতো ‘অপপ্রচার’ শুরু হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মিলাদ ও ক্বিয়ামকে নিয়ে তিনি বিরূপ মন্তব্য করেছেন এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তাকে বিব্রতকর এক পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করানো হয়েছে।

অথচ রাসূল (সা.)-এর শান মোতাবেক প্রায় ৪০ বছর যাবত মিলাদ পড়ে আসছেন প্রতিমন্ত্রী। এমনকি যখন বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করতে গিয়ে কেউ মিলাদ ও ক্বিয়াম পড়ার সাহস করতেন না তখন স্বমহিমায় মিলাদ ও ক্বিয়াম পড়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসলামী সুশিক্ষায় আলোকিত, কোরআনের হাফেজ প্রতিমন্ত্রীর সাদা জামায় ‘কালো দাগ’ লাগিয়ে বিতর্কিত করার হীন প্রয়াস নিয়ে মুখে ফেনা তুলছেন একদল ‘ছদ্মবেশী’। হঠাৎ করেই তাদের ‘টার্গেট’ হয়ে উঠেছেন দেশের আলেম-ওলামাদের এই প্রিয় মানুষ।

মূলত এমন মিথ্যাচারের আড়ালে ধর্মীয় উন্মাদনাকে পুঁজি করে তৌহিদী জনতার আবেগ-অনুভূতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে সরকারকে ‘কোটা আন্দোলন’র মতো বিপাকে ফেলে একটি বিশেষ মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নই এখানে মুখ্য বিষয় হয়ে উঠছে কীনা এ নিয়েও মোটা দাগে প্রশ্ন উঠেছে।

তবে আজগুবি ও ডাহা মিথ্যাচারের অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ। বিভ্রান্তি ছড়ানো বিশেষ মহলকেও তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন। রোববার (২৪ মার্চ) রাতে কালের আলো’র সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মিলাদ ও ক্বিয়াম হচ্ছে শ্রেষ্ঠ এবাদত।

১৯৭৬ সালে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে ভয়ে অনেকেই যেতে সাহস করেনি। ওই সময়ে আমি বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করেও মিলাদ-ক্বিয়াম পড়েছি।

তিনি বলেন, প্রিয় নেতা শেখ মুজিবের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেছি। প্রতি বছর এখনো সেখানে আলেম-ওলামাদের নিয়ে আমার নেতৃত্বে মিলাদ হয়। অথচ আমার বিরুদ্ধে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’

ষড়যন্ত্রের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী কালের আলোকে আরো বলেন, আমি মাদ্রাসায় পড়া লোক। আমি দায়িত্ব নিয়েই মন্ত্রণালয়ে বসে ঘোষণা দিয়েছি আল্লাহ এবং আল্লাহ’র রসূলের চিন্তা-চেতনার বাইরে আমি নিজে কোন কাজ করবো না। কাউকে করতেও দিবো না। আমার এই অবস্থান হয়তো কারো কারো পছন্দ হয়নি। তাঁরাই আমাকে হেয় করতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যার বেসাতি করে বেড়াচ্ছে।’

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দোয়া মাহফিলের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, সেদিন বায়তুল মোকাররমে সেই অনুষ্ঠানে আমি মিলাদ পড়িয়েছি। একটি টিভি চ্যানেল সেটি সরাসরি প্রচার করছে। আমার সামনে পুলিশের সিআইডি’র প্রধান হেমায়েত সাহেব উপস্থিত ছিলেন।

আমি নিজেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মিলাদের আয়োজন করলাম, জাতির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া চেয়ে বক্তব্য রাখলাম। অথচ এখন অহেতুক মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ধর্মের মধ্যে কোন বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। যারা এসব ষড়যন্ত্র করছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জের আসনে উন্নয়নসহ নানা কাজের তদারকি করেন তিনি। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রধান নির্বাচনী পরিচালনাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। শিক্ষাজীবন শেষে চাকুরিতে যোগ দিতে চাইলেও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দলের কঠিন দু:সময়ে হাল ধরেন।

নিজের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা, নির্লোভ, আদর্শিক চরিত্র নিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের পথে দৃঢ়তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যার আস্থা অর্জন করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হেফাজতসহ অন্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে নিজ দল আওয়ামী লীগের দূরত্ব কমিয়ে আনতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়েও তার কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন আলেম সমাজ। নিজের আবেগঘন, যুক্তিনির্ভর তেজ্বসী বাগ্মিতায় জয় করেছেন আলেম সমাজের হৃদয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ইমেজ পুনরুদ্ধারে তিনি হার্ডলাইনে রয়েছেন। নানা অনিয়মের কারণে প্রতারক অনেক হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করেছেন। ফলে স্বভাবতই ওই চিহ্নিত প্রতারকরা তাঁর প্রতি ভীষণ অসন্তুষ্ট। গত ক’দিনের এসব অপপ্রচারের সঙ্গে ওই হজ এজেন্সিগুলোরও কোন যোগসূত্র রয়েছে কীনা এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।

কালের আলো/এএ

Print Friendly, PDF & Email