রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ সরকারের
প্রকাশিতঃ 7:43 am | February 05, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
প্রতি বছর রোজার মাসে বেশি চাহিদা থাকে তেল, চিনি, ছোলা, আদা, ডাল, খেজুরসহ নানা পণ্যের। রমজান মাস শুরুর বাকি এখনো প্রায় এক মাস। এবার অন্তর্বর্তী সরকার রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার টার্গেট নিয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ইতোমধ্যেই বলেছেন, দেশে যথেষ্ট আমদানি ব্যবস্থা ও মজুত আছে। তাই আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না। নিত্যপণ্যের দামেও ঊর্ধ্বগতিই যেখানে নিয়ম সেখানে বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে উদ্বেগ কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
সরকারের আশ্বাসে ভরসার প্রধান কারণ হচ্ছেÑসিয়াম সাধনার মাসে ভোক্তার বাড়তি চাহিদার জোগান দিতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বৃহত্তর পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পণ্য আমদানি ও গুদামজাতকরণ শুরু করছেন তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত পাঁচ মাসে সাড়ে ছয় লাখ টনেরও বেশি খালাস হয়েছে মসলাজাতীয় পণ্য। এই হিসাব গত বছরের ডিসেম্বরের। ফলে মসলার দাম আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে খাতুনগঞ্জে। অন্যদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ও নেতারা লাপাত্তা হওয়ায় পণ্য আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। এজন্য বাজারে শিগগিরই এর সুফল মেলার সম্ভাবনা জেগেছে। শুধু তাই নয়, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। পাশাপাশি ঋণপত্র খুলতে এখন মার্কিন ডলারের সঙ্কটও অনেকটা কেটেছে। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে রোজায় বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় তিন লাখ টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি মাসে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে প্রায় চার লাখ টন। আবার সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিনবীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন। এই বীজ মাড়াই করে পাওয়া যাবে প্রায় অর্ধলাখ টন সয়াবিন তেল, অর্থাৎ রোজার চাহিদার চেয়ে বাজারে সরবরাহ বেশি থাকবে।
রোজায় চিনির চাহিদাও তিন লাখ টনের মতো। বিগত ১৫ মাসের মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। আমদানির পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার টন। বন্দরে এসেছে আরও প্রায় এক লাখ টন চিনিসহ জাহাজ। ফেব্রুয়ারি মাসেও চিনি আমদানি হবে। এক লাখ টনের মতো ছোলার চাহিদার বিপরীতে গত জানুয়ারি মাসে এই পণ্য আমদানি হয়েছে ৯৩ হাজার টন। ডিসেম্বরে এসেছিল আরও ১৫ হাজার টন। এক লাখ টন চাহিদার বিপরীতে জানুয়ারিতে মসুর ডাল এসেছে ৬২ হাজার টন। ক’দিন আগে ২৫ হাজার টন মসুর ডাল নিয়ে বন্দরে ভিড়েছে একটি জাহাজ। ফেব্রুয়ারিতেও আমদানি হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রোজায় মটর ডালের চাহিদাও বেশি থাকে। ব্যবসায়ীদের হিসাবে, রোজায় এক লাখ টন মটর ডালের চাহিদা রয়েছে। জানুয়ারিতে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার টন। ট্যারিফ কমিশনের হিসাব মোতাবেক- রোজায় খেজুরের চাহিদা ৬০ হাজার টন। জানুয়ারিতে এসেছে ২২ হাজার টন। বড় চালান আসবে ফেব্রুয়ারিতে। বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম চলছে। দাম অনেকটাই কমেছে। রোজার মাসে বীজ থেকে উৎপাদিত হালি পেঁয়াজের ভরা মৌসুম থাকবে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজ নিয়েও কোন উদ্বেগ নেই।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেছেন, দেশে যথেষ্ট আমদানি ব্যবস্থা ও মজুত আছে। আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না। বাজারে তেল, চিনি, ছোলা ও খেজুরের কোনো সঙ্কট নেই। ক’দিন আগে রাজধানীতে বণিক বার্তা আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের যে দাম দেখি দেশের বাজারে তাতে দাম কমার কথা। দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখি না। বাজারের সঠিক প্র্যাকটিস নিশ্চিত করার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন আছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে, আছে ব্যবসায়ী পরিসর বৃদ্ধি করার জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সর্বোপরি বাজারকে ভোক্তার জন্য সহনীয় করতে ট্যারিফ কমিশন এবং এনবিআর কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, বছরে ৫-৬ লাখ টন রাইস ব্র্যান অয়েল ভারতে চলে যেত। রাইস ব্র্যান অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। আমরা এটার রপ্তানি কঠিন করে দিয়েছি। অলরেডি ২৫ শতাংশ রেগুলেটরি ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। এই তেল বাজারে এলে বর্তমানের চেয়ে তেলের বাজার আরও স্থিতিশীল হবে। বোতল তেল ও খোলা তেলের ভিতর কোনো পার্থক্য নেই, একমাত্র পার্থক্য দাম বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।
কালের আলো/এমএএএমকে