পুলিশ সদস্যরা মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখবেন : ডিএমপি কমিশনার
প্রকাশিতঃ 8:57 pm | March 10, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ
পুলিশের কোনো সদস্য মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখার আহবান জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেছেন, পুলিশের কোনো সদস্য মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখবেন।আমরা এসে টেনে নিয়ে যাবো। সাধারণ অপরাধীর মতো তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
রোববার (১০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ডিএমপি আয়োজিত ‘মাদক ও জঙ্গি বিরোধী সমাববেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইতোমধ্যে অনেক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলেও এসময় জানিয়েছেন তিনি।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যারা মাদক বহন করে তারা গরিব মানুষ। কিন্তু যারা ব্যবসা করে, অর্থদাতা কিংবা আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতারা বড়লোক। সেসব প্রভাবশালীদের সহায়তা ছাড়া কোনো গরিব মাদক বহন করতে পারে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মাদকসহ কেউ ধরা পড়লে আদালতের মাধ্যমে তার জবানবন্দি নিয়ে আশ্রয়দাতা-লিডারকে শনাক্ত করে তাকে আইনের মুখোমুখি করা হবে। ‘
তিনি বলেন, একটা সত্য কথা বলি, কেউ কিছু মনে করবেন না। পুলিশের সহযোগিতা কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতা ছাড়া মাদকব্যবসা চলতে পারে না। পুলিশ যদি মাদকের আস্তানা থেকে চাঁদা তুলে, নেতারা যদি চাঁদা তুলে কিংবা সুবিধা নেয় তাহলে মাদকব্যবসা বন্ধ করা যাবে না।

তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি-স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে বলবো, আপনারা দল ভারী করার জন্য বা অন্য যেকোনো কারণে চোর-ছিনতাইকারী বা মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেবেন না। তাহলে আপনারাও রক্ষা পাবেন না।
তিনি বলেন, কাউকে ভয় করি না, উপরে আল্লাহ আর নিচে কবর- ছাড়া কিছু নেই। কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তার অবস্থান যাই হোক কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
মাদক ব্যবসায়ীদের কঠিন পরিণতির কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, লালবাগে হজরত আলী নামে এক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ছিলো। যার নামে ৩৩ টি মাদকের মামলা। গত সপ্তাহে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সে মারা গেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, রমনা এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ী পালিয়ে যাওয়ার সময় তার পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আমরা এতটুকু পিছপা হইনি। মাদক দমন করতে প্রয়োজনে একই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে মাদক নির্মূল করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কেউ দমাতে পারবে না। যারা মাদক খায়, ব্যবসা করে, অর্থলগ্নি করে, আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেয় তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
‘গত চার বছরে ঢাকা মহানগরীতে ছিনতাই-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি নেই বললেই চলে’ মন্তব্য করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কেউ চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করলে আপনারা নাম দেবেন। সেইসব চাঁদাবাজদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলবো।

‘এরপরেও ২-১ টা ঘটনা ঘটলে আমরা চতুর্দিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করে ফেলি। বনানীতে সিদ্দিক নামে এক ব্যবসায়ীকে তার অফিসে ঢুকে খুন করা হয়েছিল। যারা খুন করেছে তাদের কেউ আর দুনিয়াতে নেই।’
পুলিশে আমূল পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, জনগনের নিরাপত্তার জন্য শুধু লাঠিবাজি নয়, বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরা হাজার হাজার উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মানুষের কাছে যাচ্ছি। পুলিশের কাছে কাউকে যেতে হবে না, পুলিশ আপনার দরজায় যাবে। লাঠিবাজি করে ক্ষমতা দেখানোর দিন নাই, মানুষকে বসে আনতে কিংবা আস্থা অর্জন করতে হবে সেবা দিয়ে। আমরা যদি পেন্ডিং মামলায় কাউকে গ্রেফতার দেখাই, পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে চালান দেই তাহলে পুলিশ মানুষের পিটুনি খাবে।

গত দশ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ বছর পর লাইনে দাঁড়িয়ে যাকাতের কাপড় নেয়ার মানুষ থাকবে না। তবে সকল উন্নয়নই মাটি হয়ে যাবে যদি মাদক নির্মূল করতে না পারি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জঙ্গিদের কোমর ভেঙে দেয়া হয়েছে, তাদের কোমর সোজা করে আর দাঁড়ানোর সক্ষমতা নেই। এখন আসুন, যদি আমরা দেশকে ভালোবেসে থাকি তাহলে মাদককে উপড়ে ফেলি।
‘এখানে যদি ২-১ জন মাদক ব্যবসায়ী থাকেন তাহলে বলবো, তওবা করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিন। অন্যথায় স্থানীয় কমিটির সদস্যদের বলবো, এরপরেও কেউ মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে আমাদের খবর দেবেন,’ যোগ করেন তিনি।
কালের আলো/এমএইচএ