ডেঙ্গুতে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সারি
প্রকাশিতঃ 11:35 pm | October 12, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। ছাড়িয়ে যাচ্ছে অতীতের মৃত্যুর সব রেকর্ড। চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) থেকে সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৯১৫ জন। শনিবার (১২ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে এসব তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক কারণে এবার দেরিতে এসেছে বর্ষা। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়ে দীর্ঘায়িত হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই চার মাস হলো ডেঙ্গুর মূল মৌসুম। এবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহেও ডেঙ্গু রোগের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। কোনো ক্রমেই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সংস্থা দুটি। ফলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, গত বছর ঢাকা শহরে এডিস ও কিউলেক্স মশার উপদ্রব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে। গত বছর ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবেই লাখ ছাড়ায়। এ রোগে মারা গেছে দেড় হাজারের বেশি। চলতি বছরও প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সারি।
শনিবার (১২ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১০৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৭ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০০, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৭৫, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৫৬, খুলনা বিভাগে ৯৭ জন রয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগে ২৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৫ জন, রংপুর বিভাগে ৯ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত একদিনে সারা দেশে ৭৮০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৫২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৪১ হাজার ৮১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২১০ জনের। এছাড়াও গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।
কীটতত্ত্ববিদরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসে যেখানেই বৃষ্টির পানি জমছে, সেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আবার এমন কিছু জায়গায় এডিস মশা প্রজনন করছে, যেখানে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি। প্রত্যেককে নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। কোনো পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে, এ কথা আগেই বলেছিলাম। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এ অবস্থায় অক্টোবরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে।’
কালের আলো/আরআই/এমএএইচ