মানবতার চিরন্তন হৃদয়াবেগে বানভাসিদের পাশে নৌবাহিনী; পুনর্বাসনে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্ব নৌবাহিনী প্রধানের
প্রকাশিতঃ 11:18 pm | August 27, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
ভয়াবহ বন্যায় কূলকিনারাহীন পানিতে ভাসছে ফেনীসহ দেশের ১১টি জেলা। পানিবন্দি দুর্বিষহ এক জীবন। পানিবন্দি জীবন থেকে ফিরে আসা কেউ দেখেছেন লাশ ভাসতে; আবার কেউ দেখেছেন মানুষের ক্ষুধার কষ্ট। শিশুর আহাজারিতে ভিজেছে চোখ। আপনজন হারানোর শঙ্কায় সময় গুনছেন দূরে থাকা মানুষ; চারিদিকে হাহাকার। আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছেন প্রতিটি ক্ষণ।
বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। খাবার, পানি আর চিকিৎসা সহায়তার মাধ্যমে তাদের সীমাহীন কষ্ট লাঘবে মানবতার চিরন্তন হৃদয়াবেগ নিয়ে দুর্গত মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্যোগ অতিক্রম করে জীবনের বুনিয়াদ অব্যাহত রাখতে তাঁরা প্রতি মুহুর্তে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণান্তকর প্রয়াস।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দুর্গম গ্রাম ঘনিয়া মোড়া। গ্রামটির চারদিকে থই থই পানি। কোথাও দেখা মেলেনি মাটির। এত পানি, এত সঙ্কটের মাঝেও পানিবন্দি অনেকেই বাড়িতে রয়েছেন। সবার চোখে অশ্রু, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। নৌবাহিনীর বোটযোগে এমন সময়ে তাদের মাঝে উপস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান। তাঁর উপস্থিতিতে ছুটে আসেন বন্যাদুর্গতরা। সব পানিতে তলিয়ে যাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, খোঁজ-খবর নেন তিনি।
সর্বনাশা বন্যায় বিপন্ন মানুষের প্রতি বাড়িয়ে দেন সহানুভূতি ও সহমর্মিতার হাত। বিতরণ করেন ত্রাণ সামগ্রী। এভাবেই তিনি পর্যবেক্ষণ করেন দুর্গত বিভিন্ন গ্রাম। ছুটে যান নিজ বাহিনীর স্থাপিত ফুলগাজী মহিলা কলেজ সংলগ্ন ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের কাছেও। পরে নৌবাহিনী প্রধান নৌ কন্টিনজেন্ট, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। জেলার সামগ্রিক বন্যা কবলিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করে উদ্ধার, ত্রাণ সরবরাহ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে নিয়োজিত নৌ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
দুর্যোগে ঐক্যবদ্ধ দেশের মানুষ। অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে তাঁরা হাতে রেখেছেন হাত, মনে রেখেছেন মন। সব জায়গায় এক চুমুক বিশুদ্ধ পানির বড্ড অভাব। এক ইঞ্চি জায়গাও বাকী নেই, যেখানে নেই পানির স্রোত। এমন দু:সময়ে বানের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বন্যার্তদের পুনর্বাসনে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ কাজের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘আকস্মিক বন্যায় ফেনী জেলার বিপর্যস্ত এলাকায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থানীয় প্রশাসন, ছাত্র-জনতা, সশস্ত্র বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে কাজ করলে খুব শীঘ্রই এ অবস্থা হতে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যত দিন প্রয়োজন হবে তত দিন নৌবাহিনীর চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
নৌবাহিনী চিকিৎসা দলের সাথে অনেকেই কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করায় তিনি তাদের সাধুবাদ জানান। নৌবাহিনী প্রধান আরও বলেন, পুনর্বাসন একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া বিধায় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কাজ করবে। এ ব্যাপারে জনসাধারণকে ধৈর্য ধরার ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আহবান জানান। এছাড়াও তিনি বলেন- সঠিক লোক যেন সঠিক সহায়তা পায় এবং ত্রাণ সামগ্রীর সুষম বণ্টন হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। নৌবাহিনী সব সময় মানুষের পাশে ছিল এবং থাকবে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সাথে কোস্টগার্ড, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয় জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অংশগ্রহণ করায় তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (অপারেশন্স) রিয়ার এডমিরাল আনোয়ার হোসেন, ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে ইমিডিয়েট রেসপন্স ফেজ এ বাংলাদেশ নৌবাহিনী দ্রুততার সাথে বন্যা কবলিত এলাকায় উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। এখনও সেই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনীয় উদ্ধার সামগ্রী, বোট, লাইফ জ্যাকেট ও ডুবুরিসহ তিন শতাধিক নৌ সদস্য উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। নৌ কন্টিনজেন্টগুলো এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। সেই সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকার গবাদিপশু ও অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রীসমূহ নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করেছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের মিরসরাই, খুলনার পাইকগাছা, ভোলার রাজাপুর এলাকায় নৌবাহিনীর অন্যান্য কন্টিনজেন্টসমূহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও মানবিক বিপর্যয় রোধে কাজ করে যাচ্ছে। ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের মাধ্যমে নৌবাহিনী বন্যা দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে যা বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কাজ করবে।
কালের আলো/এমএএএমকে