৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগের ৪৩ বছরই নেতৃত্বে শেখ হাসিনা

প্রকাশিতঃ 12:57 pm | June 23, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পেয়েছে স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ দল নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন তার মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে উন্নত, স্মার্ট দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত এ দলটির ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী ও দলটির বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা এককভাবে ৪৩ বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা তার বয়সের হিসাবেও ‍অর্ধেকের বেশি সময় ধরে দলটির নেতৃত্বে আছেন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭৭ বছর চলছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনবার বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৮৬ সালে দুই বছর এবং ১৯৯১ সাল থেকে পাঁচ বছর এবং ২০০১ সাল থেকে পাঁচ বছরসহ মোট ১২ বছর সংসদে বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালীন সময়ে বিদেশে থাকাকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আওয়ামী লীগের টানা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নেতৃত্বে বেশ আগেই তিনি ছাড়িয়ে গেছেন পিতা মুজিবকে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠাকালে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৩ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে টানা ১৩ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করে ১৯৬৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই হিসাবে তিনি ২৫ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু চার মেয়াদে ৯ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও শেখ হাসিনা ১০ মেয়াদে টানা ৪৩ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অসংগঠিত ও ব্র্যাকেটবন্দি দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করেছেন। তার নেতৃত্বে দল অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী।

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে আওয়ামী ‍লীগ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বেশকিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রাচীন এ রাজনৈতিক সংগঠনটি গঠনে ওই সময় টাঙ্গাইলের একটি উপনির্বাচনেরও ভূমিকা রয়েছে বলে সেখানে উঠে এসেছে। ওই সময় (১৯৪৯ সালে) মুসলিম লীগের প্রার্থী করোটিয়ার বিখ্যাত জমিদার খুররম খান পন্নীকে হারিয়ে উপনির্বাচনে জয়ী হন শামসুল হক (আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক)। সেটাই ছিল পাকিস্তানে মুসলিম লীগের প্রথম পরাজয়। নির্বাচনে জিতে ঢাকায় আসার পর শামসুল হককে জনগণ সংবর্ধনা দেয় এবং কর্মী সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয় বলে বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, শামসুল হক সাহেব ইলেকশনে জয়লাভ করে ঢাকায় আসলে ঢাকার জনসাধারণ ও ছাত্রসমাজ তাঁকে বিরাট সংবর্ধনা জানালো। বিরাট শোভাযাত্রা করে তাঁকে নিয়ে ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করলো। আমি জেলে বসে বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করলাম। শামসুল হক সাহেবের ফিরে আসার পরই পুরানা লীগ কর্মীরা (আগে মুসলিম লীগের সঙ্গে ছিল এমন) মিলে এক কর্মী সম্মেলন ডাকলো ঢাকায় ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করার জন্য। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন সে সভা ডাকা হয়েছিল (পৃষ্ঠা ১১৯)।

বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনীর ১২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘কর্মী সম্মেলনের জন্য খুব তোড়জোড় চলছিল। জেলে বসে খবর পাচ্ছিলাম। ১৫০ মোগলটুলিতে অফিস হয়েছে’ বলেও তিনি লিখেছেন। লিখেছেন, শওকত মিয়া সকলের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করছেন। ঢাকার পুরানা লীগ কর্মী ইয়ার মোহাম্মদ খান সহযোগিতা করছিলেন। এছাড়া অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান খান, আলী আমজাদ খান, আনোয়ারা খাতুন এমএলএ।

১৯৫৩ সালে সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘মওলানা ভাসানী আমি ও আমার সহকর্মীরা সময় নষ্ট না করে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করলাম। পূর্ব বাংলার জেলায়, মহকুমা, থানায় ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে এক নিঃস্বার্থ কর্মীবাহিনী সৃষ্টি করতে সক্ষম হলাম। (পৃষ্ঠা ২৪৩)।’

কালের আলো/বিএস/এমএম