দেশের কারাগারগুলোতেও ঈদের ছোঁয়া

প্রকাশিতঃ 11:04 pm | June 16, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

পশুত্বকে পরাভূত করার শিক্ষা নিয়ে আবারও এসেছে কোরবানির ঈদ। আত্মত্যাগ, আত্মসমর্পণ এবং নিজকে উৎসর্গ করার মহিমায় উদ্ভাসিত মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা সোমবার (১৭ জুন)। ঈদের এ দিনটি প্রিয়জনের সঙ্গে কাটাতে পরিবারের কাছে ফিরে যায় সব মানুষ। তবে কারাগারের বন্দীদের জন্য এদিনটা থাকে একটু ভিন্ন। এমন খুশির দিনেও যেহেতু তাদের স্বজনদের ছেড়ে থাকতে হয়, তাই প্রতিবছরই দুই ঈদে কারাবন্দীদের আনন্দ দিতে নানা আয়োজন করে কারা অধিদপ্তর।

ঈদের দিন বন্দীদের যেন মন খারাপ না থাকে ও পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন না করতে পারার দুঃখ ভুলে থাকতে পারেন সেজন্য প্রতিবারই কারা অধিদপ্তর দেশের ৬৮টি কারাগারে এমন ভিন্ন মাত্রার আয়োজন করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের ছোঁয়া লেগেছে কারগারেও। ফলে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে কারাগারেও। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে না পেলেও ভরপুর খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে দিন কাটবে তাদের।

কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কারা বন্দীরা যেন ঠিকভাবে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে কোনো কমতি রাখেননি কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক। প্রতিটি কারাগারে ঈদের জামাতের পাশাপাশি বন্দিদের জন্য ঈদের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) জেলার নাশির আহমেদ কালের আলোকে জানান, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) বন্দিদের জন্য থাকছে উন্নত খাবারের ব্যবস্থা। এছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে কারাগারের ভেতরে থাকছে বন্দিদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা।

তিনি জানান, ঈদুল আজহার দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দুটি স্টাফদের ও একটি বন্দিদের। বন্দিদের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে কারাগারের ভেতরের ময়দানে। ঈদের দিন বন্দিদের সঙ্গে তাদের স্বজনরা নিয়ম অনুযায়ী দেখা করতে পারবেন। এছাড়া স্বজনরা বাসা থেকে রান্না করে বন্দিদের খাবার দিতে পারবেন।

জেলার জানান, এবার ঈদের দিন বন্দিদের বিনোদনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঈদের নামাজের পরপরই সকালের দিকে বন্দিদের নিয়ে গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। বিকেলের দিকে হবে বন্দিদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় আট হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে। তাদের জন্য এদিন উন্নত খাবার রান্না করা হবে। ঈদের দিন সকালে পায়েস ও মুড়ি দিয়ে দিন শুরু হবে বন্দিদের। দুপুরে বন্দিরা খাবেন পোলাও, গরুর গোস্ত, মুরগির ঝাল ফ্রাই ও খাসি। পাশাপাশি থাকবে কোমল পানীয়, মিষ্টি। পান সুপারিরও ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া রাতে বন্দিরা খাবেন সাদা ভাত, রুই মাছ ও ছোলার ডাল।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ সূত্র জানায়, বন্দিদের সুস্বাদু ও উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে। সকালে পায়েস ও মুড়ি এবং দুপুরে পোলাও, মাংস দেওয়া হবে। বন্দিরা নিজেদের মধ্যে গল্প-গুজব করে সময় কাটাবেন। স্বজনরাও দেখা করতে আসবেন।

চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, দেশের সব কারাগারের মতো চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বন্দিদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম কালের আলোকে বলেন, ‘সরকার কারাগারগুলোকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করার চেষ্টা করছে। মাননীয় আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল ইসলাম মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশনা ও গতিশীল নেতৃত্বে আমরাও সেভাবে চেষ্টা করছি। বর্তমানে কারাগারটিতে ১ হাজার ৬৯৮ জন বন্দি রয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় বন্দিদের ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকালে পায়েস মুড়ি, দুপুরে পোলাও গরুর মাংস, খাসি, মুরগির ডিম, সালাদ ও পান সুপারি দেওয়া হবে। সন্ধ্যায় সাদা ভাত, আলুর দম ও রুই মাছ থাকবে বন্দিদের পাতে। অন্য দিনের চেয়ে তাই নতুন রূপে ঈদের আনন্দ ধরা দেবে কারাবন্দিদের জীবনে।’

কালের আলো/এমএএএমকে