ফের বন্ধ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, অপেক্ষায় হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশী

প্রকাশিতঃ 6:16 pm | June 01, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হলো। ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার (১ জুন) থেকে বাংলাদেশি কোনো কর্মী শ্রমিক ভিসায় মালয়েশিয়ায় ঢুকতে পারবেন না। শুধু বাংলাদেশই নয় আরও ১৪ দেশের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে মালয়েশিয়া। এদিকে, দেশটিতে যাওয়ার জন্য সকল প্রক্রিয়া শেষ করে অপেক্ষায় রয়েছেন ত্রিশ হাজার কর্মী। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মো. শামীম আহসান জানিয়েছেন, নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, যারা ভিসা পেয়েও ঢুকতে পারেননি তারা যেন দ্রুত দেশটিতে পৌঁছাতে পারেন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে দেশটিতে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী গেছেন। এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৭২ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার (১ জুন) থেকে বন্ধ হয়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এই ঘোষণার ফলে প্রায় ৩০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে কোনো কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। গত জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপরিষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি পুনরায় করার অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী যান মালয়েশিয়ায়।

শুক্রবার (৩১ মে দুপুরে) মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এয়ালাইন্স অপারেটস এসোসিয়েশন এক নোটিশে বলা হয়, ৩১ মে শুক্রবার রাত ১২ টার মধ্যে ফ্লাইট ছাড়লে ১ জুন মালয়েশিয়া পৌঁছালেও সেই কর্মীদের প্রবেশ করতে দেবে দেশটি। তবে তারিখ অনুযায়ী ১ জুন অর্থাৎ শুক্রবার রাত ১২ টা পার হয়ে গেল, সেই ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের কর্মীদের গ্রহণ করবে না মালয়েশিয়া সরকার। এই নোটিশের খবরে বাংলাদেশে ভিসা পাওয়া কর্মীরা ভিড় জমান বিমানবন্দরে। কিন্তু ফ্লাইট না পাওয়ায় অনেক ঝামেলাও হয় সেখানে। কর্মীরা জানান, তারা জমি বন্ধক রেখে, কেউ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সিকে টাকা দিয়ে ভিসা করেছেন। এখন যেতে পারছেন না।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শুক্রবার রাতে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন মো. শামীম আহসান। রাতভর বিমানবন্দরে তিনি অবস্থান করেন এবং সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এ প্রসঙ্গে তার প্রথম সচিব প্রেস সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ জানান, মালয়েশিয়া রাত ১২টার পর বাংলাদেশ থেকে আসা কর্মীরা নির্বিঘ্নে ইমিগ্রেশন পার করছেন। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। ৩১ মে বাংলাদেশ ত্যাগ করে যারা মালয়েশিয়ায় আসছেন ১২টার পরেও তারা ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন।

এদিকে ভিসা পাওয়ার পরও যেসকল বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় যেতে পারছেন না তাদের যেন দ্রুত নিয়ে আসা যায় সেজন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন হাই কমিশনার মো. শামীম আহসান। তিনি গনমাধ্যমকে জানান, পাঁচ লাখ ২৭ হাজারের বেশি ডিমান্ড লেটার সত্যায়ন করেছে হাইকমিশন। এ পর্যন্ত চার লাখ ৭২ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় এসেছে। কমিশন নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, তারা যেন প্রতিশ্রুত কাজে যোগদান করতে পারেন। বিভিন্ন জটিলতায় হয়তো তারা আসতে পারছেন না। কিন্তু হাইকমিশনের প্রচেষ্টা চলমান বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোয় অনিয়মের ঘটনায় টানা চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে নতুন করে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া।

এরপর গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, আপাতত আর কর্মী নেবে না দেশটি। যারা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাদের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে। এ জন্য কয়েক দিন ধরে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর আশ্বাসে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ঢাকায় আসছেন। তারা প্রতিদিনই ভিড় করছেন বিমানবন্দরে। কিন্তু প্লেনের টিকিট না পেয়ে অনেককেই অনিশ্চয়তায় সময় কাটাতে হচ্ছে। তারা আদৌ যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ