উপকূল অতিক্রম করছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’

প্রকাশিতঃ 8:55 pm | May 26, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টার পর এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। রাত ৯/১০টা নাগাদ এর মূল অংশ অতিক্রম করতে পারে। একই সঙ্গে মোংলাও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত বহাল রয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপকূলের দিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল যত এগোচ্ছে গতিবেগ একটু একটু করে বাড়ছে। ফলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিস।

প্রসঙ্গত, ঝড়ের গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘তীব্র’ ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে সেটিকে ‘হ্যারিকেন’ গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। ভারতের পূর্বাভাস অনুযায়ী তীব্র ঘূর্ণিঝড় রিমাল গতি বাড়িয়ে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এখন রিমালের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকাশে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ হিসেবে এটিকে এখনও তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা যায়। রিমালের গতিবেগ বাড়তে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। অনেক সময় বৃষ্টি ঝরে গতি কমে যায়। আবার অনেক সময় স্থলভাগের ধাক্কা লেগে গতি বেড়েও যায়।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা ঘূর্ণিঝড় গতিবিধি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিকেলে এর গতিপথ ছিল ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার। অতিক্রম শুরুর পর এটির গতিপথ বেড়েছে। এখন গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের পুরোটা অতিক্রম করবে মধ্য রাতের পর।

এদিকে, রিমালে অতিক্রমের প্রভাবে বিকেল থেকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা বাতাস বইছে, সঙ্গে আছে বৃষ্টি। বিভিন্ন জেলায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অনেক গ্রাম। আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে হাজারো মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

এছাড়াও উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকুলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া সহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসে হতে পারে।

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ