রমজানে নতুন করে কোনো জিনিসের দাম বাড়েনি: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 4:46 pm | April 02, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

দ্রব্যমূল্য এখন নিম্নমুখী উল্লেখ করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ‘রমজান মাসে নতুন করে কোনো জিনিসের দাম আর বাড়েনি।’

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) কারওয়ান বাজারে রাজধানীর ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভবনের সামনে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরবর্তীতে পেঁয়াজ আনতে সমস্যা হবে না। আমরা তাড়াহুড়ো করব না। আমাদের লোকাল পেঁয়াজ আছে। আমরা চাই না, আমাদের খামার খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। বাজারটা যেন এমন পরিস্থিতিতে থাকে, কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পায় এবং ভোক্তাদের অতিরিক্ত মূল্য দিতে না হয়।’

ভারতের সাথে সম্পর্কের কারণেই রোজায় পেঁয়াজ পেয়েছি
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ভারত সরকারের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক, সে সম্পর্কের কারণেই কিন্তু আমরা রমজানে আজকে পেঁয়াজটা পেয়েছি। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নরকম রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়, প্রতিবেশী দেশ থেকে যদি আমরা পেঁয়াজ না আনতাম, আমাদের পেঁয়াজের বিকল্প হল মিশর, পেঁয়াজের বিকল্প হল তুর্কি (তুরস্ক)। আনতে জাহাজে লাগে অনেক সময়, আর এই কোয়ান্টিটি আনা যায় না। আনতে আনতে, ডিস্ট্রিবিউশন করতে করতে থাকে না। ভারতে নির্বাচন চলছে, তাদের কৃষক আন্দোলন চলছে, ভোক্তা পর্যায় আছে, সব কিছু মোকাবেলা করে তারা কমিটমেন্ট রেখেছে। এজন্য আমি ধন্যবাদ দিই।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম যে আমরা এই পেঁয়াজটা এনে ভোক্তা পর্যায়ে রোজার আগে পৌঁছাতে পারব কিনা। আপনারা বিশ্বাসও করবেন না এই পেঁয়াজ দিল্লি থেকে লোডিং হয়ে, আমাদের দর্শনা হয়ে, সিরাজগঞ্জ হয়ে ট্রাকে আজকে এখানে এসেছে, এটার জন্য আনবিলিভেবল লজিস্টিকস দরকার হয়েছে। এটা এমনভাবে এসেছে যে একটা পেঁয়াজও নষ্ট হয়নি।

তিনি বলেন, পলিসি মেকিং বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু আমাদেরকে অনেক সময় ঝুঁকি নিতে হয়েছে। পেঁয়াজ আনা, দরদাম ঠিক করা এই প্রত্যেকটা জিনিসই কিন্তু আমরা নিজেরা বসে ঠিক করেছি দায়িত্ব নিয়ে। এবং এর মধ্যে অনেক ঝুঁকি ছিল যে দেখা গেল পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কমে গেল। তারপর কিন্তু আমরা এই ঝুঁকি নিয়েছি।

রোজার প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজ না আনতে পারার কারণ ব্যাখ্যা করে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এই একই পেঁয়াজ ভারত সরকার আবুধাবিতে ১২০০ ডলারে বিক্রি করছে। আমাদের জন্য নির্ধারিত ছিল ৮০০ ডলার। যখন আমরা ক্যালকুলেশন করলাম, দেখলাম ৮০০ ডলারের পেঁয়াজ আনলে আমাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে, বা বাজারের মূল্যের সাথে সমন্বয় সম্ভব না।

“ফলে আমাদের বাণিজ্য সচিব (তপন কান্তি ঘোষ) তিন দিন তার টিম নিয়ে কন্টিনিউয়াস নেগোসিয়েশন করেছে। এজন্য আমাদের দেরি হয়েছে ৭ দিন। আবার ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারতের নিষেধাজ্ঞা ছিল, তারা সেটা এক্সটেন্ড করেছে। যদিও আমাদের ৫০ হাজার টন এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছিল না। এই শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমাদের পেঁয়াজ আনতে হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের এই যে অভিজ্ঞতা হল, বাকী পেঁয়াজগুলো আনাও আমাদের জন্য কোনো সমস্যা হবে না। যেহেতু সামনে রমজান, আমরা দেখব যে কত দ্রুত আমরা আনতে পারি। তাড়াহুড়ো করব না, আমাদের লোকাল পেঁয়াজও আছে। আমরা চাই না আমাদের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। বাজারটা যেন এমন থাকে যেন কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায় এবং ভোক্তারাও যেন অতিরিক্ত মূল্য না দিতে হয়। আমরা এই পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছি ভোক্তা পর্যায়ে এবং ৪০ টাকাতেই দেয়া হবে।”

ভারত থেকে আনা এই পেঁয়াজের মান ভালো এবং তা ১০ থেকে ১৫ দিন সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই ট্রাকসেলটা কিন্তু ওপেন। এটা কার্ডধারীরাও পাবে, অন্যান্যরা নিতে পারবে। আমরা দুই কেজি করে বলেছিলাম, এখন আড়াই কেজি করে এক একজন ভোক্তা নিতে পারবে।

ধীরে ধীরে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুলিশ দিয়ে না, সরবরাহ তৈরি করেই আমরা দাম কমাব। এটা কিন্তু আজকে প্রমাণিত। যদি আমরা বিকল্প সরবরাহ ঠিক রাখতে পারি, বাজারে চাইলেও দুই-চারজন বাজার ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে পারবে না। আমরা আমাদের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুধু পেঁয়াজ না, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের টিসিবির মাধ্যমে আমরা বাফার স্টক তৈরি করব।

প্রসঙ্গত, ভারত থেকে আমদানির ৫০ হাজার মে.টন পেয়াজের ১হাজার ৬৫০ টন পেয়াজ দেশে পৌঁছেছে। প্রতিজন ভোক্তা ৪০ টাকা দরে পেয়াজ ক্রয় করতে পারবেন যা ঢাকার মহানগরের ১০০টি স্থান সহ গাজীপুর ও চট্টগ্রাম মহানগর এর খোলাবাজারে আজ থেকে বিক্রি হচ্ছে।

এ সময় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ চেয়ারম্যান ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ আরিফুল হাসান,পিএসসি,ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের অতিরিক্ত পরিচালক খন্দকার নুরুল হক ও মোহাম্মদ রবিউল মোর্শেদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/ডিএস/এমএম