পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন

প্রকাশিতঃ 3:59 pm | March 18, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূত হতে শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংক ও প্রচলিত ধারার পদ্মা ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন হলো। এখন থেকে পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন; করতে পারবেন অন্যান্য লেনলেন।

সোমবার (১৮ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকে এ দুই ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।

তিনি বলেন, এই সমঝোতা চুক্তির ফলে পরিচালনা পর্ষদে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালকরা। দুই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সে বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। তবে পদ্মা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার-কর্মচারীই চাকরি হারাবেন না।

এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মার একীভূত হওয়াকে ‘পদ্মায় জাল ফেলেছে এক্সিম ব্যাংক। এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার পালা’ উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।

তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে পদ্মা ব্যাংক ভালো হয়ে যাবে। চাইলে পদ্মা ব্যাংকের যে কোনো ব্যক্তিগত আমানতকারী তার টাকা এক্সিম ব্যাংক থেকেই তুলে নিতে পারবেন। পদ্মা ব্যাংকের সকল দায়ভার এখন থেকে গ্রহণ করল এক্সিম ব্যাংক।

একই দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, মার্জার (একীভূত) প্রক্রিয়ায় এখনো শেষ হয়নি। শেষ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করবে। এরপর থেকে তারা একত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এই প্রক্রিয়ার পরেই পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন।

তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক অপর ব্যাংকে মার্জার (একীভূত) করতে হলে তিন সংস্থার (বাংলাদেশ ব্যাংক, আদালত ও বিএসইসি) সমন্বয়ে লাগে। ব্যাংকের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা কোর্টে যাব। এরপর আমাদের সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমতির প্রয়োজন হবে। এভাবেই সব ব্যাংকের মার্জার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

এর আগে এক্সিম ব্যাংক ও চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যাংকের পর্ষদে অনুমোদন হয়।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে জানান, আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হ‌বে।

এ বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান সম্প্রতি বাংলানিউজকে বলেন, মার্জার অ্যান্ড রিকুইজেশন মানে হলো সবল ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড করা। একটা দুর্বল ব্যাংককে যদি সবল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে দেওয়া হয় তাহলে দুর্বল ব্যাংক মৌলগতভাবে শক্তিশালী হয়ে যাবে। তার মানে আমানতকারীর আমানত যেমন নিশ্চিত করা হবে, সাথে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত (মার্জার) করতে একটি রোডম্যাপ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ বা পিসিএ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচক ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

দ্য ফারমার্স ব্যাংক নামে ২০১৩ সালে পদ্মা ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। কিন্তু শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ব্যাংকটিকে বাঁচাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রুপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেওয়া হয়। দ্য ফারমার্সের নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক করা হয়।

সার্ব-অডিনেট বন্ড জারি ও স্থায়ী আমানত রাখার মতো অন্যান্য সহায়তার আকারেও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। অভ্যন্তরীণ কিছু সংস্কার ও ক্ষুদ্র আকারে ব্যাংকটির যাত্রা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছিল না।

মূলত পদ্মা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বড় ধরনের সাফল্য দেখাতে না পারার কারণে সহায়তা দিয়েও ব্যাংকটির মূলধন ক্ষয় ঠেকানো যায়নি।

শেষে সরকারের বর্তমান মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘোষিত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে পদ্মা ব্যাংককে শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভুত হওয়ার চুক্তি সম্পন্ন হলো।

কালের আলো/বিএসবি/এনএম