ময়মনসিংহে পুলিশের ১৫ মামলায় আসামি বিএনপি-জামায়াতের ৩ শতাধিক নেতাকর্মী: গ্রেফতার অর্ধশত
প্রকাশিতঃ 7:41 pm | February 07, 2018
আমান উল্লাহ আকন্দ জাহাঙ্গীর :
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে চরম হার্ডলাইন নিয়েছে পুলিশ। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। গত তিন দিনে নাশকতার অভিযোগে জেলার ১২টি থানায় ১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। গত সোমবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে বুধবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন থানায় এসব মামলা দায়ের হয়।
সূত্র জানায়, পুলিশ বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় এসব মামলা দায়ের করেছে। মামলায় প্রায় বিএনপি-জামায়াতের তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আরো কয়েক শত নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মী।
জানা যায়, জেলার ধোবাউড়া থানায় ২২জনকে আসামী করে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ছাত্রদল নেতা ফরহাদ আল রাজী। হালুয়াঘাট থানায় ৩৫ জনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন হালুয়াঘাট উপজেলা যুবদলের সভাপতি সাজ্জাত হোসেন হীরা।
ফুলপুরে নাশকতার অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি দলীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বাসার আকন্দ’সহ ১১ জনকে আসামী করে দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গৌরীপুরে প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মীকে আসামী করে বিস্ফোরক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে গ্রেফতার হয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাহাঙ্গীর, কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাইনুল ইসলাম শাহীন, কর্মী শাহিদ মুন্সী ও জুলফিকার মুন্সী।
ঈশ্বগজ্ঞে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপি নেতা আবুল কালাম, কর্মী রফিক ও নজরুল। নান্দাইলে একটি মামলা গ্রেফতার হয়েছেন দুইজন।
কোতোয়ালী মডেল থানায় ২১জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়েছে। এতে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহ শিব্বির আহম্মেদ বুলু, যুবদল সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাসুদ, সাংগঠনিক সুলতান, যুবদল নেতা রুহুল, জাহাঙ্গীর, আলমগীর’সহ গ্রেফতার হয়েছেন কমপক্ষে ১০জন।
গফরগাঁও ও পাগলা থানায় স্ব স্ব উপজেলা বিএনপি’র সভাপতিসহ দুই থানায় দু’টি মামলা ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এবং অজ্ঞাত আরো ৫০ জন নেতা-কর্মীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এতে গ্রেফতার হয়েছেন ৬ জন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-গফরগাঁও থানা জামায়াতে ইসলামের আমির এমদাদুল হক, যুবদল নেতা ইমরান ও শান্ত, পাগলা বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিন, সাঈদ মেম্বার ও জামাত নেতা আফতাব উদ্দিন।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম ও ভালুকায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু’কে আসামি করে ৩৩ নেতা-কর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন দলীয় ৫ নেতা-কর্মী।
ত্রিশাল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে একটি। ফুলবাড়ীয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন যুবদল নেতা সানি ও ছাত্রদল নেতা আল আমীন।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মোর্শেদ আলম দৈনিক কালের আলোকে বলেন, জনরোষ আতঙ্কে সরকার গোটা দেশের মতো ময়মনসিংহেও বিএনপি’র একের পর এক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসব মামলায় গণগ্রেফতার চলছে। মূলত দেশজুড়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতেই সরকার বেপরোয়া এ গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। এভাবে সরকার প্রধান নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে পারবে না।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু’র অভিযোগ, বর্তমান অবৈধ সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয় আতংকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে গণগ্রেফতার করছে। কিন্তু এসব করে গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধমিয়ে রাখতে পারবে না।
এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, বিএনপির নেতৃত্বেই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আগামী দিনে আবারও রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে অবৈধ সরকারের হাত থেকে অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেফতার করে তা প্রতিহত করা যাবে না।
এদিকে, অ্যাডভোকেট দিাদারুল ইসলাম রাজু ও অ্যাডভোকেট আবুল বাসার আকন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী ফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট জিএম আনোয়ার, আবু রেজা ফজলুল হক বাবলু, নূরুল হক, ড.মীর মিজানুর রহমান, এনায়েতুর রহমান, এম.এ হান্নান থান, আনোয়ারুল আজিজ টুটুল প্রমূখ।
কালের আলো/এএজেড/ওএইচ