মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে অধ্যাপক শেখ রোকন উদ্দিন আহমেদ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

প্রকাশিতঃ 4:46 am | October 16, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

নড়াইলের লোহাগড়ার করফা গ্রামজুড়েই যেন উৎসবের আমেজ। সবার মাঝেই আনন্দ উদ্দীপনা। একটি কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন। পূর্ণাঙ্গ সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ‘অধ্যাপক শেখ মো: রোকন উদ্দিন আহমেদ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’। সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র পৈতৃক ভিটার ৫০ শতাংশ জমিতে তাঁর প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার নামাঙ্কিত এই হাসপাতালটি তৃণমূলে মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে রবিবার (১৫ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করেছে।

দৃষ্টিনন্দন এই ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ নিজ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন এক অধ্যায়ের সূত্রপাত করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকাসংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহারে একাত্তরের রণাঙ্গনে জীবনবাজি রাখা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা অধ্যাপক শেখ মো: রোকন উদ্দিন আহমেদ’র স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখতে এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি যাত্রাপথের সোনালী তোরণ স্পর্শ করার মধ্যে দিয়ে এবার গ্রামীণ পরিমণ্ডলে হাতের নাগালে জরুরি প্রসূতি সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, শিশু স্বাস্থ্য সেবা, ডেলিভারী ব্যবস্থাসহ সাধারণ সকল চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বশির আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, ‘অধ্যাপক শেখ মো: রোকন উদ্দিন আহমেদ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০২২ সালের ২৩ জুন কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ৫ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের ৬ জুন এই কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।’

তিনি জানান, হাসপাতাল ভবনটি চারতলা ভিত্তির ওপর তিনতলা বিশিষ্ট এবং ডরমিটরি ভবনটি তিনতলা ভিত্তির ওপর তিনতলা বিশিষ্ট। এই কেন্দ্রটি এই এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ’র হৃদয়ে আলাদা স্থান করে নিয়েছে নড়াইল। মহান মুক্তিযুদ্ধের কঠিন সময়টিতে তিনি এখানে ছিলেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলেই কীনা যুদ্ধ দিনের স্মৃতি তাঁর মনে চির জাগরূক হয়ে আছে। সম্ভবত এজন্যই তিনি বলেন, ‘এলাকা ভুলতে পারবো না, ইনশাআল্লাহ বারবার আসবো।’

জেনারেল শফিউদ্দিনের বাবা অধ্যাপক রোকন উদ্দিন আহমেদ একজন বিদ্যানুরাগী মানুষও ছিলেন। নড়াইলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে অবদান রেখেছেন। তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় মল্লিকপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এখন মহীরুহ। সেখানে তাঁর নামে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এস এম রোকন উদ্দিন আহমেদ ভবনও রয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় অনেক আগেই সেখানকার মানুষ তাকে ভালোবেসে তার নামে ‘অধ্যাপক রোকন উদ্দিন’ সড়কের নামকরণ করেছেন।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের করফা গ্রামে বাবার নামে নির্মিত মরহুম ‘অধ্যাপক শেখ মো. রোকন উদ্দিন আহমেদ ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ বেলুন উড়িয়ে ও ফলক উন্মোচন করে উদ্বোধনের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার করফা গ্রাম আমার পূর্বপুরুষের ভিটা-মাটি। আমি নাড়ির টানে এখানে বারবার ফিরে আসি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।’

এরপর তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করেন। পরে সেনাপ্রধান করফা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ও শিশু কিশোরদের মাঝে শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করেন। স্থানীয় সুধীজনদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে মল্লিকপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ হয়েছে। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’ সবশেষে তিনি এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email