আকাশ যেন অগ্নিতপ্ত কড়াই

প্রকাশিতঃ 5:55 pm | May 11, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

তীব্র গরমে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। কোথাও দু-এক পশলা বৃষ্টি নেই। গরমের তীব্রতা থেকে মিলছে না রেহাই। আকাশ যেন অগ্নিতপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। বাতাসে যেন আগুনের হল্কা বইছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, বাতাসে প্রকৃত যে তাপমাত্রা রয়েছে, মানুষ তার চেয়ে ৩-৪ ডিগ্রি বেশি অনুভব করছে। রোববার (১১ মে) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে রাজধানী ঢাকায় গরমের তীব্রতা আরও বেড়েছে।

জানা যায়, কাঠফাটা রোদ ও গরমে সারা দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। রাজধানীতেও খরতাপে সাধারণ মানুষের জীবন এখন ওষ্ঠাগত। একটু হিমেল হাওয়া আর স্বস্তির বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো সবাই তাকিয়ে আছে আকাশপানে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের আটটি জেলায় তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। অন্যান্য এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

অসহনীয় তাপদাহে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। রিকশাচালক থেকে শুরু করে পরিযায়ী শ্রমিক— সবার অবস্থাই শোচনীয়।

কসবা থেকে ঢাকায় আসা পরিযায়ী শ্রমিক মকবুল জানান, তিনি বালু টানার কাজ করেন। গতকাল কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত রোদের কারণে একবার জ্ঞান হারান। তিনি বলেন, এত গরম পড়তেছে, কোনো কাজ করতে পারতেছি না। শরীরই আর সহ্য করতে চায় না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাফি বলেন, গরম একদিকে, ঢাকার যানজট আরেক বিপদ। মানুষ বেঁচে আছে, সেটাই অনেক। আজ সরকারি ছুটি, তারপরও তেজগাঁওয়ে ত্রিশ মিনিট যানজটে ছিলাম। যানজট নিয়ে সরকার যা করার তা করছে না।

রাজধানীর পল্টন মোড়ে কথা হয় বংশাল থেকে আসা রিকশাচালক জুলফিকার ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে গরম বেড়েই চলছে। এ প্রখর রোদে গাড়ি (রিকশা) নিয়ে বাইরে থাকাটাই কষ্ট। আজ রাস্তায় মানুষ কম থাকলেও গরমের কমতি নেই। তীব্র তাপে ঘেমে জামা ভিজে আবার শুকাচ্ছে। এরপরও পেটের দায়ে বের হতে হয়।

তীব্র গরমের মধ্যে আরেক ভোগান্তি যানজট। এই সংকটের কারণে রাজধানীর মানুষ নাকাল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থেকে অপেক্ষা করতে করতে মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তারা হাঁটতে শুরু করেন। মাথার ওপর জ্বলন্ত সূর্য, পায়ের নিচে উনুনের তাপ- মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। তারপরও এ শহরের ভোগান্তি কাঁধে রাস্তায় নামতে হচ্ছে অফিস ও ঘরমুখো মানুষকে।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয় বাতাস আটকে যাওয়ার (ট্র্যাপড এয়ার) কারণে। কোনো অঞ্চলে বাতাস আটকে গেলে সূর্য তাপে সে বাতাস আরো গরম হতে থাকে। আবার কোনো কোনো অঞ্চলের উচ্চ চাপের বাতাস সে অঞ্চলেই আটকে গিয়ে গরম হয়ে যায়। দেখা যায় গরম থেকে বাঁচার জন্য শহরাঞ্চলে এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করে আরাম অনুভব করে। ঘরের ভেতরে এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম তাপমাত্রাকে নিচে নামিয়ে রাখলেও কুলিং মেশিন বাইরের তাপমাত্রাকে আবার বাড়িয়ে দেয়।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মানবদেহ নিজেও গরম বেশি অনুভব হওয়ার জন্য দায়ী। দেহের ভেতরের তাপ ত্বকের দিকে আসে, আবার বাতাসের তাপও ত্বকে লাগে। ঘাম হয়, কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় তা শুকায় না। ফলে শরীর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গরম আরও বেশি অনুভূত হয়।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অফিস তাপমাত্রা মাপে স্টিভেনসন স্ক্রিনের মাধ্যমে, যাতে রোদের সরাসরি প্রভাব পড়ে না। এতে কেবল বাতাসের তাপমাত্রা ধরা পড়ে, কিন্তু বাইরে বাস্তবে রোদের তাপ অনেক বেশি অনুভূত হয়।

কালের আলো/আরআই/এমকে