এমডি’র অনিয়মে নাজুক অবস্থা পিডিবিএফ’র, সোলার কর্মীদের মানবেতর জীবন

প্রকাশিতঃ 10:47 am | February 05, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

চরম নাজুক অবস্থা চলছে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ)। আর এজন্য দায়ী করা হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মদন মোহন সাহাকে। মূলত তাঁর লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবতে বসেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বছরে বছরে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।

আবার ওই কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেও মিলছে না রেহাই। গত এক বছরে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় শতাধিক সোলার কর্মী। অনেক কর্মী প্রতিনিয়ত চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। তবে এসব অনিয়ম দেখার জন্য যেন কেউই নেই।

জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৫কোটি টাকা। এসব অনিয়মের প্রতিবাদও করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অভিযোগ উঠেছে, দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বললেই শোকজ ও চাকরি হারানোর হুমকি দিচ্ছেন মদন মোহন সাহা। একই সঙ্গে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ বাণিজ্য।

আরো জানা গেছে, প্রায় এক যুগ প্রকল্পে চাকরি করলেও চাকরি স্থায়ী না হওয়া এবং মদন মোহন সাহার অত্যাচারে বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির ৩শ’ সোলার কর্মী। এসব কর্মীরা মাত্র ৩৩শ’ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতন স্কেলে চাকরি করছেন। যা কর্মীদের পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

গত এক বছরেই সোলার কর্মী ৩৯৮ থেকে কমে ২৮৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এক বছরে বিভিন্ন ভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে প্রায় ১শ’ জন কর্মীকে। গড়ে প্রতিটি উপজেলায় ৪ থেকে ৫ মাসের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।

কর্মীদের মাঠ পর্যায়ের কাজের ক্ষেত্রে কোনরূপ সহযোগীতা না থাকায় এবং প্রশাসনের নেতিবাচক মনোভাব, বেতন বৈষম্য, চাকুরীর অনিশ্চয়তায় কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং মাঠপর্যায়ে আদায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার দায় দেয়া হচ্ছে প্রকল্পের কর্মীদের ওপর। এসব অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় তাকে সহায়তা করছেন প্রতিষ্ঠানটির সৌর শক্তি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শহিদ হোসেন সেলিম।

পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনে একটি স্ব-স্বাশীত নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ১৯৯৯ সালে সংবিধানের ২৩ নং আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দারিদ্র্য বিমোচনের মহান ব্রত নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই আজ দারিদ্র্যে পীড়িত।
সূত্র মতে, মদন মোহন সাহা এবং সৌর শক্তি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শহিদ হোসেন সেলিমের লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় অসহায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ দু’জনের যোগসাজশে টিআর ও কাবিখা কর্মসূচীর আওতায় সোলার স্থাপন করে ৫শতাংশে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেন।

একটি দৈনিকে এ প্রতিষ্ঠানটির এমন অনিয়ম তুলে ধরে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, টিআর কাবিখায় ৫টি উপজেলায় কাজ হয় ৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। এই টাকার মধ্য থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা কমিশনের নামে আত্নসাত করেন মদনমোহন সাহা, সহিদ হোসেন সেলিম, ডুমুরিয়া উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা উজ্জল কুমার ভট্টাচার্য্য এবং ডুমুরিয়া উপজেলার হিসাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজসে ঘোড়াঘাট উপজেলার টিআর কাবিখার চেক গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা না করে ঘোড়াঘাট উপজেলা সোলার কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলামের ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে সরকারী টাকা জমা করেন।

হরিপুর উপজেলার টিআর কাবিখার চেক সোলার কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে এই দু’জনের নির্দেশে জমা করা হয়। পরবর্তীতে দুটি এ্যাকাউন্ট থেকে ২০শতাংশ টাকা আত্মসাত করে বাকী টাকা সৌর শক্তি প্রকল্পের এ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।
অপরদিকে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৯ তম বৈঠকে কমিটির সভাপতি ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর পিডিবিএফ’র অডিট রিপোর্টের আপত্তি মন্তব্যের সঙ্গে স্থায়ী কমিটি একমত পোষণ করে। এক্ষেত্রে মন্তব্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া এবং ১ মাসের মধ্যে মহা-হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে জানানোর কথা থাকলেও যা দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়াভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মদনমোহন সাহা ও সৌরশক্তি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শহিদ হোসেন সেলিমের নিয়োগ অবৈধ বলে ৩০ এপ্রিল ২০০০ সাল থেকে ৩০ জুন ২০০৪ পর্যন্ত সময়ের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাই এই অবৈধ নিয়োগের কাগজপত্র তদন্ত করে দেখার জন্য গত বছরের ৩ মে একটি আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সচিবকে প্রেরণ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত এমডি মদন মোহন সাহা গাড়ী ব্যবহারেও ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। একাই ৩টি গাড়ী ব্যবহার করছেন। নিজে একটি স্ত্রী ও সন্তান ২টি গাড়ী ব্যবহার করছেন। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে মদন মোহন সাহা একাই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক অর্থ পরিচালক মানব সম্পদ এবং অতিরিক্ত পরিচালক মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মদন মোহন সাহা বলেন, অনিয়মের সুযোগ নেই, কারণ নিয়মিত অডিট হচ্ছে। একই সঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ দেয়ার সুযোগ নেই। তাহলে ৩৮ জনকে কিভাবে নিয়োগ দেয়া হল জানতে চাইলেও তিনি একই কথা জানান।

এছাড়া খেলাপী ঋণের বিষয়ে বলেন, মাঠে এক হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপী ঋণ আছে। এটা প্রতিবছরই হয়। অবৈধ সুবিধা হাসিল করতে না পেরে একটি মহল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অভিযোগ করছে বলেও দাবি করেন তিনি।

 

কালের আলো/এএ