নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ঢাকার উত্তাপ ঠেকাতে রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় আগামী দুই বছরে দুই লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে ডিএনসিসি ও আর্শট-রকফেলার যৌথভাবে কাজ করবে।

বুধবার (৩ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডিএনসিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আশট রকফেলার ফাউন্ডেশনের সমঝোতা চুক্তি অনুষ্ঠানে মেয়র এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের শহরাঞ্চল আশপাশের গ্রামাঞ্চলের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত। তাপপ্রবাহ একটি নীরব ঘাতক। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাবে বেশি ক্ষতির মুখে আছে আমাদের নারী ও শিশুরা।’ সম্প্রতি ঢাকায় এক দিন গত ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছিল। এটি নিয়ে এখনই সজাগ না হলে বার্ষিক তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরকে ঠান্ডা রাখার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন প্রতিদিন হাজারো লোক ঢাকায় আসছেন। এর ৭০ শতাংশই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রচণ্ড উত্তাপ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই৷ আমি ঘোষণা দিতে চাই, আগামী দুই বছরের মধ্যে আমি ঢাকা শহরে দুই লাখ গাছ লাগাব। এ ক্ষেত্রে আমি কমিউনিটি, পাড়া-মহল্লা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক—সবার সাহায্য চাই।’

ডিএনসিসি এবং আরশট-রকের যৌথ উদ্যোগ তামমাত্রা কমানোর মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও শীতল ঢাকা গড়তে সক্ষম হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মেয়র।

‘সিএইচও’ হিসেবে বুশরা আফরিন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঢাকা উত্তরকে নিরাপদ করার জন্য নেতৃত্বে দেবেন। তাপমাত্রা কমাতে তিনি শহরব্যাপী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। ঢাকা উত্তরের জনগণের মধ্যে তাপ সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা প্রচেষ্টা ত্বরান্বিতকরণসহ নতুন নতুন কাজ করবেন, বলে জানা গেছে।

বুশরা আফরিন বলেন, ‘ঢাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে আমি জানি তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের বিকল্প নেই। আমরা প্রচণ্ড তাপ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন শহরের নেতাদের এবং বিশেষজ্ঞদের একটি বৈশ্বিক সংগঠনে যোগ দিতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত।’

আরশট রকের পরিচালক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথি বাগম্যান ম্যাকলিওড বলেন, ‘তীব্র তাপ প্রবাহ সারা বিশ্বের শহরগুলিতে একটি প্রেসার কুকারের মতো কাজ করছে এবং ঢাকার উত্তরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে ঝুঁকি আরও বেশি। তাই ঢাকা উত্তরে একজন চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে এই শহরে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আরশট-রক ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং আরশট-রক ফাউন্ডেশন ডিএনসিসির মানুষের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সহযোগিতা দেবে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে তাপপ্রবাহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩.৫ বিলিয়নের বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শহরে বসবাসকারী মানুষ। ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ঢাকা শহর তাপ প্রবাহের ফলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পাশের গ্রাম বা অঞ্চলের তুলনায় ঢাকা উত্তরের তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এই চরম তাপ পরিস্থিতি নগরবাসীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং শহরের বার্ষিক উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশেরও বেশি শ্রম উৎপাদনশীলতা কমছে। ২০৫০ সাল নাগাদ গরমকালের আকার দ্বিগুণ হওয়ার অনুমান করা হচ্ছে। নারী ও শিশুদের উপর যার বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা।

কালের আলো/বিএএ/এমএ