কালকের পর আমাকে গুম করা হতে পারে: জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশিতঃ 8:44 pm | April 27, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘হয়তো কালকের পর আমার পায়ে শিকল পরাতে পারে, এরেস্ট করতে পারে, গুমও করতে পারে। ষড়যন্ত্র করে না সরালে আমি নির্বাচন থেকে সরবো না। যদি আমার মৃত্যু হয়, তবে আপনারা আমার মায়ের পাশে থাকবেন।’
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে নিজের এবং তার মায়ের মনোনয়নপত্র জমা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচন আইনে যেভাবে নির্বাচন করতে হয়। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে যেভাবে নির্বাচন করতে হয়, সেই পদ্ধতিতে আমি একজন নাগরিক হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। ২০১৮ সালে লক্ষ লক্ষ ভোটে মেয়র হয়েছিলাম। এরপর আমার সঙ্গে কি কি করা হয়েছে আপনারা জানেন। আমি যদি এই শহরের উন্নয়ন করে থাকি তাহলে নাগরিকদের পায়ে হাত দিয়ে সহযোগিতা চাই। এই শহরকে রক্ষা করতে হবে। না হলে এই শহর ধ্বংস করার জন্য কিছু লোক পায়তারা করছে।’
নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন ২০১৮ সালে লাখ লাখ ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে কী কী হয়েছে, তা সবার জানা আছে। নগরবাসী আমাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছিল। অথচ দায়িত্ব শেষ করতে পারিনি। কতগুলো ঘটনার মধ্য দিয়ে আজ এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি, তা সবাই জানেন। যদি মানুষের উপকার করে থাকি, তাহলে সবার সহযোগিতা চাই। ষড়যন্ত্র করে না সরালে আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লড়তে চাই।’
একসঙ্গে নিজের এবং মায়ের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার প্রতি যে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়েছে, সে জন্য মা পাশে দাঁড়িয়েছেন। সন্তান হিসেবে মাকে রক্ষার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। মা সবসময় এই নগরীর মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মেয়র হওয়ার পর মা দেখেছেন, তার সন্তানের ওপর কীভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। সেজন্য নির্বাচনে লড়ার কথা বলেছেন মা। মা এও বলেছেন, এই নগরীকে রক্ষা করতে হবে। তবে আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আমার কারণে দল যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা দেখবো। আজ মায়ের নির্দেশে তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। আমার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীরা।’
পাঁচ বছরের নির্বাচিত মেয়রকে তিন বছরের মধ্যে একটা চিঠি দিয়ে কীভাবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘হয়তো কালকের পর আমার পায়ে শিকল পরাতে পারে, এরেস্ট করতে পারে, গুমও করতে পারে। আমি সবাইকে বলে যাই, যদি আমার মৃত্যু হয়, আপনারা আমার মায়ের পাশে থাকবেন। যাতে তার কোনও ক্ষতি না হয়।’
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘অনেকে মিথ্যাচার করতে পারে, আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে, অনেক কিছুই করতে পারে তারা। অন্যায়কারীরা যেভাবে নাটক সাজায়, সেভাবে টিকে থাকা কঠিন। হয়তো আপনাদের সামনে আর নাও আসতে পারি, এ জন্য বলে যাই, এই নগরীকে রক্ষায় আমি এবং আমার সমর্থকদের পাশে থাকুন। ভোট বড় কথা নয়, শহরটা রক্ষা করা হচ্ছে বড় কথা। একটা মিথ্যার জয় হয়ে গেছে, সত্যের এখানে পতন ঘটেছে। এই মিথ্যাকে যারা সত্য বানিয়েছে, আমি তাদের বিচার চাই।’
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমি একা। আমার ওপর থেকে সব ধরনের ছায়া সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর ছায়া, মায়ের ছায়া এবং নগরবাসীর ছায়া আমার ওপর আছে। সুষ্ঠু ভোটের আশায় এখানে দাঁড়িয়েছি। যদি কোনও অন্যায় করে থাকি তাহলে ভোটের মাধ্যমে বিচার করবে মানুষ। আর যদি ভালো কিছু করে থাকি তাহলে ভোটে জয়লাভ করবো। এই জয়টার অপেক্ষায় আছি।’
কালের আলো/এমএ/এমএইচ