৬০ দেশে রপ্তানি হচ্ছে সুনামগঞ্জের হাওরের মাছ

প্রকাশিতঃ 10:49 am | March 17, 2023

কালের আলো প্রতিবেদক:

হাওর বিস্তৃত জেলা সুনামগঞ্জ। হাওরের মৎস্য সম্পদের জন্য বেশ বিখ্যাত এই অঞ্চল। আদিকাল থেকে সুনামগঞ্জের মাছের সুনাম দেশজুড়ে। বিশাল জলরাশির এই অঞ্চলে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বড়দৈই বিল। এখানে জেলেরা মৎস্য আহরণ ও মজুতে ব্যস্ত সময় পার করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের এই ব্যস্ততা। দুই ভাগ হয়ে বড়দৈই বিলে কাজ করেন জেলেরা। একদল জাল বিছিয়ে মাছ ধরেন, আরেকদল সেই মাছ নৌকায় নিয়ে যান মজুত করতে।

স্থানীয় জেলেরা জানান, এই জেলা থেকে বেশিরভাগ মাছ ইউরোপে যায়। বিভিন্ন উপায়ে এই মাছ পাঠানো হয়।

রুই, বোয়াল, কাতল, গ্রাসকার্প, চিতল, কালবাউশ, শোল, গজার, পাবদা, টেংরা, কই, শিং ও মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ ধরা পড়ে জালে। শুধু বড়দৈই বিলে তিন বছরে প্রায় ৫০০ টন মাছ উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার বিল রয়েছে। ইজারায় এসব জলাশয়ের মাছ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতে কাজ করে স্থানীয় প্রশাসন। এই অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯০ হাজার টন দেশীয় মাছ উৎপাদন হয় । এসব মাছের বাজার মূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। সুনামগঞ্জের মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে ইংল্যান্ড, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।

ইজারাদাররা বলেন, মাছের মৃত্যুহার কমাতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হলে মাছের উৎপাদন হার বাড়ানো সম্ভব হবে। তাহলে ভবিষ্যতে হাওরে আর মাছ ছাড়ার প্রয়োজন হবে না।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে দুইভাবে মাছের উৎপাদন হয়। মুক্ত জলাশয়ে এবং ইজারাদারদের তত্ত্বাবধানে। সুনামগঞ্জে নদী-খাল ছাড়াও এক হাজারের মতো জলাশয় বা বিল রয়েছে। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমে স্থানীয়রা মুক্ত জলাশয় ইজারা নেন সরকারের কাছ থেকে। এই জলাশয়গুলোকে স্থানীয়ভাবে বিল বলা হয়। ইজারাদার প্রতি দুই বা তিন বছর পর পর বিলে মাছ ধরেন। এই দু-তিন বছর হাওর-বিলে পোনা ছাড়া, গাছের ডাল দিয়ে অভয়াশ্রম বানানোসহ প্রাকৃতিকভাবে মাছের রক্ষণাবেক্ষণ করেন ইজারাদাররা। এই দু-তিন বছর পরপর মাছ ধরার কারণে মাছের সাইজ অনেক বড় এবং এর গুণগত মানও ভালো হয়।

সুনামগঞ্জের হাওরের এই মাছ প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। তবে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিশ্বের ৫০-৬০টি দেশে হাওর ও নদীর এই মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

জেলেরা জানান, সুনামগঞ্জে অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো জেলায় পাওয়া যায় না।

জেলে আলতাব মিয়া বলেন, জেলার প্রায় এক হাজার হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা ও খাল বিলের বিস্তীর্ণ জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।

বড়দৈই বিলের ইজারাদার মনোয়ার পীর জানান, আমাদের এই বিলের মাছ দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত দে জানান, সুনামগঞ্জের হাওরগুলো দেশীয় ছোট মাছের বৈচিত্র্যে ভরপুর। পানি দূষণমুক্ত এবং প্রাকৃতিক জলজ উদ্ভিদ খাওয়ায় এসব মাছ খেতে সুস্বাদু। সুনামগঞ্জের হাওর ও নদীর মাছ ৫০-৬০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

কালের আলো/এমএইচ/এসবি