উৎসবের আবহে যুব গেমসের আলো ঝলমলে উদ্বোধন, স্মার্ট খেলোয়াড় তৈরির রূপরেখা প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 11:51 pm | February 26, 2023

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে আতশবাজি আর রঙ-বেরঙের আলোকচ্ছটা মিলেমিশে যেন একাকার। উৎসবের আবহ চারপাশে। অপরূপ সাজ আলোকমালায়। তারুণ্যের উৎসব, যুব ক্রীড়াবিদদের মিলন মেলায় উপস্থিত ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠের উত্তর পূর্ব প্রান্ত থেকে মার্চপাস্টের মাধ্যমে চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক নিয়ে আগামীর ক্রীড়া তারকরা বিশ্ব ক্রীড়া মঞ্চে বাংলাদেশকে আলোকিত করার প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চললেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাদের।

আরও পড়ুন: যুব গেমস হবে জৌলুসময় ও আনন্দময় : যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

আগামীতে বিশ্ব ক্রীড়ায় সাফল্য বয়ে আনার আকাক্সক্ষায় তারুণ্যের স্বপ্নসারথিদের জয়যাত্রায় আলো ঝলমলে আয়োজনের মাধ্যমে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে শেখ কামাল বাংলাদেশ যুব গেমস’র দ্বিতীয় আসরের উদ্বোধন করলেন যুব গেমসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী স্মার্ট খেলোয়াড় তৈরিতে তাঁর সরকারের কাজ করে যাওয়ার কথা জানান। প্রত্যাশা করেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেকোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। যুবা তারুণ্যের সর্ববৃহৎ এই উৎসব দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বাঁকবদল ঘটাবে নীরবে-নিভৃতে।

এই যুব গেমসের আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ক্রমাগত উন্নয়নের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনে রচিত সাফল্যের অধ্যায় নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রাঞ্জল আলোচনায় উন্নয়নের বর্তমান ও অপার সম্ভাবনার ভবিষ্যৎকে তুলে আনেন নিজের জবানীতে। তৃণমূলের প্রতিভাবানদের লালন করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে আনার এমন আয়োজন দেশের যুব সমাজকে সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের রূপরেখা এঁকে দেবে বলে মনে করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

আরও পড়ুন: যুব গেমস আয়োজনে সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীকেই কৃতিত্ব সেনাপ্রধানের

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি)। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৬ টা ৫৯ মিনিট। বিউগলের ধ্বনি জানিয়ে দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনী বার্তা। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানালেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। ৭ টা ১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী আসন গ্রহণ করেন। আর্মি ব্যান্ডের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এমপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এরপর ৭ টা ৫ মিনিটে মাঠের উত্তর পূর্ব প্রান্ত থেকে মার্চপাস্ট করে একে একে এগিয়ে আসে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ২৪ টি ডিসিপ্লিনের স্ব স্ব ফেডারেশনের অধীনে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়ররা। যারা আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত মুখরতি করবে রাজধানীর ২৪ টি ভেন্যু। হঠাৎ সবার চোখ শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস’র মাসকট ‘বাবুই’র দিকে। তারুণ্য, গতি ও উচ্ছ্বলতার সুনিপুণ কারিগর হয়েই এগিয়ে আসে মাসকট বাবুই। মাসকট বাবুই পাখির মতো মনোবল ও গতিশীল তারুণ্য নিয়ে প্রতিটি খেলোয়াড় দীপ্তি ছড়াবে দেশ থেকে দেশান্তরে। মাসকট বাবুই গ্যালারির দর্শকদের অভিবাদন জানাচ্ছে। বাবুই মাথা ও পাখা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, বলে যাচ্ছিলেন অনুষ্ঠান সঞ্চালক।

আরও পড়ুন: শেখ কামালের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছে এবারের যুব গেমস : বিওএ মহাসচিব

পরে অংশগ্রহণকারী সকল অ্যাথলেটদের শপথ বাক্য পাঠ করান দেশের রেকর্ডধারী অলিম্পিয়ান অ্যাথলেট ও ১৪ বারের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। যুব গেমসের বিচারকদের শপথ বাক্য পাঠ করেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ফিফা এলিট রেফারী তৈয়ব হাসান শামসুজ্জামান। প্রধানমন্ত্রীর রাত ৮ টা ২ মিনিটে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ও বিওএ সভাপতি জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সেনাপ্রধান পিতৃভূমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এই যুব গেমসের মশাল প্রজ্বলন করেন। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিতে আর্মি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে যুব গেমসের মশাল প্রজ্বলন করা হয়। চলমান বৈশ্বিক সঙ্কটে কৃচ্ছতা সাধনের বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ) সীমিত সাধ্য, প্রগাঢ় দেশপ্রেম ও প্রশ্নাতীত আন্তরিকতায় জমকালো উদ্বোধন হয় শেখ কামাল বাংলাদেশ যুব গেমসের দ্বিতীয় আসরের। মুক্ত আকাশে প্রজ্বলিত মনোমুগ্ধকর আতশবাজি ও জাঁকজমক নান্দনিক পরিবেশনা মুগ্ধ করে প্রধানমন্ত্রীকে।

স্মার্ট খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে
সরকার দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়তে চায়। এজন্য স্মার্ট খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা যত বেশি হবে শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনন তত উন্নত হবে। এজন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে খেলাধুলার দিকে জোর দিয়েছে।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পরিবারটা খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার দাদাও খেলতেন ফুটবল, আমার ছোট ভাই কামাল, সে তো বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিল। কামাল একাধারে ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ বিভিন্ন খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আবাহনী ক্রীড়াচক্র সে নিজেই গঠন করে এবং সেভাবেই আমাদের যুব সমাজকে খেলাধুলার প্রতি সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সে অনেক উন্নত ছিল। এছাড়া উপস্থিত বিভিন্ন নাটকেও তার পারদর্শিতা ছিল।’

হ্যাটট্রিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শেখ কামাল যুব সমাজের জন্য আধুনিক ফুটবল খেলার প্রবর্তন করে এবং আমাদের শিশু-কিশোর যুব সমাজ সকলেই খেলার প্রতি যেন বেশি উৎসাহী হয় সেজন্য সে বিশেষ নজর দিয়েছিল। সে ফুটবল ক্রিকেট হকিসহ বিভিন্ন খেলার সূচনা করেছিল এবং সে নিজেও সেগুলো খেলত।’

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আজ আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। স্মার্ট বাংলাদেশে আমাদের স্মার্ট খেলোয়াড় তৈরি করবে এবং আমরা সারা বিশ্বের যেকোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করব, সেটাই আমি চাই।’

তিনি বলেন, খেলাধুলা আমাদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যত বেশি ছড়িয়ে দিতে পারব, তত বেশি তাদের মনন ও মেধা বিকশিত হবে, স্বাস্থ্য আরও উন্নত হবে, মন উদার হবে, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টি হবে। যা শুধু খেলাধুলায় নয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধনে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে, আরও বেশি দক্ষতা যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। সে কারণেই সরকার গঠনের পর থেকে আমরা খেলাধুলার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রাও পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন অলিম্পিকে তারা আমাদের জন্য স্বর্ণপদক অর্জন করে নিয়ে আসছেন। আমরা চাই বাংলাদেশ আত্ম সম্মানে যেমন এগিয়ে যাবে তেমনি ক্রীড়া ক্ষেত্রেও উৎকর্ষতা এবং উন্নত খেলোয়াড় সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় আমরা আরও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করতে পারব।’

কালের আলো/এমএএএমকে