পাহাড়ি জীবন পাল্টে দেবে সীমান্ত সড়ক, সেনাপ্রধানের পরিদর্শনে বাড়বে মনোবল

প্রকাশিতঃ 9:02 pm | January 30, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

রাজস্থলী থেকে দুমদুম্যা। পাহাড়ের বুক চিরে এঁকেবেঁকে চলে গেছে সড়ক। দিগন্তজুড়ে বিস্তীর্ণ পাহাড়। কোথাও ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। চোখ মেলে তাকালে শুধুই সবুজ আর সবুজ। বুকভরা নিশ্বাস। মনের গভীরে প্রশান্তি দেবে পাহাড়ের মোহনীয় সৌন্দর্য। কোথাও ড্রোজারে কাটা হচ্ছে মাটি। কঠিন শিলা ভাঙছে হাইড্রোলিক হ্যামার। কোথাও-বা করা হচ্ছে রোলার। কেউ-বা করছে কারপেটিং। দুর্গম পাহাড়ে এভাবেই বিরামহীন গতিতে এগিয়ে চলছে সীমান্ত সড়ক নির্মাণকাজ। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় এ সীমান্ত সড়ক তৈরি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সীমান্ত এলাকার সুরক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তে চ্যালেঞ্জিং জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও সংশ্লিষ্টদের মনোবল বাড়াতে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম দুমদুম্যা ইউনিয়নের সাইচল আর্মি ক্যাম্প এলাকায় প্রকল্পটির কাজ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। মতবিনিময় ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সেনাসদস্যদের।

সেনাপ্রধান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের উন্নয়নে অনেকগুলো কাজ আমরা করছি। যার মধ্যে রয়েছে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ। এই সড়ক নির্মাণের কাজের অগ্রগতি দেখে আমি যথেষ্ট খুশি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়কসহ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে ৩১৭ কিলোমিটার। নির্মাণাধীন এই সীমান্ত সড়ক বিলাইছড়ির দুর্গম ফারুয়া ও জুরাছড়ির দুমদুম্যাকে যুক্ত করেছে। প্রথম পর্যায়ের অনুমোদিত ৩১৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৯৫ কিলোমিটার। চলমান রয়েছে ১৩২ কিলোমিটার কাজ। চলতি বছরের এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীন ১৬, ২০ এবং অ্যাডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সীমান্ত সড়ক পরিদর্শনকালে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় এই অঞ্চলে কাজ করা কঠিন। এই কঠিন কাজটি সেনাবাহিনীর সদস্যরা কতটা কষ্ট করে করছেন সেটি আপনারা দেখেছেন। এই কাজের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের মনোবল বাড়াতেও আমার এই সফর।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে পার্বত্য জেলাসমূহের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার, সীমান্ত এলাকার কৃষিপণ্য দেশের মূল ভূখন্ডে পরিবহনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং পার্বত্য জেলাসমূহে বিভিন্ন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। সীমান্ত এলাকার দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের অবারিত সুযোগ তৈরি করবে।

সীমান্ত সড়ক পাহাড়ের চিত্র পাল্টে দেবে, বদলে দেবে জীবনমান এমন আশায় বুক বেঁধেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় রাজস্থলীর বাসিন্দা উচিং মারমা বলেন, ‘এই সড়কের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র বদলে যাবে। তেমনি পর্যটকের আনাগোনাও বাড়বে। যার মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।

স্থানীয় দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পুচিং মং জানান, ‘এই সড়কের মাধ্যমে কৃষিজ পণ্যের বাজারজাতকরণে সুবিধা হবে এবং কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন।’

পরিদর্শনকালে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মোঃ নজরুল ইসলামসহ সেনাসদর ও স্থানীয় ফরমেশনের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email