পুনর্মিলনী উৎসবে সেনাপ্রধানের স্মৃতির ঝাঁপি, নতুন ক্যাডেটদের মননে গেঁথে দিলেন সাফল্যের মন্ত্র

প্রকাশিতঃ 9:18 pm | January 27, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

কুয়াশার আড়মোড়া ভেঙে সূর্য ঝলমল করছে চারপাশে। দীর্ঘ দিন পর একে অন্যের সঙ্গে দেখা। ক্ষণিক সময়ের জন্য হলেও সবাই যেন ফিরলেন ক্যাডেট জীবনের বর্ণিল দিনগুলোতে। কোনো কোনো আড্ডার স্থান থেকে ভেসে আসছিল, বিশ্বকবির সেই বিখ্যাত গান ‘পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়…।’ পুরোনো কোনো বন্ধুকে দেখলেই বুকে টেনে নিচ্ছেন অনেকেই। মুঠোফোনে সেলফি তুলে স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টায় কেউ কেউ। আড্ডায় যুক্ত ছিলেন স্ত্রী-সন্তানেরাও।

ছুটির দিনের মৌনতা ছাপিয়ে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) এমনই জমজমাট ছিল ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ। প্রাক্তন ক্যাডেটদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী ১৩তম পুনর্মিলনী উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনন্য মিলন মোহনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এবারের পুনর্মিলনী উৎসবে তিনি সশরীরে যোগ দিয়ে দিনমান ভেসেছেন স্মৃতির ভেলায়। ‘নেতৃত্বের কারিগর, সর্বোত্তম ও সর্বোজ্জ্বল’—এই স্লোগানেই তিনি সম্ভবত উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে, জীবনের সেই প্রত্যুষে। ক্যাডেট কলেজের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা অতীত স্মৃতি চিরকাল অমলিন তাঁর জীবনে।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার চরম ব্যস্ততার ভিড়েও তিনি এদিন যেন ফিরলেন আপন ঘরে! পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ, আড্ডা-স্মৃতিচারণা বা যোগাযোগ অপার আনন্দের। পুনর্মিলনী সেই সুযোগ করে দিলো তাকে। এদিন তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁরই জীবনসঙ্গী বেগম নূরজাহান আহমেদও। দুপুরে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে এক্স-ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান এই ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনাকালীন স্মৃতির ঝাঁপি যেমন খুলেছেন তেমনি আলোকের ঝর্ণাধারায় নতুন ক্যাডেটদের ঐশ্বরিক শক্তিকেও জাগিয়ে তুলতে বলেছেন। সুনাগরিক ও দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছেন।

জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এটা একটা মহান সুযোগ তোমাদের জন্য। ক্যাডেট কলেজে সবাই চান্স পায় না, তোমরা পেয়েছো। সরকার তোমাদের পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় করে। জীবনের মূল বিষয় এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় তোমরা এখানে অতিক্রম করছো। এটাকে সুন্দরভাবে যদি তোমরা ক্যাপিটালাইস করতে না পারো, ভবিষ্যতে কীভাবে টিকবে।’

নতুন ক্যাডেটদের মন-মননে সাফল্যের মন্ত্র গেঁথে দিলেন। ক্যাডেটদের গুণগত জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ, সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে সুযোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে উঠতে উপদেশ দিলেন সেনাপ্রধান। উচ্চারণ করলেন—’আমরা এখন শেষ পর্যায়ে, তোমরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তোমাদের ভবিষ্যতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জড়িত। তোমরা ডেভেলপ হবে বাংলাদেশও ডেভেলপ হবে। আমি চাই তোমরা তোমাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য যে সকল উপাদান এই ক্যাডেটে বা এখানে আছে সবগুলোই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করো। একজন ভালো সুনাগরিক ও দেশপ্রেমিক হিসেবে ভবিষ্যতে জাতির সেবা করো।’ এক্স- ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মাহফুজুর রহমান এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।

এর আগে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে রাজধানী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে ক্যাডেট কলেজে পৌঁছান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। পরে তিনি কলেজ চত্বরে গাছের চারা রোপণ করেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এরপর প্রাক্তন এবং বর্তমান ক্যাডেটের নিয়ে গঠিত একটি দল মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে সেনাপ্রধানকে অভিবাদন জানান। ঝিনাইদহ এক্স ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন এই পুনর্মিলনী উৎসবের আয়োজন করে। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে মতবিনিময়, পুনর্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ এবং দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও যশোরের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল এসএম রাজিব ইবনে রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পুনর্মিলনী উৎসবে কলেজের প্রায় ২ হাজার ১’শ প্রাক্তন ক্যাডেট, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। এদিন রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ শেষে ঢাকা ফিরেন সেনাপ্রধান।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email