যশোর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন শেখ হাসিনা
প্রকাশিতঃ 3:49 pm | November 24, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর থেকে, কালের আলো:
ঠিক ৫০ বছর আগে যশোরের শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে বিশাল জনসমুদ্রে ভাষণ দিয়েছিলেন মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জনতায় কানায় কানায় পূর্ণ একই ভেন্যুতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভাষণ দিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে মূলত যশোর থেকেই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আধাঘণ্টারও বেশি সময় বক্তব্য রেখেছেন। ভোট ও দোয়া চাইলেন যশোরবাসীর কাছে। ওয়াদা চেয়েছেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দলীয় প্রার্থীদের জয়যুক্ত করতে।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টায় যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের সমাবেশে জনতার মহাসমুদ্রে ৩৫ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর ও দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য সম্পন্ন করা ও চলমান থাকা বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে সারা দেশের উন্নয়নের চিত্র উল্লেখ করার পাশাপাশি আগামী দিনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা জানান সরকারপ্রধান।
যশোর থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ইঙ্গিতের পাশাপাশি নিজের নাড়ির টানের কথাও জানান হ্যাটট্রিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের আনন্দ অনুভূতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে আমার প্রথম জনসভা এই যশোরে। যে মাটিতে আমার নানা (শেখ জহুরুল হক) শুয়ে আছেন। যে যশোর মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরাট অবদান রেখেছে, যে যশোর খেজুরের গুড়ের, ফুলের যশোর। উন্নয়নের একটা দৃষ্টান্ত। সেই যশোরে জনসভা করতে পেরে আমি আনন্দিত।’
এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যশোরে জনসভা করেছিলেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছর পর হওয়া জনসভা ঘিরে এদিন গোটা যশোরে ছিল সাজ সাজ রব। সকাল থেকে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে জনসমাগম স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা রঙের গেঞ্জি ও ক্যাপ পরে এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সাজিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জনসভায় আসেন। তাদের অনেকের হাতে ছিল জাতীয় ও দলীয় পতাকা। স্থানীয় নেতা এবং এমপিদের অনুসারীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। নেতাকর্মী ছাড়াও স্থানীয় নানা শ্রেণিপেশার মানুষ জনসভায় অংশ নেন। প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি বঙ্গবন্ধুকন্যা দুরবিন দিয়ে লক্ষ্য করেন। জনসভায় লোকারণ্যে অভিভূত শেখ হাসিনা জনস্রোত দেখেন দুরবিন দিয়ে।
যশোরের এবারের জনসভাটি নানা কারণে ছিল গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর কোনও সমাবেশে অংশ নেননি শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যশোরে প্রথম জনসভা করলেন তিনি। এই জনসভায় তিনি আগামী নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। বিগত দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভা শুরু হয়েছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে। এবার সেটি যশোর থেকে শুরু হলো। বিগত কয়েক বছরে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন এবং পদ্মা সেতু নির্মাণ। এই কারণগুলো রাজনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করছে। ফলে শেষতক এই জনসভার মাধ্যমে রাজনীতির হিসাব-নিকাশে অনেকদূর এগিয়ে গেলো ক্ষমতাসীন দলটি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ প্রমুখ।

সরকারপ্রধানের প্রশ্ন ও বিএনপি’র কড়া সমালোচনা
জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপির প্রধান নেতা খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে দিয়েছেন। সে কারণে তিনি আজ সাজাপ্রাপ্ত। এই সাজাপ্রাপ্ত নেতা দেশকে কী দিতে পারেন বলেন?’
তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন করেছি। যশোরে আমাদের সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা কৃষকের সব রকম সুযোগ করে দিয়েছি। ১০ টাকায় আজ কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো। এই যশোর থেকেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সর্বপ্রথম এখানে আইটি পার্ক হয়েছে।’
বিএনপি আমলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যে বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করেছিল, বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে এদেশের মানুষকে পরানো হয়েছিল। মানুষের পেটে খাবার ছিল না। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সব পরিবর্তন করেছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি। যেখানে বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের। সবার হাতে মোবাইল ফোন। এটা আওয়ামী লীগ সরকারই আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে কি দিয়েছে। দিয়েছে অস্ত্র, দিয়েছে খুন, দিয়েছে হত্যা।
বিএনপি লুটপাট-খুন ছাড়া জাতিকে কিছুই দিতে পারেনি মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ যশোরে শামসুর রহমান, মুকুলকে হত্যা করা হয়েছে। খুলনায় মঞ্জুরুল ইমাম, মানিক শাহ, বালু, সাংবাদিকদের একে একে হত্যা করা হয়েছে। শুধু রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি তো আর কিছু দিতে পারেনি দেশের মানুষকে। নিজেরা লুটপাট করেছে। নিজেরা মানুষের অর্থ পাচার করেছে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে নিজেদের উদরপূর্তি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া যখন মারা যায় তখন বলা হয়েছিল- কিচ্ছু রেখে যায়নি জিয়া। ভাঙা স্যুটকেস, ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া। সেই ছেঁড়া গেঞ্জি হয়ে গেল ফেঞ্চ শিফন আর ভাঙা বাকশো হয়ে গেল জাদুর বাকশো, যা দিয়ে কোকো-তারেক হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন আর পাচার করেছেন বলেই তারা শাস্তি পেয়েছেন। আজকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া।
তিনি বলেন, অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে তারেক জিয়া ধরা খেয়েছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তার সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকেসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছিল। বারবার এ ধরনের মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। আর খালেদা জিয়া শুধু জনগণের অর্থ না, এতিমের অর্থ মেরে দিয়েছে। জিয়া অরফানেজের অর্থ মেরে তিনিও আজ সাজাপ্রাপ্ত। আর সাজাপ্রাপ্ত যে দলের নেতা, সে দল জনগণকে কী দেবে বলেন! তারা কিছুই দিতে পারে না, তারা শুধু মানুষের রক্ত শুষে খেতে পারে। এটাই হলো বাস্তবতা।
রিজার্ভ নিয়ে সমালোচকদের জবাব
রিজার্ভ নিয়ে সমালোচকদের জবাব দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেকে এখন রিজার্ভ নিয়ে নানা সমালোচনা করছে। অথচ আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আরও কোনও সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি আমরা। রিজার্ভের কোনও সমস্যা নেই, আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। সামনের দিনে কোনও সমস্যা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা শুনছি। অনেকে প্রশ্ন করেন রিজার্ভ গেলো কোথায়? আমরা তো রিজার্ভ অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, খাদ্যশস্য কিনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। করোনার টিকা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে আমাদের। কারণ, আমরা সবসময় মানুষের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা জানতে চান রিজার্ভ কোথায় গেলো, তাদের বলছি, রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজে লেগেছে। যেহেতু যুদ্ধ লেগেছে, দাম বেড়েছে সবকিছুর। তারপরও আমরা খরচ করছি, আমদানি করছি; যাতে দেশের মানুষের খাদ্যের ঘাটতি না হয়। কারও কোনও ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়। এজন্য দেশের সব মানুষকে বলে দিয়েছি, কোনও জমি যাতে খালি রাখা না হয়। পারলে একটা মরিচ গাছ লাগান, একটি টমেটো গাছ লাগান। এটি আমাদের সবার উপকারে আসবে।’
দক্ষিণাঞ্চলে আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত দিনেও দেশের উন্নয়ন করেছি, আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনেও উন্নয়ন করবো। কাজেই ওয়াদা দেন, আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন।’
যশোরে জনসভা করতে পেরে আমি আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানকার মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর ছিল, তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, এর কারণে এখানে আসা যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে আইটি পার্ক করা হবে।’
যশোর শহরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম সংস্কার করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এজন্য যা যা দরকার আমাদের সরকার কাজ করবে। আমি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা চাই। একইসঙ্গে আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আপনারা আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন।’
যশোরের খেজুর গুড়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোর সব সময়, একদিকে যেমন খেজুর গুড়ের দেশ আবার ফুলে ফুলে শোভিত, ফুল উৎপাদনেও যশোর ১ নম্বরে আছে। আমরা কৃষকের সবরকম সুযোগ করে দিচ্ছি। ১০ টাকায় তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। দুই কোটি কৃষক সেই কার্ড পান। এক কোটি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। তাদের টাকা তাদের হাতে সরাসরি চলে যায়। ৯০ টাকায় সার কিনে মাত্র ১৬ থেকে ২২ টাকায় সেই সার আমরা কৃষককে দিচ্ছি। কৃষি উপকরণের কোনও অসুবিধা যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমরা।’
আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ চান
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন কিনা হাত তুলে ওয়াদা করেন। এ সময় স্লোগানে মুখর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হাত তুলে ওয়াদা করেন।
টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, আপনারা ভোট দিয়েছেন। আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বার বার ক্ষমতায় এসেছি। আর ক্ষমতায় এসেছি বলেই আজকে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যতটুকু আমার সাধ্য আছে আমি আপনাদের পাশে থেকে সেবা করে যাবো। বার বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকের মনে থাকার কথা। যখন আমি সাতক্ষীরা থেকে কলারোয়া হয়ে যশোরে আমার সভায় যাচ্ছিলাম, তখন আমার গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছিল। আমি বেঁচে গেছি। গ্রেনেড হামলায়ও বেঁচে গেছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বার বার আঘাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিচ্ছেন। বোধ হয় আমার ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন বাংলার জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করবার।
যশোরে জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ এ বাংলাদেশ দরিদ্র থাকবে না। এ বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবো। আজকে এ ওয়াদা দিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।
সবার সহযোগিতা ও দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ইনশাল্লাহ এ বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন আমরা পূরণ করে চলেছি। এ বাংলাদেশের একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষের জীবন মান উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে। আমরা সেই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। তা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যেতে হবে। আপনাদের সহযোগিতা চাই, আপনাদের দোয়া চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেন পৃথিবীর বুকে সম্মান নিয়ে চলতে পারে, বাংলাদেশকে আমরা সেভাবে গড়ে তুলেছি। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম, রূপকল্প ২০২১ এর মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত করবো। আজকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছি, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ।
যশোরে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাগম
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাগম ঘটিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থল যশোর শহরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছে যশোর।
যশোর জেলার আট উপজেলাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসেন। সকাল থেকেই জনসভাস্থল অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাদা গেঞ্জি ও লাল-সবুজ টুপি পরে পুরুষ কর্মী-সমর্থকরা এবং লাল পাড়ের সবুজ শাড়ি পরে নারী কর্মী-সমর্থকরা এসব মিছিলে ছিলেন। সকাল থেকে যশোর শহরের বিভিন্ন সড়কে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।
যশোর শহরের রতন করবার বিবি রোড এবং অন্যান্য এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জনতা সমাবেশস্থলের দিকে রওনা হন। জনসভার বাইরে রাস্তাতেও লোকসমাগম ছিল বেশি। মিছিল নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক কলেজের গেট দিয়ে প্রবেশের পর স্টেডিয়ামের অংশে এগোতে থাকেন নেতাকর্মীরা। তারা দলে দলে জনসভার মাঠে প্রবেশ করেন। নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা।
আলাপ হয় যশোরের গদখালি থেকে আসা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকা থেকে ৫ হাজার লোকের একটি দল মিছিল নিয়ে চাচড়া থেকে হেঁটে জনসভায় এসেছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে বারো বাজার থেকে আসেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আলী আহমদ খান। তিনি বলেন, ‘আমি প্যারালাইজড, তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার জনসমাবেশে এসেছি।’
সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারে যশোর মতিউর রহমান বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) একাডেমিতে বক্তব্য দেন। দুপুর ২টার দিকে যশোর জেলা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন তিনি। যশোর জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানান, এই জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটানোর লক্ষ্য ছিল। দিনশেষে সেই টার্গেট অতিক্রম করেছে।
কালের আলো/এসবি/পিএম