চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বাঙালির রাজনৈতিক দর্শন

প্রকাশিতঃ 10:48 am | November 07, 2022

হায়দার মোহাম্মদ জিতু :

বৈশ্বিক বাস্তবতায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও নিজের অংশের প্রবল আত্মবিশ্বাস বাড়াতে গুজব, অপপ্রচার এক ধরনের হাতিয়ার। কর্মক্ষেত্র কিংবা ঘরে-বাইরে এই ধরনের আচরণ সংক্ষিপ্ত আকারে দৃশ্যত হলেও রাজনীতির মঞ্চে এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। মূলত এগিয়ে থাকা অংশকে ঘায়েল করতেই এর বেশি ব্যবহার ঘটে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ এখন সেই হাতিয়ার সম্মুখে লড়াই করছে।

উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে রক্তপাত ও ষড়যন্ত্রের ইতিহাস প্রোথিত। শেখ হাসিনা সেই নীরব আত্মবিশ্বাসের নাম, যিনি এই ঘাতক ধারাকে একক সাহসে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজনীতিকে জনগণ ও উন্নয়নমুখী করেছেন। বিস্তৃত অর্থে, বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনার একক রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মতৎপরতায় দেশের রাজনীতি ষড়যন্ত্র ও রক্তপাতের বৃত্ত অতিক্রমমুখী।

শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু পরবর্তী রাজনীতিতে উন্নয়নমূলক ম্যান্ডেট এবং জনগণই যে মূল, সেই আখ্যানও তিনি পুনঃরচনা করেছেন। তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই রাজনীতিতে বাঙালির রাজনৈতিক দর্শন অদম্য শেখ হাসিনা হওয়াটাই যৌক্তিক।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বব্যবস্থা এখন বেশ কিছুটা ঘোলাটে। এতে হতাশার কিছু নেই, বরং কিছু সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে। পুকুরে ঢিল পড়লে তা যেমন শেষ প্রান্ত পর্যন্ত লহরি খেলে, ঠিক তেমনি ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট সুদূরে হলেও তার আঁচ এখানে লেগেছে। এই বিষয়কে যারা অস্বীকার করেও বিনা মোষে দুধ গিলতে চান তারা আদতে ঘোড়ারোগে সাঁতারকারী অংশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের দিকে নিয়ে গেছেন। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে বৈশ্বিকভাবে যে জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার আঁচ এখানেও লেগেছে। তাছাড়া বৈশ্বিক মুদ্রানীতির বিষয়টিও আছে। কাজেই স্বাভাবিকভাবে তা আমদানি-রফতানির একমুখী বিনিময় উপাদান ডলারে চাপ বাড়িয়েছে।

দেশ আমদানি-রফতানি করে ডলার দিয়ে। অন্যদিকে রাশিয়া বিশ্বের জ্বালানি রফতানিকারক দেশগুলোর মাঝে বৃহৎ শক্তি। কিন্তু তাদের যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তার বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল বা জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না। ফলে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ ও উৎপাদন খাত। এসব জেনেও যখন বিরোধীপক্ষ এলোমেলো বক্তৃতা দেয় তখন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই প্রজন্ম এদের দেউলিয়া মনে করে।

পাশাপাশি সমসাময়িক রাজনীতিবিদের মাঝে শেখ হাসিনা যে অনন্য তা আরও স্পষ্টতর হয়। ভিন্নভাবে বললে, বেহুলা যেমন দংশিত স্বামীর প্রাণের দায়িত্ব একাই বয়ে নিয়ে চলেছেন ঠিক তেমনি উপার্জন, সঞ্চয়ের পূর্বে ধার করে, চুরি করে খরচকারী অংশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা একাই লড়াই জারি রেখেছেন। আগামী বছরের সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দায় দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেজন্য তিনিই প্রথম সঞ্চয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। ভূমিকে ফেলে না রেখে ফলন উপযোগী করার আহ্বান করেছেন।

আপনজন শেখ হাসিনার এই ছুটে চলার আহ্বান, নির্দেশ পোস্টার, স্লোগান ও বক্তৃতার খপ্পর থেকে প্রায়োগিক জীবনে আনতে হবে। সর্বস্ব বিসর্জন কিংবা ধার করে ‘ঘি’ খাওয়ার তাণ্ডবকারীদের রুখে দিতে হবে। কারণ, বেলাশেষে বাঙালি এই সিন্ধু পাড়ের মেয়ের দিকেই তাকিয়ে রয়, স্বপ্ন বোনে।

ক্রিস্টোফার মারলোর ডক্টর ফস্টাস নাটকের ফস্টাস চরিত্র জাগতিক আকাঙ্ক্ষায় শয়তানের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করে দেয়। এ অঞ্চলেও এমন চরিত্র আছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ও তার বিনির্মাণের সময়েও এদের দেখা গেছে। এখনও এরা আছে এবং ঘাপটি মেরে আছে। এদের উদ্দেশ্য এখন গোয়েবলসীয় কায়দায় শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো মিথ্যাচার দিয়ে ঢেকে দেওয়া।

আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি আরও মুখরোচক গল্প নিয়ে হাজির হবে।

বিষয়টিকে একেবারে উড়িয়ে দিলে ভুল হবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রায় ১৪ বছর ক্ষমতায়। কাজেই শৈশব, কৈশোরের বয়সের হিসেবে এর মাঝে একটা জেনারেশন ভোটার হয়ে উঠেছে যারা বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, বিদ্যুতের দাবি করায় কৃষককে গুলি করে হত্যা, আওয়ামী লীগে ভোট দেওয়ায় হাতের দশটি আঙুল কেটে নেওয়াসহ বহু নৈরাজ্যমূলক আচরণ সম্পর্কে অবগত নয়।

ময়নাতদন্তের আদলে দেখলে, বিএনপি-জামায়াত এই জেনারেশনটাকেই লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নিয়েছে। যদিও বেদনার বিষয়, ছাত্রসংগঠন থেকে শুরু করে কেউই এই মহাপরিকল্পনাকে অনুধাবন কিংবা আমলে নেয়নি। অপপ্রচারের প্রতিবাদ হিসেবে বেশি করে বাঙালি সংস্কৃতিকে সামনে আনা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন, অর্জনকে প্রকাশ কিংবা প্রচারে আনেননি।

বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকারে লড়াই করা শেখ হাসিনার পথ কখনোই মসৃণ ছিল না। তিনি কণ্টকাকীর্ণ পথের নাবিক। বৈশ্বিক সংকটের কারণে বর্তমান সময় সে পথের খানিক যাত্রী। কাজেই এই সময়টায় আত্মবিশ্বাস, উদ্ভাবনমুখী আচরণ ও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো জরুরি। সঙ্গে অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে নিজেদের উৎপাদন এবং উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার, ব্র্যান্ড ভ্যালু অবশ্যই তৈরি করতে হবে। এই অভ্যাস, আচরণই আগামীর আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির ভিত রচনা করবে। রুখে দিবে অপপ্রচারকারী ও শত্রুর মুখ।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

Print Friendly, PDF & Email