দশ বছরে মন্ত্রী ও পাঁচ বছরে প্রতিমন্ত্রী কোটিপতি

প্রকাশিতঃ 10:00 pm | December 03, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেট-৬ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রীর নির্বাচনী হলফনামা অনুসারে সম্পদ বেড়েছে ছয়গুন। অর্থাৎ এক দশকে শিক্ষামন্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬২ টাকার।

অন্যদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার পর বিগত পাঁচ বছরে কোটিপতি হয়ে গেছেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

নুরুল ইসলাম নাহিদ
সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থীদের একজন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সিলেট-৬ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবারো একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সে সুবাদে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় দিয়েছেন নিজের সম্পদের বিবরণ।

হফলনামার তথ্য অনুসারে শিক্ষামন্ত্রীর সম্পদ হয়েছে ছয়গুণ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৪২২ টাকা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় শিক্ষামন্ত্রীর নিজের ও স্ত্রীর, নির্ভরশীলদের নামে আয়, নগদ অর্থ, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ২ কোটি ৫২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৪ টাকা। এক দশকে শিক্ষামন্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬২ টাকার।

আয়ও বেড়েছে নাহিদের। এক দশক আগে কৃষি, আর্থিক বিনিয়োগ, মাছ চাষ ও লেখালেখি করেও বার্ষিক আয় ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ টাকা।

বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রীর বার্ষিক আয় ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২০৫ টাকা। কৃষি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও পেশা থেকে এই আয় দেখিয়েছেন তিনি।

এছাড়া দশম সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৪ টাকা। ব্যাংকেও দায়-দেনা নেই শিক্ষামন্ত্রীর।

হলফনামা থেকে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বার্ষিক আয় ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২০৫ টাকার মধ্যে কৃষি থেকে আয় ৫০ হাজার, ব্যাংক আমানত (সুদ বাবদ) আয় ৩ লাখ ২০ হাজার ২০৫ টাকা, পেশা থেকে আয় ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭০৫ টাকা, স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজ নামে জমা ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৩ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩০ টাকা।

শেয়ার/সঞ্চয়পত্রে নিজের বিনিয়োগ ২০ লাখ ও স্ত্রীর নামে ৫০ লাখ টাকা। যানবাহনের মূল্য ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩২১ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার নিজের ৭৫ হাজার টাকার হলেও স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ-মূল্য জানা নেই বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।

ইলেকট্রনিক সামগ্রী নিজের নামে ২ লাখ ২৫ হাজার ও স্ত্রীর ১ লাখ টাকা। আসবাবপত্র নিজের ৪৫ হাজার ও স্ত্রীর ১ লাখ ৬০ হাজার।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৩১ শতক কৃষি জমি ও ২ লাখ টাকার ৫৬ শতক ও ৪০ লাখ টাকা মূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট। নিজ নামে ৫ কাঠা জমির ওপর অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ২১ লাখ ৮ হাজার ৪৪০ টাকা। তবে মামলা ও দায়-দেনা নেই।

২০০৮ সালে ৯ম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শিক্ষামন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ৪৭ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ৬২ হাজার ৯৫৮ টাকা, নির্ভরশীলদের নামে ২৫০০ টাকা ছিল। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৯ টাকা, স্ত্রীর নামে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৬ টাকা, নির্ভরশীলদের নামে ২৫ হাজার টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৪১২ এবং নির্ভরশীলদের নামে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৮ টাকা।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় শিক্ষামন্ত্রীর বার্ষিক আয় ছিল ১৭ লাখ ৭২ হাজার। পেশা থেকে ১৭ লাখ ২২ হাজার ৩০০, কৃষিখাতে ৫০ হাজার। নগদ আড়াইলাখ, ব্যাংকে ৫৫ লাখ ১৪ হাজার ২৫৯ টাকা। গাড়ির মূল্য দেখানো হয় ৩২ লাখ ৯১ হাজার ২৯১। স্বর্ণ ২০ ভরি। যার মূল্য ৩ লাখ টাকা। ইলেকট্রিক ও আসবাবপত্র ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৩টাকা। সঞ্চয়পত্রে আমানত ৪৫ লাখ টাকা।

স্থারব সম্পদ ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩১ শতক কৃষি ও যৌথ মালিকানায় থাকা শিক্ষামন্ত্রীর নিজের নামে ২৮ শতক অকৃষি জমির মূল্য ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। দালান নিজ নামে যৌথ মালিকানায় নিজের অংশ ২০ লাখ টাকা ও প্রবাসী স্বজনের কাছে দেনা ১০ লাখ টাকা।

নুরুজ্জামান আহমেদ
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার পর বিগত পাঁচ বছরে কোটিপতি হয়ে গেছেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় অস্থাবর সম্পদে নগদ ও ব্যাংকে জমা শূন্য উল্লেখ করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ব্যাংকে জমা ও নগদ অর্থ মিলে নিজ নামে প্রায় আড়াই কোটি টাকা রয়েছে বলে দেখিয়েছেন। তবে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে নেই কোনো সম্পদ।

এবারের হলফনামায় নিজেকে তিনি বি.কম পাস এবং ব্যবসায়ী, কৃষি ও মৎস্য চাষি উল্লেখ করেছেন। অস্থাবর সম্পদের তালিকায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগদ ও ব্যাংকে জমার পরিমাণ কিছু নেই বলে উল্লেখ করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগদ অর্থের পরিমাণ দেখিয়েছেন এক কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার ২১০ টাকা এবং ব্যাংকে জমা দেখিয়েছেন এক কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৩.০১ টাকা।

দশম সংসদ নির্বাচনকালে তার নিজ নামে কোনো গাড়ি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফ্রি করের একটি গাড়ি রয়েছে তার। তবে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্রে কোনো পরিবর্তন নেই। গহনার ক্ষেত্রে দশম সংসদ নির্বাচনে ছিল ৩২ হাজার টাকার আর এবার লিখেছেন ২৫ তোলা।

আয়ের উৎস একই হলেও দশম সংসদের চেয়ে একাদশের হলফনামায় বহুগুণে বেড়েছে তার আয়। তার আয়ের বড় অংশ মৎস্য চাষ থেকে একাদশের হলফনামায় ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬০ টাকা, কৃষিখাত থেকে ৯২ হাজার ৪০০, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ৯২ হাজার টাকা, তামাকের ব্যবসা ও সঞ্চয়ী সুদে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৫ টাকা, সম্মানী ভাতায় ১১ লাখ ৪ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি হলফনামায় মাত্র ৬ লাখ ২০ হাজার টাকার হিসাব দাখিল করেন।

স্থাবর সম্পদের বর্ণনায় কৃষি জমির পরিমাণ একই হলেও বেড়েছে মৎস চাষের জমি। দশম সংসদ নির্বাচনে মৎস চাষের খামারের মূল্য ৭০ হাজার উল্লেখ করলেও একাদশে উল্লেখ করেছেন ২৫ বিঘা। গ্রামে দালান, আবাসিক ভবন না বাড়লেও রাজধানীতে মাত্র ৩০ লাখ টাকায় রাজউকে একটি প্লট কিনেছেন তিনি।

ফৌজদারী মামলা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ছিল না, এবারও তার নামে কোনো মামলা নেই। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ থাকলেও একাদশে কোনো দেনা নেই বলে উল্লেখ করেছেন নৌকার প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি।

তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন।

কালের আলো/এমএ/এমএইচএ