পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়াটা জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না : শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 1:58 pm | October 29, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়াটা জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমি কী পড়ছি, সেটি বুঝে পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটি আনন্দের সঙ্গে পাঠের বিষয় হলে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে পড়বে ও শিখতে পারবে। আমরা সে কাজটি করার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, শুধু পরীক্ষার ভালো ফল করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভালো মানুষ হিসেবে সহমর্মিতা, নীতি-আদর্শ ও ভালো মানুষ হওয়াটা বেশি জরুরি। আমরা শিক্ষার্থীদের সেভাবে গড়ে তুলতে চাই। পরীক্ষার প্রতি গুরুত্ব কমিয়ে তারা জেটি পড়ছে সেটি যেন বুঝে ও শিখে পড়তে পারে। সেভাবে নতুন কারিকুলাম তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে পড়তে ও বুঝতে পারবে।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে বিশ্ব শিশু কন্যা দিবস ২০২২ উপলক্ষে ‘রুম টু রিডের’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ছেলে ও মেয়েদের সমঅধিকার বা আলাদা করার কিছু নেই। আমরা চাই উভয়ের যার যেখানে যেটি প্রয়োজন সেটি নিশ্চিত করতে। ছেলে বা মেয়েদের বেড়ে উঠতে কোনো বাধা থাকবে না। মুক্ত আকাশের মতো তারা বড় হবে।

তিনি বলেন, জীবনে যত প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় সেখান থেকে নতুন শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়। করোনা মহামারি আমাদের সেটি প্রমাণ করে দিয়েছে। পৃথিবীতে কোনো প্রতিকূলতা মানুষকে বেঁধে রাখতে পারে না, সেখান থেকে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাই নারী-পুরুষ হিসেবে আলাদা করে নয়, উভয়কে সমান সুযোগ নিশ্চিত করাটাই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা।

ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ক্যারিয়ার প্লানের ব্যত্যয় ঘটেনি। রাজনীতি করার জন্য এবং সেটা ভালো করে বুঝেশুনে করার জন্য, দক্ষতা নিয়ে জনসেবা করতে পারি সে জন্যই ভিন্ন ডাক্তারি পড়েছি, আইন পড়েছি, জনস্বাস্থ্য নিয়ে পড়েছি। ভিন্ন ভিন্ন বিষয় পড়লেও লক্ষ্য ছিলো একটাই জনসেবা অর্থাৎ রাজনীতি।

কী হতে চেয়েছিলেন, লক্ষ্য কি বদল হয়েছে— শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতির একটি পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছি। একদম ছোট বেলায় যখন আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করতো, তুমি বড় হলে কী হবে আমি বলতাম রাজনীতিক হবো? তারপর আস্তে আস্তে যখন বড় হয়েছি তখনও ভাবিনি যে, অন্য কিছু হবো। ছোটবেলায় বলার সময় যুক্তি দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতাম, সে জন্য অনেক সময় আত্মীয়-স্বজনরা বলতেন এই মেয়ে বড় হলে ব্যারিস্টার হবে। আমাদের দেশে ভালো উকিল ভাবলেই এই শব্দটা ব্যবহার করে ব্যারিস্টার হবে। তবে আমার নিজের কখনও মনে হয়নি যে, ব্যরিস্টার হবো।’

তিনি বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর যখন কোথায় কী পড়বো ভাবার সময় এলো, সে সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলোম হয়তো সাহিত্যে পড়বো, না হলে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পড়বো, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবো আর সেই সঙ্গে রাজনীতি করবো। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শুনলে আবার বলবেন যে, দেখেন ঠিকই শিক্ষকতা ও রাজনীতি একইসঙ্গে করার কথা বলছেন।‘

দীপু মনি বলেন, ‘তখন তাই (শিক্ষকতা ও রাজনীতি) ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার মা খুব জোরেশোরে বলেছেন পেশাজীবী হতে হবে। বাবা বললেন— তুমি রাজনীতি করতে চাও, জীবনটা তোমার, সিদ্ধান্তটাও তোমার। তবে আমার রাজনীতির জীবন থেকে বলতে পারি যে, তুমি যদি চিকিৎসক হও তাহলে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া অনেক সহজ হবে। সে কথাটা যখন উনি বললেন, তখন আমি যেহেতু রাজনীতি করবো, তাই ভাবলাম আমি ডাক্তার হবো। তখন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম, (চান্স) হয়েও গেলো। যেদিন থেকে মেডিক্যাল কলেজে ঢুকেছি সেদিন থেকে রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়েছি। এর আগে যেখানে পড়েছি মিশনারিতে সেখানে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না।’

এরপর মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেরিয়ে আবার আইন পড়েছেন শিক্ষমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আইন পড়ার সুযোগ হয়েছে, জনস্বাস্থ্য নিয়ে পড়ার সুযোগ হয়েছে। সে হিসেবে যদি বলি ক্যারিয়ার প্ল্যান; সেটির ব্যত্যয় ঘটেনি। রাজনীতিটা করার জন্য এবং একটাকে ভালো করে বুঝেশুনে করার জন্য, জনসেবা যেনও একটু দক্ষতা নিয়ে করতে পারি সে জন্যই ভিন্ন ভিন্ন বিষয় পড়েছি। ডাক্তারি পড়েছি, আইন পড়েছি, জনস্বাস্থ্য নিয়ে পড়েছি। ভিন্ন ভিন্ন বিষয় পড়লেও লক্ষ্য ছিল একটাই জনসেবা, অর্থাৎ রাজনীতি। ’

আপনার জীবনের আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তি, রোল মডেল কে— একজন ছাত্রীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু; যিনি মানুষকে ভালো বেসেছিলেন, দেশকে ভালোবেসেছিলেন। রাজনীতি করতে এসে এই সময় দেখছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রোল মডেল।’

কালে আলো/এসবি/এমএম