বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে : সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 5:17 pm | May 29, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে জানিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দুর্গম অরণ্য ও দু:সহ পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিজস্ব দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যাচ্ছে।

রবিবার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সেনাপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় তার প্রণীত সংবিধানের আমাদের শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টার চেতনা বিনির্মাণ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং নিরাপত্তা রক্ষায় হাজার ১৯৮৮ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে।

তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের বিষয় যে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালনায় অগ্রদূত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। আজ আমরা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি স্বীকৃত নাম এবং শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সম্মানিত স্থানে অধিষ্ঠিত। এ অর্জন আমাদের কঠোর পরিশ্রম, পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা এবং সর্বোপরি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার প্রতিফলন।

এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ জানান, বিশেষ এ অর্জনের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সর্বমোট ১৬১ জন সদস্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং ২৪৭ জন আহত হয়েছেন।

তিনি জানান, শান্তিরক্ষায় এখন বাংলাদেশের ৬৮২৫ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন আছে। এর ভিতরে সেনাবাহিনীর ৫৪৬৩ জন, নৌবাহিনী ৩৪৭ জন, বিমান বাহিনীর ৫১৪ জন, এবং পুলিশ বাহিনীর ৫০১ জন।

সেনাপ্রধান বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের ২৩০২ মহিলা শান্তিরক্ষী সফলভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে এবং এই মুহূর্তেই ৫১৯ জন মহিলা সদস্য শান্তিরক্ষা কাজে নিয়োজিত আছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিশ্ব শান্তি ও মানবতার জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার গতিশীল দিক নির্দেশনায় এবং ঐকান্তিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। তার নেতৃত্ব-কৃতিত্বের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে আমাদের দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, বৈশ্বিক শান্তি প্রতি তার অকুণ্ঠ সমর্থন মূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত করেছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় শান্তিরক্ষা মিশনে আমরা আধুনিক ও যুগোপযোগী সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগামি ভূমিকা পালন করে আসছে।

তিনি বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরঞ্জামাদির মানোন্নয়নের পাশাপাশি প্রশিক্ষণকে আরও আধুনিকায়ন ও অর্থবহ করা হয়েছে। ফলে আমাদের শান্তিরক্ষীরা এখন যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত।

সেনাবাহিনীর প্রধান বলেন, সমসাময়িক সময়ে বিশ্বব্যাপী সংঘাতের ধরন উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংঘাতময় দেশের সশস্ত্র মিলিশিয়া দল, ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন, সংঘটিত অপরাধ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে অনেক জটিল ও বহুমাত্রিক করে তুলেছে।

তিনি বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। ম্যালেরিয়া, ইবোলা, ইয়েলো ফিভার, করোনার মতো প্রাণঘাতী রোগের ভেতরেও তারা তাদের দায়িত্বে অবহেলা করেনি। এছাড়াও দুর্গম অরণ্য এবং দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে শান্তিরক্ষীরা নিজস্ব দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছে।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ এবং কার্যকরী উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমাদের সাংবিধানিক শক্তি ও সরকার ইতিবাচক পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিরক্ষীদের সাফল্য ও অনুপ্রেরণার মূল উৎস।

কালের আলো/এসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email