লন্ডনে বসে ক্ষমতায় আসা যাবে না: কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 8:31 pm | May 15, 2022

নোয়াখালী প্রতিবেদক, কালের আলো:

লন্ডনে বসে দল চালিয়ে ক্ষমতায় আসা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেছেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে ভোগবিলাস করছেন, আর রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে বিএনপি চালাচ্ছেন। রিমোট কন্ট্রোলে দল চালিয়ে, হুমকি দিয়ে আওয়াজ তুলে তাঁরা ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।

রোববার (১৫ মে) নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বারে ও বিএডিসি খামারে সয়াবিন, ভুট্টা ও সূর্যমুখীর মাঠ পরিদর্শন এবং কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো পর্দার অন্তরালে ষড়যন্ত্র করে নীলকুঠি, লালকুঠিতে বসে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। আমাদের ভিত্তি জনগণ। আমরা জনগণকে নিয়ে এগোচ্ছি। জনগণ যদি আমাদের প্রত্যাখ্যান করে, আমরা চলে যাব। এটা নিয়ে আমাদের কোনো দুঃখ নেই।

ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় ও বোরোতে ধানের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় চালের দাম বাড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর বোরোতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। হাওরে ও সারা দেশে বৈরি আবহাওয়ায় যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সামান্য। বোরোতে আশানুরূপ ফলন পাবো। ফলে, চালের দামে প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘একদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, অন্যদিকে ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় মিলাররা বেশি বেশি করে ধান কিনছে। সে জন্য, ভরা মৌসুমেও চালের দাম কমছে না।’

মতবিনিময় সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই ও আরও মজবুত করতে হলে চরাঞ্চল, উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা, পাহাড়ি প্রতিকূল এলাকার জমিকে চাষের আওতায় আনতে হবে। কোনো জমি অনাবাদি রাখা যাবে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘তেল জাতীয় ফসল আবাদে উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি। এ বিষয়ে কৃষিবান্ধব শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বীজ, সার, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সকল প্রকার সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

চাষিদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘নোয়াখালীর অনাবাদী পতিত জমি গুলোকে আবাদের আওতায় আনতে আউশ ধানের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে আমাদের বিজ্ঞানীরা। আপনারা স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন অধিক ফলনশীল এ জাতগুলো রবি ফসল কর্তনের পরপরই আবাদ করবেন।’

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চাষাবাদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও সহযোগিতা দিতে বিএডিসি বীজ, সার ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। জাতগুলো কৃষকের কাছে সম্প্রসারণের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘লবণাক্ততা উপকূলীয় এলাকার একটি অন্যতম সমস্যা। লবণাক্ত জমিতে চাষোপযোগী জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। লবণাক্ত এলাকায় লাউ, সীম, তরমুজ, সুর্যমুখী, মিষ্টি আলু ও সয়াবিন ফসলের ফলন ভাল হয়। এ ফসলগুলোর ক্রপিং প্যাটার্নে অন্তর্ভুক্ত করে চর এলাকার প্রত্যেকটি জমি আবাদের আওতায় আনতে হবে।’

আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোকে অংশ নেওয়ার আহ্বান
এদিকে দুপুরে জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বারে ও বিএডিসি খামারে সয়াবিন, ভুট্টা ও সূর্যমুখীর মাঠ পরিদর্শন এবং কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, আমরা বলছি, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমরা আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ করবো। গত ৮ মে আওয়ামী লীগের নির্বাহী সংসদের সভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতেও বলা হয়েছে। জনগণের কাছে যেতে বলা হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে যিনি বিএনপি চালাবেন, আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি লন্ডনে বসে ভোগবিলাসে মত্ত। রিমোট কন্ট্রোলে দল চালাচ্ছেন। ওখান থেকে হুমকি দিয়ে ক্ষমতায় আসা যাবে না। লন্ডন থেকে রিমোট কন্ট্রোলে হুমকি দিয়ে ক্ষমতায় আসা যাবে না।

তিনি বলেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় আসার জন্য হুমকি দিতে পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমরা দেখেছি বিএনপি ২০০৯ সাল থেকে শুরু করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার জন্য হরতাল, অবরোধ দিয়েছিল। নির্বাচনের দিনেও তারা অগ্নিসংযোগ করেছে। মানুষকে বাসের মধ্যে রেখে আগুন লাগিয়ে দগ্ধ করে মেরেছে।

মতবিনিময় সভায় চাষিদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, নোয়াখালীর অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে আউশ ধানের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। আপনারা স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন অধিক ফলনশীল এ জাতগুলো রবি ফসল কর্তনের পরপরই আবাদ করতে পারবেন। চাষাবাদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও সহযোগিতা দিতে বিএডিসি কাজ করছে। জাতগুলো কৃষকের কাছে সম্প্রসারণের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রতিটি ইউনিয়নে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই ও আরও মজবুত করতে হলে চরাঞ্চল, উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা, পাহাড়ি প্রতিকূল এলাকার জমিকে চাষের আওতায় আনতে হবে। কোনও জমি অনাবাদি রাখা যাবে না। পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। পতিত জমিতে যারা চাষ করবে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া, বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষিদের সয়াবিন বীজ ফসলের মাঠ পরিদর্শনকালে মন্ত্রী চরাঞ্চলে অবস্থিত অনাবাদি পতিত জমিতে তেল জাতীয় ফসল সয়াবিন, সূর্যমুখী ও সরিষার আবাদ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, তেল জাতীয় ফসল আবাদে উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি। এ বিষয়ে কৃষিবান্ধব শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বীজ, সার, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, লবণাক্ততা উপকূলীয় এলাকার একটি অন্যতম সমস্যা। লবণাক্ত জমিতে চাষ উপযোগী জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। লবণাক্ত এলাকায় লাউ, শিম, তরমুজ, সূর্যমুখী, মিষ্টি আলু ও সয়াবিন ফসলের ফলন ভালো হয়। এ ফসলগুলোর ক্রপিং প্যাটার্নে অন্তর্ভুক্ত করে চর এলাকার জমিকে আবাদের আওতায় আনতে হবে।

এ সময় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বিএডিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আমজাত হোসেন, নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণ, জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম পিপিএম, বিএডিসির সুবর্ণচর প্রকল্পের পরিচালক আজিম উদ্দিনসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email