মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যে বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা
প্রকাশিতঃ 5:37 pm | November 14, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে কে বড় নেতা-কে ছোট নেতা এই বিষয়টি গুরুত্ব পাবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি যাকেই মনোনয়ন দেব, তাকেই আপনাদের মেনে নিতে হবে। আপনারা কথা দিলেন?’
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকালে তিনি এ সব কথা বলেন। পরে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, একজনকে নৌকার প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় ও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা কেউ করলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪ হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রিতে বিস্ময় প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এতে দলীয় ফান্ড সমৃদ্ধ হয়েছে। তবে সারাদেশে দল যে নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে তা এর মাধ্যমে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, যেসব আসনে মনোনয়নপত্র বেশি কেনা হয়েছে সেখানে নেতৃত্ব শূন্যতা রয়েছে, সেখানে যত বড় নেতাই হোক না কেন, তারা পার্টিকে অর্গানাইজ করতে পারে নাই। এটা তাদের নেতৃত্ব শূন্যতার প্রমাণ। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ক্ষমতায় আসলে অনেক পদ ক্রিয়েট করা হবে, সেখানে সবাইকে একমোডেট করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জরিপ চালিয়েছি। এর ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে। কোনো প্রার্থীর প্রতি ভোটারের সমর্থন আছে, সেটা বিবেচনায় নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জরিপে যারা এগিয়ে থাকবে তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে। সেখানে ছোট নেতা, বড় নেতা দেখা হবে না। যাকে মনোনয়ন দেব তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নইলে বিপদ হবে। ক্ষমতায় আসছি মনে করে নিজেদের মধ্যে যে আসন খাওয়া-খাওয়ির মনোভাব তা পরিহার করতে হবে।’
তিনি বলেন, যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রার্থীতা বিরোধিতা ও প্রার্থীর বিপক্ষে বিরোধিতা করা হলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। একটা সিটও হারাবো কারো এমন মনোভাব পোষণ করা যাবে না।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবার সম্পর্কে জানি। আপনাদের সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কারা কি করেছেন, কারা কোন দল থেকে এসেছেন আমি সব জানি। বেশি লাফালাফি করার দরকার নেই। কোনো গ্রুপিং করারও দরকার নেই।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলের যারা ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়ে আছেন তাদেরকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে না। গত দুই নির্বাচনে ক্ষমতায় এনেছি, এবারো আমিই ক্ষমতায় আনবো- এটা মনে করে কোনো লাভ নেই। প্রার্থীর নিজ নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা, রাজনৈতিক ত্যাগ-তীতিক্ষা থাকতে হবে। জনসম্পৃক্ত হতে হবে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে, কর্মী আছে, ভোট আছে কিন্তু ইদানীং দৃশ্যমান কর্মী নেই। ১৯৮১ সালে নেতৃত্বে এসে দলকে সংগঠিত করেছি। তিলে তিলে এই দলকে গড়ে তুলেছি। আমি, রেহানা, জয়, পুতুলসহ আমার পরিবারের সদস্যরা অনেক অসহায় সময় পার করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগকে দমাতে পারেনি। এখনও নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী নির্বাচন খুব কঠিন নির্বাচন হবে। খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এই সময় সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
আওয়ামী লীগের কোনো কোনো আসনে একাধিক প্রার্থী থাকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব আসনে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। আপনারা যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করুন।
কালের আলো/এনএল