নবযাত্রায় নবপ্রত্যয়ে ডিএমপি, রাজারবাগে মিলনমেলা

প্রকাশিতঃ 11:00 pm | February 26, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

৪৮ বছরে পদার্পণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। স্বভাবতই উৎসবমুখর এক পরিবেশ। অপার সম্ভাবনায় স্বপ্নের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দিন। প্রীতি উজ্জ্বল নির্মল জীবনে শুভ্র সুন্দরের বারতায় প্রাণবন্ত এক মিলনমেলা। মৈত্রী ও সম্প্রীতির যেন এক উদার মিলনক্ষেত্র! নগরীর বাসিন্দাদের সুখ-সমৃদ্ধি ও সামনের দিনেও শান্তিময় পরিবেশ উপহারে একাট্টা হওয়ার শপথ নেওয়ার দিনটি কার্যত হয়ে উঠলো অনন্য মহিমাময়।

আরও পড়ুনঃ পরিবর্তন-আধুনিকায়নের ‘প্রতীক’ আইজিপি, অনবদ্য উচ্চারণ মন্ত্রী-সচিব-ডিএমপি কমিশনারের

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.আখতার হোসেন, আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, চলচ্চিত্রের তারকাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বত:স্ফূর্ত মনস্বী অংশগ্রহণ নতুন স্বপ্নে, নতুন সাহস ও অঙ্গীকারে নিজেদের ঢেলে সাজানোর কাজে প্রবলভাবেই আন্দোলিত করেছে ডিএমপিকে।

নবযাত্রায় নবপ্রত্যয়ে রাজধানীবাসীর আকুন্ঠ সমর্থন আর পুলিশ-জনতার হৃদয় দিয়ে হৃদয় কেনার বার্তাও ধ্বনিত হয়েছে অবিনাশী চেতনার মর্মমূলে। অবারিত আনন্দের আতিশয্যে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ৪৭ টি বসন্ত পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বৃহৎ এই ইউনিটটি। এদিন বিকেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ডিএমপি’র ৪৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এক নাগরিক সম্মিলনের আয়োজন করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার)।

ডিএমপি নেতৃত্ব এই দিনটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.আখতার হোসেন ও আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ’র বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিনির্ভর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে আলোড়িত হয়েছেন। নব উদ্যমে কাজ করার উৎসাহ-প্রেরণা পেয়েছেন। সব জীর্ণতাকে মুছে তত্ত্ব ও তথ্যের প্রতীকী ছোঁয়ায় আবেগমথিত কন্ঠস্বরে সবার হৃদয়-মস্তিষ্ককে নাড়িয়ে দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলামসহ পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিকেল ৩ টার দিকে ‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগানে গৌরবময় সেবার ৪৭ বছর পূর্তির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। এ সময় ডিএমপি কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মীর রেজাউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) কৃষ্ণপদ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার টেকসই নিরাপত্তা
‘টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার টেকসই নিরাপত্তা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জন্য সাসটেইনেবল পিস (টেকসই শান্তি) দরকার। এজন্য দরকার সাসটেইনেবল সিকিউরিটি। আর সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে পুলিশ।’

জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনসহ সবকিছুতে পুলিশ যে সফলতা পেয়েছে তা মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশের বিষয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসার উদাহরণ টেনে আনেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে জনতার পুলিশ হওয়ার ডাক দিয়েছে আমার মনে হয় আমরা সেই জায়গায় এসেছি। পুলিশ আজ জনবান্ধব।’ ডিএমপির জনবল আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভার অন্যতম পরিচ্ছন্ন এই মন্ত্রী বলেন, ‘ডিএমপির বর্তমান জনবল ৩৪ হাজার। প্রয়োজনে আরও বাড়তে পারে। তারা আজকে কাজ করছে বলে আমরা নিরাপত্তার মধ্যে বাস করছি।

আজকে দুই কোটি মানুষের বসবাস এই সিটিতে (ঢাকা)। সেখানে আমাদের পুলিশ মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে।’ আগামী দিনে পুলিশ আরও সুন্দরভাবে কাজ করবে বলে আশাপ্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ঢাকার মানুষ স্বস্তিতে বসবাস করছে
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দৌলতেই ঢাকার মানুষ স্বস্তিতে বসবাস করছে বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.আখতার হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে ঢাকা শহরে অপরাধের যে চিত্র আমরা পত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখতে পেতাম এখন সেই অবস্থা নেই। আগে প্রতিদিন পত্রিকার পাতার হেডলাইন দেখতে হতো, মার্ডার, ছিনতাই, রাহাজানি, মলপার্টিসহ নানা রকমের অপরাধ চিত্র। বিভিন্ন বাহিনী ছিল যারা ঢাকাবাসীর জন্য অস্বস্তির কারণ ছিল।’

‘বর্তমানে আমরা পত্রিকার পাতা খুললে কোন অপরাধচিত্র দেখিনা এবং কোন সাংবাদিকদের তীর্যক মন্তব্যও পরিলক্ষিত হয় না। এজন্য বর্তমান ডিএমপি কমিশনারকে ধন্যবাদ জানাই। সকলের প্রচেষ্টায় আমরা ঢাকা শহরে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছি।’

বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়ন ও বিবর্তনের গতিধারায় উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথাও গুরুত্বের সঙ্গেই তুলে ধরেন এই জ্যেষ্ঠ সচিব। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এই উন্নয়নের রোল মডেলের পেছনেও কিন্তু পুলিশ বাহিনীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। একটি দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে স্বাভাবিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। আর আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এই কাজটিই করে যাচ্ছে।’

‘ঢাকা শহরে এখন একটি জটিল পরিস্থিতি। যেখানে একটি শহরে ২০% রাস্তা থাকার দরকার সেখানে ঢাকা শহরে ৭ থেকে ৮% রাস্তা আছে। আমাদের সড়কগুলো এমন যে, সকল জায়গায় গাড়ি সহজে যাতায়াত করতে পারে না। সেই পরিস্থিতিতে পুলিশের জন্য দায়িত্ব পালন একটি কঠিন ব্যপার। তার ভেতরেও আমরা দেখি তারা যথেষ্ট সফলতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ কারণেই আমরা অনেক স্বস্তির সাথে ঢাকা শহরে বসবাস করছি’ যোগ করেন সচিব মো.আখতার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাংলাদেশকে নিয়ে একটি একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের শাসন-শোষনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। তিনি একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তিনি দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু দেশটিকে পুর্নগঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু কুচক্রীদের কারণে বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন। তারপর বাংলাদেশ থেমে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তার পিতার আদর্শ অনুসরণ করে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।’

পুলিশের বিশেষায়িত বিভিন্ন ইউনিটের প্রশংসা করে জননিরাপত্তা বিভাগের এই সচিব আরও বলেন, ‘সরকার পুলিশের অনেকগুলো স্পেশালাইজড ইউনিট তৈরি করেছে। এই ইউনিটগুলো বিশেষায়িত এবং প্রশিক্ষিত। তাঁরা দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে; উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে এবং তাদের রিসার্স টিম আছে। তারা যেকোন অপরাধ ও অপরাধীকে গবেষণা করে সেটির ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেন এবং দমনের চেষ্টা করেন। এজন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।’

দু:সাহসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিএমপিকে তৎপর থাকতে হবে
দেশমাতৃকার সেবা ও জনগণের নিরাপত্তা প্রদান করা বাংলাদেশ পুলিশের গুরু দায়িত্ব উল্লেখ করে আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেছেন, ‘দেশের রাজধানী ও বিশ্বের অন্যতম একটি বড় মেগাসিটির নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং এই শহরের শান্তি বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘শান্তি শপথে বলিয়ান’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দায়িত্ব পালন করে আসছে। এই সুদীর্ঘ পথযাত্রায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অনেক চড়াই উৎড়াই অতিক্রম করেছে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন তথা এই ঢাকা কেন্দ্রিক যে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রসরযাত্রার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ছোট্ট দেশের সবকিছুই এই রাজধানীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এখানে আমাদের অর্থনীতির কেন্দ্র, শিল্পায়ন হচ্ছে ঢাকা শহরকে ঘিরে এবং এই শহরকে কেন্দ্র করেই আমাদের উন্নয়নের অভিযাত্রা। আমাদের উন্নয়নের এই অভিযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের এই মহানগরকে শান্তিপূর্ণ রাখার যে দু:সাহসিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেটি মোকাবেলায় ডিএমপিকে সবসময় তৎপর থাকতে হবে। বিগত সময়গুলোতে ডিএমপি এই দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেছে। বিগত বছরেও করোনায় সময় তারা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পেশাদারিত্বে আন্তরিকতায় উদ্বুদ্ধ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং তার সকল সদস্যরা দক্ষতা ও দৃঢ় মনোবলের কারণে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। যে কারনে এই নগরীর শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। এই নগরীতে শিল্পায়ন হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তরান্বিত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমাদের কর্মসংস্থানের কেন্দ্র যেমন ঢাকা, শিক্ষা কেন্দ্র যেমন ঢাকা, সমস্ত পেশার উৎস এবং ঢাকা থেকেই মূলত সকল ঢেউ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

এজন্যই আমরা বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশকে বাংলাদেশ পুলিশের ‘মুখ’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। আমি বিগত বছরে ঢাকা মহানগর পুলিশের সকল সদস্য তাদের যে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এজন্য তাদের অভিনন্দন জানাতে চাই। তাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই শুভ দিনে নতুন প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে তারা আগামী দিনগুলোতে আরও ভালোভাবে নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করবেন সেটিই আমি প্রত্যাশা করি। সেবা, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধের মাধ্যমে এই শহরের সমস্ত নাগরিকের হৃদয়ের মনিকোঠায় তাঁরা তাদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করতে পারবে বলেই আমি প্রত্যাশা করি।’

আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষকে সেবা করার জন্য
‘আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, মানুষকে সেবা করার জন্য’ এমন কথা বলেছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভেতরে যে ঔপনিবেশিক মানসিকতা ছিল, মানুষকে প্রজা হিসাবে দেখার সেখান থেকে বেরিয়ে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড একটি বাহিনী তৈরি করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আপনাদের সবার সহযোগিতা লাগবে। আপনাদের পরামর্শ লাগবে। কোথাও কোন অপরাধ হতে দেখলে আমাদের অবহিত করেন। কোথাও কোন অবিচার হতে দেখলে আমাদের অবহিত করেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’

আপনার সাথে ঘটে যাওয়া যে কোন অন্যায় অবিচারের তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, আমরা এই নগরীর দুই কোটি মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অহর্নিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনারা যখন পরিবার, স্বজন নিয়ে রাতে নিদ্রা যাচ্ছেন আমরা হাজার হাজার সদস্য আপনার সম্পদের পাহাড়া দিচ্ছি।

যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আপনি বন্ধ রেখে গেছেন। সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরের দিন খুলে সমস্ত মালামাল যাতে অক্ষত পান, সেই কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। আপনি ঈদ উদযাপন করছেন, পূজা উদযাপন করছেন। আমাদের কারো কোন ছুটি নাই। আমাদের মা-বাবার সাথেও ঈদ, পূজা উদযাপনে কোন সুযোগ নেই। আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এবং আপনারা যাতে এই উৎসবগুলো পালন করতে পারেন, সেটির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনি আপনার সন্তানকে হাত ধরে স্কুলে পৌছে দিচ্ছেন অথবা তাকে পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর আমরা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে আছি আপনার সন্তানকে যেন সময় মত পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন। অথচ আমার সন্তানও পরীক্ষার্থী। আপনার সন্তানকে আমার সন্তান মনে করে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’

‘আমরা শুধু এককভাবে চেষ্টা করলে হবে না, যদি আপনিও মনে করেন, পুলিশ আমাদের আস্থা অর্জন করতে পারবে এবং মানুষের বন্ধু হতে পারবে। আমি আপনাকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলাম। আর আপনি আমার সর্ম্পকে নূন্যতম কোন ধারণা ছাড়াই আমাকে বললেন ঘুষখোর! তাহলে বন্ধুত্ব কি প্রত্যাশা করতে পারেন?, প্রশ্ন করেন এই অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১)।

ধারণার বশবর্তী হয়ে সব সময় সমালোচনা না করার আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘থানায় আসেন দেখেন আমাদের পরিবর্তন। যদি মনে করেন কাক্সিক্ষত পরিবর্তন হয়নি। আমাদের দরজা খোলা আছে। আমাদের সাথে সে কথা বলেন, পরামর্শ দেন। একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন রাজধানীর উপযোগী একটি পুলিশ বাহিনীর প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোন ত্রুটি নেই। কারণ আমরা জানি আজকে আমার গায়ে যে ইউনিফর্ম আছে কালকে আবার আমি আপনাদের লাইনে এসে বসবো। আমার গায়ে ইউনিফর্ম থাকবে না। আমার সন্তানের গায়ে ইউনিফর্ম থাকবে না। আমার সন্তানের নিরাপত্তাও কিন্তু ডিএমপির বাকি যারা সদস্য থাকছে তাদের উপরে নির্ভর করবে।

ফলে আমরা এমন একটি বাহিনী তৈরি করে রেখে যেতে চাই। যারা আপনার বিপদে, আপনার পাশে দাঁড়াবে আমার বিপদে আমার পাশে দাঁড়াবে। আপনারা যত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন ডিএমপি তত সফল হবে এবং ডিএমপি সফল হলে দেশ এগিয়ে যাবে, মানুষ এগিয়ে যাবে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অহর্নিশ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি এবং আমরা খুব অহংকার করে বলি যে, বাংলাদেশ পুলিশের যত কিছু অর্জন হয়েছে সবকিছু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে হয়েছে। এমন একটি অর্জন দেখাতে পারবেন না যে, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ছাড়া পেয়েছি। প্রতিটি অর্জনের পেছনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত রয়েছে।

আপনারা বিশ্বাস করতে পারবেন না যে, এত ছোট ছোট বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খেয়াল রাখেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি হলো। আমরা আমাদের দায়িত্বের অংশ হিসেবেই সবাই দায়িত্ব পালন করেছি। কি খুশি হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনের পরে যখন আপনি এই পর্যায় থেকে প্রশংসিত হবেন তখন আরেকটি প্রশংসা পাওয়ার লোভে আপনার জীবন দিয়ে দিবেন।

আমরা আরেকবার প্রশংসিত হতে চাই, আরেকটি ভালো কাজ করতে চাই। করোনাকালে আমরা ভালো কাজ করেছি। আমাদের পাশে আপনারা দাঁড়িয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন। আমাদের লোভ বেড়ে গেছে। আমরা বারবার আপনাদের কাছে প্রশংসিত হতে চাই। বারবার আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। দুর্দিনে আপনাদের বন্ধু হতে চাই। যদি বন্ধুত্বের হাতটি আপনি বাড়িয়ে দেন। তাহলে সেই বন্ধুত্বটি অটুট হবে এবং বন্ধুত্বটি দীর্ঘদিন টিকে থাকবে। আপনাদের বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর প্রত্যাশায় ডিএমপির প্রতিটি সদস্য কাজ করে যাচ্ছে।

কালের আলো/এনএল/বিএসবি