‘টার্গেট’ সরকারের মেগা প্রকল্প না দীপু মনি?  

প্রকাশিতঃ 2:26 pm | February 08, 2022

‘টার্গেট’ সরকারের মেগা প্রকল্প না দীপু মনি?  

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

চার বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। মেডিক্যাল কলেজের জন্য স্থায়ী জায়গা নির্ধারণ না হওয়ায় চাঁদপুর সদর হাসপাতালের ভেতরে জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। সাড়ে চার বছর যাবত চলছে জটিলতা। মারপ্যাঁচে থমকে গেছে জমি নির্ধারণ।

আরও পড়ুন: দীপু মনিকে ঘিরে ‘অপপ্রচার’, রাজপথ-ফেসবুকে ঘৃণা-ক্ষোভ-প্রতিবাদ

একই অবস্থা চাঁদপুর আধুনিক নদী বন্দরের। অথচ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাগজে-কলমেই ঘুরপাক খাচ্ছে এই আধুনিক নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। তিন বছরেও অগ্রগতি নেই নূন্যতম। এবার মুখ থুবড়ে পড়েছে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনও।

জমি নিয়ে গোয়েবলসীয় স্টাইলে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ জটিল করে তুলেছে পরিস্থিতি। প্রতিটি ঘটনা প্রবাহ যেন একই সূত্রে গাঁথা। ইলিশের রাজধানীতে সরকারের মেগা প্রকল্প আক্ষরিক অর্থে বাস্তবায়নেই যতো আপত্তি কারও কারও। অথচ নির্ধারিত সময়ে এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে সুফল পেতো গোটা চাঁদপুরের বাসিন্দারা। ভোটের মাঠে পড়তো ইতিবাচক প্রভাব।

আরও পড়ুনঃ হঠাৎ শিক্ষামন্ত্রীর ‘ইমেজ’ নষ্টের ‘অপতৎপরতা’ কেন?

কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক নেতার কৌশলের করতলে পড়ে এসব মেগা প্রকল্পের ভাগ্যাকাশে জমেছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বড় বড় এসব প্রকল্প নিয়েও নতুন করে জল ঘোলা হচ্ছে।

চাঙ্গা হয়ে উঠেছে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসা চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি ও তাঁর পরিবারকে ঘিরে অপরাজনীতি, ষড়যন্ত্র। ফিল্মি কায়দায় কলঙ্ক কালিমা লেপনের তোড়জোড় চালাতে গিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ ও আওয়ামী লীগের মাঠের নেতা-কর্মীদের কাছে ঘৃণাভরেই প্রত্যাখ্যাত হয়ে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দলটির ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাভোগী ও কুচক্রীরা।

আগুন লেগে নিজেদের ঘর যখন ছাইভস্ম হওয়ার উপক্রম ঠিক তখন সুযোগ-সন্ধানী চক্রটি আগুন নেভানোর কোনো চেষ্টা না করে উল্টো সেই আগুনেই ‘আলু পোড়া’ দিচ্ছে নিজেদের খাবারের জন্য। বড় পদ পদবী ভাগিয়ে নেওয়ার খোয়াবে রাজনৈতিক প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া এই চক্রটির বিরুদ্ধে ক্ষোভের অনলে পুড়ছেন ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের কর্মীরা। সাম্প্রতিক সময়ে মাঠ রাজনীতিতে তাদের সুদৃঢ় অবস্থান চেনা সেই নেতাদের দাঁড় করিয়েছে কাঠগড়ায়।

উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্তের কূটকৌশল; দল ও সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ষড়যন্ত্র  
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেন প্রয়াত কিংবদন্তি রাজনীতিক, ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের কন্যা ডা: দীপু মনি। বিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিক ভোটেও হ্যাটট্রিক করেছেন।

ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আছেন শিক্ষামন্ত্রী। দায়িত্ব পালন করছেন পরপর চারবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাকে বলা হয় ‘একের ভেতর তিন’।

তিন টার্মে সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে নিজ জেলার উন্নয়নের রাজনীতিতে নতুন দূয়ার উন্মোচন করেন। চাঁদপুর-হাইমচরকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা, ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মেরিন একাডেমী, নার্সিং ইন্সটিটিউট, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের রি-মডেলিং তথা আধুনিকায়ন, চাঁদপুর জেলা সদর হাসপাতালকে ১৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে উন্নীতকরণ, মৎস্য ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউটসহ বড় বড় উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছেন।

করে দিয়েছেন চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ। বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন আধুনিক নৌ-টার্মিনাল ও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেরও। কিন্তু বড় এই তিনটি প্রকল্পই নানা কায়দা-কৌশলে বাঁধাগ্রস্ত করার অপতৎপরতা চলছে দেদারসে, প্রকাশ্যে। উন্নয়ন ঠেকানোর কূটকৌশলকে যারপরেনাই সন্দেহের চোখেই দেখছে দলটির মাঠের নেতা-কর্মীরা।

অথচ এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সামনের সংসদ নির্বাচনে নৌকার জোয়ারে প্রতিপক্ষ দলের ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হওয়ায় ঘর কাঁটা ইঁদুরের মতিগতি কারও কাছেই সুবিধার ঠেকছে না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে ফিরছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক নেতার বিতর্কিত ভূমিকা।

সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কোন কোন জনপ্রতিনিধি। তাদের ভূঁইফোড়, মিথ্যা, বানোয়াট ও আজগুবি বক্তব্য-বিবৃতি মোটা দাগে দল ও সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থানকেই সামনে নিয়ে এসেছে। ফখরুল-রিজভীর ছন্দে কথাবার্তা ও দূরভিসন্ধী তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সংক্ষুব্ধ করে তুলেছে। মুখোশধারী স্বার্থান্বেষী চক্রটিকে খন্দকার মোশতাকের ‘দোসর’ হিসেবেই চিত্রিত করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে কথিত দুর্নীতির অভিযোগের নেপথ্যে
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেশবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়তই নতুন মাত্রা পাচ্ছে। ক্ষমতার রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগকে ‘মাইনাস’ করতে বিভিন্ন মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধীরা মিথ্যার বেসাতি ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

আর এই সময়টিতে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও রাজনীতিক ডা: দীপু মনিকে মূল লক্ষ্যবস্তু করে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বড় দুর্নীতির আজগুবি অভিযোগ তুলেছে খোদ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় একটি অংশ। বিরোধী পক্ষের হাতে অপপ্রচারের নতুন কার্ড তুলে দিয়ে প্রকারান্তরে তাঁরা সরকারকে ইমেজ সঙ্কটে ফেলার অপকৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে কার পারপার্স সার্ভ করতে চাচ্ছেন এ নিয়েও মোটা দাগে প্রশ্ন উঠেছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি’র ভাই, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা: জে আর ওয়াদুদ টিপু’র নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জায়গায় কোন জমি না থাকলেও ঢালাওভাবে কাল্পনিক অভিযোগের তীর ছুঁড়া হয়েছে। রাজনীতির মাঠে একজন জনবান্ধব নেতার জনপ্রিয়তার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ঘৃণ্য কায়দায় তাকে ঘায়েলের অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। 

ক’দিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে নির্ধারিত জায়গা থেকে তাঁর বা তাঁর পরিবারের বিন্দুমাত্র সুবিধা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

একই সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি তাঁর বড় ভাই ডা: জে আর ওয়াদুদ টিপুর পক্ষ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে বিস্তৃত পরিসরে পুরো বিষয়টি আরও খোলাসা করেছেন। মন্ত্রী চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তাঁর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করার কথাও বলেছেন। 

এতে করে পুরো বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছতা প্রকাশ পেলেও দলীয় বিরুদ্ধবাদী অংশটির লম্ফঝম্ফ থামছে না। ইনিয়ে বিনিয়ে সাদাকে কালো হিসেবে উপস্থাপনে তাদের করিৎকর্মা নীতি চাঁদপুর জেলার গন্ডি ছাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। 

মন্ত্রী ও তাঁর ভাই, কর্মী:অন্তপ্রাণ রাজনীতিক ডা: টিপু’র নৈতিক দৃঢ়তার মুখে ফায়দা হাসিলে ব্যর্থ হয়েই অনিয়ম, দুর্নীতির বানোয়াট অভিযোগ, মিথ্যাচারের মাধ্যমে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’র অপরাজনীতিও দৃশ্যমান হচ্ছে। এমন নেতিবাচক ব্যাক ডোর গেইম’র যবনিকাপাত ঘটাতে চায় মেঘনা পাড়ের বাসিন্দারা। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় পর্দার আড়ালের খলনায়কদেরও। এমন দাবিতে জনমত তুঙ্গে উঠায় ব্যাকফুটে বানোয়াট, মনগড়া অভিযোগের হোতারা। 

কালের আলো/এমকে/জিকেএম

Print Friendly, PDF & Email