‘বদরাগী’ ছিলেন জেলার সোহেল: শাস্তির মুখে পড়েছেন অতীতেও, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র

প্রকাশিতঃ 12:20 pm | October 27, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ও ফেনসিডিলসহ রেলওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার (কারা তত্ত্বাবধায়ক) সোহেল রানা বিশ্বাস এর আগেও বিভিন্ন কারণে বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েছিলেন। তবে এরপরও নিজেকে এতটুকুও বদলাননি ‘বদরাগী’ হিসেবে পরিচিত এই কারা কর্মকর্তা।

আচরণ ও ক্ষমতার প্রভাবে নিজের বিভাগের বড় কর্তারাও তাকে ‘দেখে’ চলতেন। তটস্থ থাকতেন অধীনস্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কারারক্ষীরাও। পারতপক্ষে এড়িয়ে চলতেন একই বিভাগের সমমানের অন্য কারা কর্মকর্তারাও।

তবে বিপুল পরিমাণ টাকা ও মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে খবরের শিরোনাম হয়ে নিজ শহর ময়মনসিংহে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি।

তবে তার স্বজনেরা দাবি করেছেন, বাবা মুক্তিযোদ্ধা ও নিজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণেই সেই চাকরি জীবনের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত বারবার ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছেন সোহেল। এবারো নিজ কারাগারের বড় দুই কর্মকর্তার নতুন ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েছেন তিনি।

সূত্র জানায়, সোহেল রানা বিশ্বাস বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে ডেপুটি জেলার পদে থাকাকালে প্রথম সাসপেন্ড হন। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি চাকরি ফিরে পান এবং ডেপুটি জেলার থেকে পদোন্নতি দিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার (কারা তত্ত্বাবধায়ক) করা হয়।

এরপর ২০১২ সালের দিকে বিভিন্ন অভিযোগে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আশরাফুল ইসলাম খান তাকে চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার পদ থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন এবং পরবর্তীতে সাতক্ষীরা কারাগারে বদলি করা হয়।

এরপর সোহেল রানাকে সাসপেন্ড করা হয়। পরে ঢাকার ডিআইজি প্রিজন্সকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করার জন্য জেলার পদ থেকে একধাপ নিচে নামিয়ে ডেপুটি জেলার করা হয়।

বছর খানেক আগে আবারো পদোন্নতি পেয়ে তিনি জেলার (কারা তত্ত্বাবধায়ক) হন এবং নরসিংদী কারাগার থেকে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুনরায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসেবে যোগ দেন তিনি। তবে এর আগে থেকেই মাদক সেবনের পাশাপাশি এই কারাবারে তাঁর থাকার বিষয়টিও ছিলো ‘ওপেন সিক্রেট।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহেল রানা বিশ্বাসের বাবা মুক্তিযোদ্ধা জিন্নত আলী বিশ্বাস। তাদের গ্রামের বাড়ি জেলার ধোবাউড়া উপজেলায়। তবে সোহেল রানার স্ত্রী-সন্তানরা থাকেন শহরের পন্ডিতপাড়া এলাকার মোমেনশাহী টাওয়ারের অষ্টম তলার একটি ফ্ল্যাটে।

শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) রাতে সেই বাসায় গেলে মোর্শেদা নামে সোহেল রানার স্বজন পরিচয় দিয়ে একজন বেরিয়ে আসেন। তিনি জানান, সোহেল রানার স্ত্রী ও তার ছোট ভাই সন্ধ্যায় ভৈরব রেলওয়ে থানার উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন। এরপর থেকেই তিনি বাসায় রয়েছেন।

মোর্শেদার দাবি, সোহেল রানা বিশ্বাসকে ফাঁসিয়েছে একই কারাগারের বড় দুই কর্মকর্তা। ভাগ বাটোয়ারাসহ বেশ কিছু কারণে তাদের সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে তার বনিবনা হচ্ছিলো না। তারা আগেই হুমকি দিয়েছিলো সোহেল রানাকে দেখে নেবে।

‘হুমকির ধারাবাহিকতায় শুক্রবারের (২৬ অক্টোবর) পুরো ঘটনা ছিল পরিকল্পিত। ওই কর্মকর্তারাই আগে থেকেই মিডিয়াকেও খবর দিয়ে রেখেছিল।’

তবে সোহেলের এতো টাকার উৎস কী, এই সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

সোহেল রানা বিশ্বাসের বাসায় উপস্থিত আরো একজন বলেন, ৫ দিনের ছুটি নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের বাড়িতে আসছিলেন সোহেল। পহেলা নভেম্বর থেকে তার ঢাকার কাশিমপুর কারাগারের জেলার সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পথেই তাকে নিজ বিভাগের কর্মকর্তারাই ফাঁসিয়ে দেন।

যোগাযোগ করা হলে ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ বলেন, গ্রেফতার জেলারের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য ও মানি লন্ডারিং দু’টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে নেওয়া হবে।

কালের আলো/ওএইচ