বঙ্গবন্ধুর বার্তা পৌঁছে দিতে সৈয়দ মিজানের উদ্যোগ, পাশে থাকার অঙ্গীকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র

প্রকাশিতঃ 1:45 am | January 21, 2018

নিউজরুম এডিটর, কালের আলো : 
দাপুটে ও মেধাবী একজন ছাত্রনেতা হিসেবে সফল তিনি। রাজপথে জামায়াত-বিএনপিকে মোকাবেলা কিংবা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগকে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার! বলা হচ্ছে সৈয়দ মিজানুর রহমানের কথা। তৃণমূল রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিতে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিশমা দেখেছেন সবাই। অনেক দিন যাবতই এ ছাত্রনেতা নেমেছেন অন্য এক মিশনে।

নতুন প্রজন্মকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবছেন তিনি। সেই ভাবনার বাস্তব প্রতিফলনও ঘটিয়েছেন। গরিব, অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছে ‘শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র’। সৈয়দ মিজানুর রহমান এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির চেয়ারম্যান।

এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের মহান ব্রত নিয়েই গত ৪ বছর যাবত কাজ করে যাচ্ছে এ সংগঠনটি। শিক্ষার আলোয় নিজেদের আলোকিত করে তুলতে চাহিদামতো বই, খাতা, কলম, জ্যামিতি বক্স, ব্যাগ, স্কুলের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণাদি তুলে দেয়া হচ্ছে শিশুদের। আর এসব পেয়ে হাসি ফুটেছে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মুখে।

বিনা খরচে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে পারার সুবিধার পাশাপাশি শৈশবেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানছে নিজেদের মাতৃভূমির শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শিখছে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ইতিহাসের মহানায়কের বীরত্বগাঁথা ও সংগ্রামী জীবনের নানা তথ্য।

তাদের শেখানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। বিনা পারিশ্রমিকে তাদের শ্রম দিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রাজনীতির পাশাপাশি স্বতন্ত্র একটি প্ল্যাটফর্ম থেকেই এসব কাজ করে যাচ্ছেন নিভৃতচারী স্বভাবের ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি।

সামাজিক উদ্যোগ আর মানবিকবোধ থেকেই ‘শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র’ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সৈয়দ মিজানুর। সেই কথাই বলছিলেন দৈনিক কালের আলোকে- ‘২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের দিনে নতুন বুদ্ধিজীবি তৈরির ভাবনা থেকেই আত্নপ্রকাশ করে এ সংগঠনটি। গরীব ও অসহায় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিবিষ্টমনে শুরু হয় কাজ।

প্রথমেই টার্গেট করা হয় রাজধানীর তেজগাঁও রেল স্টেশন ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। সেখানকার ১২০ জন কোমলমিত শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। এখন সারা দেশে ১৩ টি সেন্টারে ৭৬০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী পাচ্ছে প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা সামগ্রী।

তাদেরকে সংস্কৃতির শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি জ্ঞানেও সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। ২০ টি কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক আইসিটি ল্যাবে তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সৈয়দ মিজানুর রহমান কালের আলোকে বলেন, নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানে না। বাঙালি জাতির মহানায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কেও সঠিক ধারণা নেই তাদের। তাই সুবিধা বঞ্চিত, গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের একীভূত করে তাদের মাঝে সেইসব জ্ঞান পৌঁছে দিতে নতুন মিশনে নেমেছেন তিনি।

ময়মনসিংহের নান্দাইলে জন্ম নেয়া এ মেধাবী রাজনীতিক বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। এ কারণেই আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে করে শৈশব থেকেই একজন শিশুর মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, এদেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ বার বার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। আমি চাই সঠিক ক্যাম্পেইনিংয়ের মাধ্যমের কোমলমতি শিশু ও কিশোরদের বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করতে। আর সেজন্যই আমার এ প্রচেষ্টা।’

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধিত এবং এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধিত হবার অপেক্ষায় থাকা এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ইতোমধ্যে পা দিয়েছে সাফল্য ও অগ্রযাত্রার তৃতীয় বছরে। শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর কাওরান বাজারের টিসিবি ভবন অডিটোরিয়ামে ‘শিশু প্রতিভা বিকাশ’ কেন্দ্রের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতায় স্বেচ্ছাসেবী ও অরাজনৈতিক এ সংগঠনটির কার্যক্রমের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন দেশের সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

প্রধান আলোচক হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দিপু মনিও শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্রের কনসেপ্টকে মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী অভিন্ন কন্ঠে এ সংগঠনটির প্রশংসা করে উচ্চারণ করলেন, ‘সমাজের সকল মানুষ সাধ্যমতো এগিয়ে এলে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা কমে আসবে। গরীব-অসহায় মানুষগুলোও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হবেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমাদের শিশুরা আজ যেভাবে বিকশিত হচ্ছে তাতে তাঁরা নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবে। শিশুদের মানবিক বিকাশের জন্য উচ্চতর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র। আর এর নেপথ্যে রয়েছে এক ঝাঁক মেধাবী তরুণ।

তিনি বলেন, একসময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে দিতে চেয়েছিল। ওরা মুছে দিতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। কিন্তু তাঁরা পারেনি। বাঙালি জাতি কখনই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে মাথা উঁচু করতে দেবে না।

শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্রের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে মন্ত্রী বলেন, আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তাঁরা তাদের এ জীবনের শুরুতে নিজেকে বিকশিত করার শিক্ষা পেলে কখনই ভুল করবে না। নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গেই শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করে যাচ্ছে।’ পরে মন্ত্রী এ প্রতিভা কেন্দ্রের শিশুদের মাঝে ব্যাগসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেন।

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ডা: মোহাম্মাদ শরীফ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার এস এম খুরশীদ –উল আলম, ব্র্যাক কমিনিউনিকেশন সাত রঙের সাধারণ সম্পদক ইকরামুল কবীর ও তেজগাঁও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জামিলা আক্তার।

প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা: দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নের সঙ্গে শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পুরোপুরি মিল রয়েছে। এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে এবং দক্ষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে।

ছাত্রলীগ ভাল কাজ করছে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ‘শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র’ দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করে আ’লীগের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিক ডা: দীপু মনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা সমাজ ও মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসছে সেটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই সকল পজেটিভ সামাজিক কর্মকান্ডগুলো বিস্তার লাভ করছে। এটি ছাত্রলীগের বিরাট অর্জন। তাদের এভাবে আরো ভাল কাজে এগিয়ে আসারও আহবান জানান ডা: দীপু মনি।

পরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের বিষয়াদি অনুপম নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন এ বিকাশ কেন্দ্রের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনায় মুগ্ধ হন অতিথিরাও।

কালের আলো/আরআইকে

Print Friendly, PDF & Email