সরকার চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি বাতিল করতে পারে: তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 4:29 pm | September 20, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

বিএনপির মনে রাখতে হবে সরকার চাইলে যে কোনো সময় খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, বিএনপিকে সরকারকে বহু আগেই ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কারণ বিএনপি নেত্রী খালদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাননি কিংবা আদালত কর্তৃক খালাসও পাননি। খালদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে সাজা স্থগিত করেছেন। সেই কারণে তিনি কারাগারের বাইরে আছেন। এজন্য তো বিএনপির শুকরিয়া আদায় করা উচিত, সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।

‘সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে, কিন্তু সরকার যে কোনো সময় চাইলে সেই আদেশ বাতিল করতে পারে। সেই আদেশ যদি আগামীকাল বাতিল হয়, আগামীকালই খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত যেতে হবে। এটিও বিএনপির মনে রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) ‘বিএসআরএফ বার্তা’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতারা সাড়ে ১২ বছর ধরে এ দাবি করে আসছেন এবং জনগণকে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। কিন্তু জনগণ তো তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। সাড়া দেওয়ার কোনো কারণও নেই। বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কখনও সরকারের অধীনে হয় না, নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে।

তিনি বলেন, যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় তখন সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের চাকরি নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকার একজন পুলিশ কনস্টেবলও বদলি করতে পারে না। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ইতোপূর্বে বহু নির্বাচন অত্যন্ত সফলভাবে করেছে। সেজন্য বিএনপিকে বলবো, এ ধরনের ফাঁকা বুলি আউরিয়ে কোনো লাভ হবে না। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে।

বাংলাদেশ সরকার চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতিসংঘ সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে গত রোববার জানিয়েছেন ঢাকায় বৈশ্বিক সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো। এ বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের এখনো অনেক বাকি। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কারও সহযোগিতা দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ ইতোপূর্বে আমাদের নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে অনেক নির্বাচন করেছে। বাংলাদেশ সোমালিয়া কিংবা ইথিওপিয়া নয় যে, এখানে নির্বাচন করার জন্য জাতিসংঘের সহায়তা লাগবে।

তিনি বলেন, কিন্তু সেখানে কেউ যদি পর্যবেক্ষণ কিংবা পর্যবেক্ষকের বিষয়…সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তা লাগবে বিষয়টি অবশ্যই তা নয়।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেখুন, সরকার যে কারও ব্যাংক হিসাব তলব করতে পারে। এমপিদের ব্যাংক হিসাব তলব হয়, সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংক হিসাব তলব হয়, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদেরও ব্যাংক হিসাব ইতোপূর্বে তলব হয়েছে। ব্যাংক হিসাব চাওয়াটা দোষের নয়।

তিনি বলেন, সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব চেয়েছে, সেটি কেন পত্রিকায় আসলো, সেটি তো পত্রিকায় আসার কথা ছিল না, এটি কেন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলো- এটি হচ্ছে প্রশ্ন। আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, যেটি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে- সংগঠনের নাম দিয়ে কেন ব্যাংক হিসাব চাওয়া হলো। আমি মনে করি কেউ স্বচ্ছ থাকলে, কারও উদ্বিগ্ন হাওয়ার কোনো কারণ নেই।

‘ব্যাংক হিসাব চাওয়ার পর এটি যখন প্রকাশিত হবে। যখন এর স্বচ্ছতা বেরিয়ে আসবে। তখন তো তারা যে অত্যন্ত স্বচ্ছ, সেটিই মানুষের সামনে উপস্থাপিত হবে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, তবে এটি কেন সংগঠনের নাম দিয়ে চাওয়া হলো এবং কেন এটি কাগজে আসলো সেই প্রশ্ন অনেকে রেখেছে।

বিটিআরসি আইপি টিভি বন্ধ করছে। কিন্তু ইউটিউবভিত্তিক নিউজ চ্যানেলের বিষয়ে সরকার কী উদ্যোগ নিচ্ছে- এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার দায়িত্ব হচ্ছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু তারা ডোমেইন বরাদ্দ পায় বিটিআরসির কাছ থেকে। ডোমেইন বরাদ্দ তারা কিভাবে পেলো- সেটি হচ্ছে প্রশ্ন। আমি মনে করি, কাউকে ডোমেইন বরাদ্দ দেওয়ার আগে এখন থেকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, সেই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো, ডোমেইন বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, আমরা তদন্ত করছি, এ বিষয়ে আদালতেরও একটি নির্দেশনা আছে। সুতরাং এই সবের আলোকে আমরা অনলাইন ও আইপিটিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি, এটি অব্যাহত থাকবে।

এ সময় বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তপন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকসহ ফোরামের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এসআরবি/এমএম