পার্শ্ববর্তী দেশে ২০০ নারী পাচার করেছে কাল্লু-নাগিন চক্র : র‌্যাব

প্রকাশিতঃ 3:33 pm | August 16, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত মা ও মেয়েকে ভারতে পাচারকারী চক্রের দুই মূলহোতাসহ মোট তিন জনকে আটক করেছে র‍্যাব। আটকরা হলেন- মো. কাল্লু (৪০), মো. সোহাগ ওরফে নাগিন সোহাগ (৩২) ও মো. বিল্লাল হোসেন (৪১)।

র‌্যাব জানিয়েছে, এ চক্রের হাত ধরে এ পর্যন্ত অন্তত ২০০ নারী পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়েছে।

সোমবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নারী পাচারকারী দলের মূলহোতা কাল্লু জানিয়েছে- তাদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা বাংলাদেশ থেকে অন্তত ২০০ জন নারীকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করেছে। এই সিন্ডিকেটটি একেকজন নারীকে এক থেকে দেড়লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।

‘সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় এই চক্রের সেফ হাউজ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের নিয়ে পাচারের উদ্দেশে সেফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হতো। তারপর সেখান থেকে ভারতে পাচার করা হতো। এই সেফ হাউজের সমন্বয় করত বিল্লাল হোসেন। বিল্লাল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এর আগেও মানবপাচার মামলা ছিল এবং তারা জেলও খেটেছে। কাল্লুও জেলে ছিল।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, সোহাগ ওরফে নাগিন সোহাগ ওরফে ভাগিনা সোহাগ নারী পাচার চক্রের সেকেন্ড ইন কমান্ড। এই চক্রটি মিরপুর, তেজগাঁ ও গাজীপুর এলাকায় বেশি সক্রিয়।

এর আগে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কাল্লু, সোহাগ ও বিল্লালকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারিতে সাতক্ষীরা এলাকায় বিউটি পার্লারে চাকরির লোভ দেখানোর পর এক কিশোরী তার প্রতিবেশী মামা নাগিন সোহাগ ও কাল্লুর সঙ্গে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে চাকরি না দিয়ে সাতক্ষীরায় সীমান্ত এলাকায় নিয়ে কিশোরীকে বিল্লাল নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন কাল্লু ও সোহাগ। সেখান থেকে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য বিল্লাল এ কিশোরীসহ আরও তিনটি মেয়েকে অবৈধভাবে পাচার করে দেন ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে।

এদিকে ভারতে পাচার হওয়া মেয়েকে উদ্ধার করতে নিজের পরিচয় গোপন করে কৌশলে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য নাগিন সোহাগ ও কাল্লুর কাছে চাকরির সন্ধান করেন ওই কিশোরীর মা। ফেব্রুয়ারিতে নাগিন সোহাগ ও কাল্লু একইভাবে ভুক্তভোগী কিশোরীর মাকেও এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। চক্রটি একই পথে অবৈধভাবে তাকেও নিয়ে যায় ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে। তবে মানবপাচারকারী ওই চক্রের সদস্যদের হাত থেকে মা খুব কষ্টে পালিয়ে যান। এরপর মেয়েকে খুঁজে পেতে তিন মাস ধরে কলকাতার অলিগলি, কখনও দিল্লির অলিগলি চষে বেরিয়েছেন। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ (পশ্চিম দিনাজপুর) ও বিহারের সীমান্তবর্তী এলাকা কিশানগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন সাহসী এ মা।

উদ্ধারের পর বাংলাদেশে ফিরে আসার সময় ভারত সীমান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সদস্যরা তাদের ধরে ফেলেন। পরে পুরো ঘটনা খুলে বললে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে যোগযোগ করে বিএসএফ। এরপর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।

কালের আলো/ডিএসকে/এমএম