মামুনুল কাণ্ডে ইমেজ সংকটে হেফাজত

প্রকাশিতঃ 10:50 pm | April 05, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সম্প্রতি এক নারীসহ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বিলাসবহুল রয়েল রিসোর্টের এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়েছিলেন হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হক। এরপর সশস্ত্র তাণ্ডব চালিয়ে তাকে পুলিশের থেকে ছিনিয়ে নেয় হেফাজতের কর্মীরা। ধরা পড়ার সময় এবং পরবর্তীতে ফেসবুকে এসে মামুনুল বারবার দাবি করেছেন, সেটা তার স্ত্রী। কিন্তু দ্রুতই বেরিয়ে পড়েছে থলের বেড়াল। হোটেলে সময় কাটানো নারীকে স্ত্রী প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে মামুনুলের জন্য।

গত তিনদিন ধরেই এই ইস্যু দেশজুড়ে আলোচনার হট টপিক। প্রিন্ট-অনলাইন আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় একের পর এক নিউজ হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হচ্ছে একাধিক অডিও-ভিডিও।

আর এ পরিস্থিতিতে চরম ইমেজ সংকটে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। কারন ধর্মান্ধ দলটির যুগ্ম মহাসচিব হলেও মূলত মামুনুল হকই প্রতিনিধিত্ব করছিলেন দলটিকে।

এমনই আভাস পাওয়া গেছে মামুনুলকাণ্ডে চাপের মুখে থাকা হেফাজতের দুই নেতার কথোপকথনের আরেকটি অডিওতে।

ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে মাওলানা ফজলুল করিম কাশেমী ও ফয়সাল আহমেদ নামে হেফাজতের দুই নেতা মামুনুল হকের কর্মকাণ্ডকে ভুল আখ্যায়িত করে যে কোনও মূল্যে তাদের অবস্থান শক্ত করে ধরে রাখার পরামর্শ করেন। নারীসঙ্গী নিয়ে রিসোর্টে যাওয়া মামুনুল হকের অদূরদর্শিতা আখ্যায়িত করে ওই নেতা মামুনুল হককে কিছু নসিহত করতে বলে আলোচনা করেন। মামুনুল হক ও ওই নারীকে বছিলার একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছে জানিয়ে তারা আগে হেফাজতের ‘মান’ বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেন। মামুনুল হকের কর্মকাণ্ডে দুই হেফাজত নেতা ক্ষোভ প্রকাশও করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজত নেতা মামুনুল হক অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে ধরা খেয়ে নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। রিসোর্ট থেকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর তিনি তার স্ত্রী আমেনা তৈয়বাকে ফোন করেন। স্ত্রীকে তিনি ফোনে জানান, রিসোর্টে থাকা ওই নারী জনৈক শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে কিছু মনে না করার অনুরোধ জানিয়ে হেফাজতের এই নেতা স্ত্রীকে বলেন, ‘কেউ জিজ্ঞাসা করলে তুমি বইলো আমি সব জানি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের অডিও ফাঁস হওয়ার পরপরই ওই নারীসঙ্গী যে মামুনুল হকের বৈধ স্ত্রী নন—সে বিষয় কিছুটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এর মধ্যেই আরও পাঁচটি অডিও ফাঁস হয়। যেগুলোতে গত কয়েক দিনে মামুনুল হক ও তার কথিত সেই নারীসঙ্গীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এমনকি ওই নারী মামুনুল হককে সাগর তীরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির কথাও মনে করিয়ে দেন। জবাবে মামুনুল ঝামেলা শেষ হলে সেই ইচ্ছা পূরণ করবেন বলে ওই নারীকে আশ্বস্ত করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মামুনুল ওই নারীকে যে স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছিলেন সেই দাবি পণ্ড হয়ে যায় মামুনুল হকের বোন ও তার প্রথম স্ত্রীর অডিও ফাঁসের মাধ্যমে। ওই অডিওতে মামুনুল হকের বড় বোন মামুনুল হকের স্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে শিখিয়ে দেন কেউ ফোন করলে কি বলতে হবে। মামুনুল হকের বোনকে বলতে শোনা যায়- ‘তুমি বলবা আমার শাশুড়ি বেঁচে থাকতেই এই বিয়ে হয়েছে। আমার এতে সম্মতি ছিল। আমরা পরিবারের লোকজন সবাই তোমার সঙ্গে আছি। ঝামেলা একটু শেষ হোক।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামুনুল হক ইস্যুতে আরেকটি অডিও ফাঁস হয়েছে তার সঙ্গে থাকা নারী ও তার আগের ঘরের সন্তানের কথোপকথনের। সেখানে ওই নারী রিসোর্টের পরিস্থিতির কথা ছেলের কাছে ব্যাখ্যা করেন। ছেলে তার মায়ের সঙ্গে ঘটনা নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ওই ছেলের আরেকটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে আব্দুর রহমান নামে ওই তরুণ হেফাজত নেতা মামুনুল হককে ‘মুখোশধারী জানোয়ার’ উল্লেখ করে তার বাবা-মায়ের সংসার ভাঙার পেছনে মামুনুল হককে দায়ী করেন।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মামুনুল হক একজন শীর্ষ পর্যায়ের আলেম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। উনার মতো একজন আলেমকে নিয়ে যে স্ক্যান্ডাল ছড়িয়েছে তা পরিষ্কার ব্যাখ্যা করা উচিত ওনারই। কারণ সারাদেশে উনার অসংখ্য অনুসারী রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডের জন্য সারাদেশের আলেম সমাজের ওপর একটা নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আমরা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। আশা করবো অতিদ্রুত উনি পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করে ধোঁয়াশা কাটাবেন।’

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম