মুজিবর্ষে বিরল সম্মান, এশিয়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নেতৃত্বে এবার বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ 8:42 pm | March 19, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

কেবলমাত্র উন্নয়নেই নয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও বিশ্বে একটি রোল মডেল দেশ বাংলাদেশ। আরও আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন দুর্যোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বিশ্ব অভিযোজন কেন্দ্র-ঢাকা অফিস’ স্থাপনের ঘোষণার বাস্তবায়ন করেছিলেন। এসব এখন পুরনো ধারাপাত।

বাঙালির স্বাধিকারের, স্বপ্নের স্বাধীনতার মাসে ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যখন যুগপৎভাবে পালিত হচ্ছে তখনই মিলেছে আরও একটি সুসংবাদ। দুর্যোগ মোকাবেলায় ধারাবাহিক সাফল্যের দৌলতে এবার এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ।

প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ এই পদটিতে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোহসীন। সম্প্রতি আগামী এক বছরের জন্য তাঁর হাতেই নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড তুলে দিয়েছে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় বোর্ড অব ট্রাস্টির সভায়। চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ ২৪ টি দেশের মধ্যে থেকে এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের গুরুদায়িত্বে বাংলাদেশের এই সচিবের দায়িত্বভার গ্রহণকে মুজিববর্ষে দেশের জন্য এক বিরল সম্মান হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সেখানকার জনসাধারণ ও বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্র (এডিপিসি)। স্বায়ত্তশাসিত এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। কিন্তু স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৮ সালে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এডিপিসির সদর দফতর গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কায় রয়েছে এই কেন্দ্রের আঞ্চলিক অফিস।

সূত্র মতে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ ও সম্প্রদায়কে ডিআরআর (দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস) ব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক ডিআরআর ব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সক্ষমতা তৈরিতে বন্যা, ভূমিধস, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, খরাসহ বিভিন্ন দুর্যোগসমূহ মোকাবিলায় প্রতিরোধী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সেবাও দিয়ে আসছে এডিপিসি। একই সঙ্গে ক্রস-সেক্টরাল প্রজেক্ট ক্ষেত্র বিকাশ ও প্রয়োগেও কাজ করছে এই কেন্দ্রটি।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তিন বছর আগে এশিয়ান দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পরের বছর ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রথম বোর্ড অব ট্রাস্টির সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাগতিক দেশ হিসেবে ওই সভায় সভাপতিত্ব করে তাঁরা। ট্রাস্টি বোর্ডের কার্যবিধি (আরওপি) অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইসচেয়ার সাধারণত আগত চেয়ারম্যান হয়ে থাকে। সেই মোতাবেক চলতি বছরের ৩ মার্চ কেন্দ্রটির ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বিতীয় সভা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোহসীন এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২১ এর বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা ও বাজেট চূড়ান্ত করা হয় এবং এডিপিসি এর কৌশলপত্র ২০৩০ উপস্থাপন করা হয়। কৌশলপত্র ২০৩০ বাস্তবায়নে আগামী এক বছর এই সংস্থাটির নেতৃত্ব দিবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোহসীন।

সূত্র মতে, বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) সদস্য দেশসমূহ হচ্ছে চীন, ভারত, কম্বোডিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে (রিজিওনাল কনসালটেটিভ) আঞ্চলিক পরামর্শক কমিটিতে রয়েছে আফগানিস্তান, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্দান, কাজাখস্তান, লাওস, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৬ টি দেশ।

একই সূত্র জানায়, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ও জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনে স্থানীয়করণ, উদ্ভাবন, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ, সহনশীলতা সৃষ্টি, মানবিক উন্নয়নের যোগসূত্র স্থাপন, আঞ্চলিক সহযোগিতা/দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা এবং ঝুঁকি হ্রাস ও সাড়াদানে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেই প্রেক্ষিতে ২০৩০ সালকে সামনে রেখে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত; নগরায়ন ও বিপদাপন্নতা; পরিবেশগত বিপর্যয়; বন্যা ও খরা; দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা; দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও সহনশীলতার লক্ষ্যে পূর্বাভাস ভিত্তিক অর্থায়ন, মহামারি প্রস্তুতি ও জরুরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়কে অতি গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করা হচ্ছে।

এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আনন্দানুভূতির কথা জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোহসীন কালের আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের বদৌলতে বিশ্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এখন ‘রোল মডেল’ বাংলাদেশ। মূলত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের উদ্ভাসিত সাফল্যের কারণেই এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) এবার সভাপতি পদও পেয়েছে বাংলাদেশ। পিতা মুজিবের জন্মবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই পদটি উৎসর্গ করছি।’

নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের অঙ্গীকার জানিয়ে এডিপিসির নতুন এই সভাপতি আরও বলেন, ‘এডিপিসি একাডেমি বিষয়ক সকল স্তরে বিশেষজ্ঞদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ কোর্স বাস্তবায়ন এবং ডিআরআর বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাবো। এডিপিসি তার কাজের মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ২০১৫-২০৩০ এর সেন্দাই অবকাঠামো, টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি), জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত এজেন্ডা এবং জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনসমূহ বাস্তবায়নেও সহযোগিতা করবে।’

কালের আলো/এসআর/জিকে