বাঁধভাঙা আনন্দ নবীন সেনাদের, আত্নবিশ্বাস নিয়ে পথচলার উপদেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 7:50 pm | December 24, 2020

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, চট্টগ্রাম ঘুরে এসে :

বহুদিন বাদে আনন্দের বিরল মুহুর্তের মুখোমুখি প্রত্যেকে। তিন বছরের কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে শীতের কুয়াশা ভেদ করে বাঁধভাঙা আনন্দ তখন মেধাবী ক্যাডেটদের হৃদয়ে। কাঙ্খিত সাফল্যের আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার অন্য রকম একদিন। তাদের কৃতিত্বে ধন্যি ধন্যি চারপাশ। নিজেদের সাফল্যের এ আনন্দ ছুঁয়ে গেছে অভিভাবক থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদেরও।

প্রত্যেকের চোখের তারায় খেলা করছে দেশমাতৃকার সেবার অমিত সম্ভাবনার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে যেন আরও স্বার্থক ও মহিমান্বিত করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপদেশ দিলেন আত্নবিশ্বাস নিয়ে পথচলার। নিজের সুগভীর প্রজ্ঞা আর দূরদৃষ্টিতে সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেমের মন্ত্র গেঁথে দিলেন মেধাবীদের মস্তিষ্কে।

২০৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানালেন নবীন সেনাদের। বারবার স্মরণ করিয়ে দিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অমর-অব্যয় নির্দেশনা। ‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালোবাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেনো, সৎ পথে থেকো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা’।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা সঞ্চারী বক্তব্য নবীন সেনা কর্মকর্তাদের দেশপ্রেম ও আত্নত্যাগে উদ্ধুদ্ধ করবে বলেই মনে করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ।

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দৃপ্ত শপথে বিজয়ের মাসে দেশপ্রেমের বৈজয়ন্তী উড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৭৯ তম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের কমিশন লাভ করা ১১৬ জন বাংলাদেশি, তিনজন ফিলিস্তিনি এবং একজন শ্রীলংকান ক্যাডেটসহ মোট ১২০ ক্যাডেট। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বিএমএ প্রাঙ্গণকে কার্যত যেন রূপ দিলেন উৎসবের হাটে।

এদিন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২০ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ। পরে তিনি কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাংক ও ব্যাচ পরিয়ে দেন।

ফজল এ খোদা রচিত জনপ্রিয় দেশাত্নবোধক ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানের সুরে প্যারেড সালাম গ্রহণ করেন সেনাপ্রধান। পল্লী জননীর রূপে মুগ্ধতা ছড়ানো সাম্যের কবি নজরুলের ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী’ সুরের মুর্চ্ছনায় প্যারেড পরিদর্শন করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিরাট দায়িত্ব কাঁধে
প্রধান অতিথি হিসেবে নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমরা যে শপথ গ্রহণ করেছে, এ শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিরাট দায়িত্ব কাঁধে পড়লো, সে কথা সব সময় মনে রাখতে হবে।’

প্রাকৃতিক দুযোর্গসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, ‘মানুষের জন্য সব কিছু করা, আমাদের সেনাবাহিনী মানুষের জন্যই, জনগণের সেনাবাহিনী, জনগণের পাশেই দাঁড়াবে। এজন্য যে কোনো দুযোর্গ মোকাবিলায় আমাদের সেনাবাহিনীর মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে।’

গর্ববোধ করবে দেশ-জাতি
সেনা সদস্যদের সফলতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তোমাদের পরিবারেরই একজন। তোমাদের প্রতি আমার সব সময় দোয়া ও আর্শিবাদ থাকবে। তোমরা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে। মানুষের জন্য কর্তব্য পালন করবে। যেন এদেশ এগিয়ে যেতে পারে, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হতে পারে।

আধুনিক ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়তে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। নবীন সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা নেতৃত্বে আরও সফল হও, দক্ষ হও, সুশিক্ষিত হও, দেশ-জাতি তোমাদের জন্য সব সময় গর্ববোধ করবে, সেটাই আমরা চাই।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সেনাপ্রধানের কৃতজ্ঞতা
নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘শত কর্মব্যস্ততার মাঝে এবং করোনা মহামারির এ প্রতিকূল সময়ে আজকের অনুষ্ঠানে সময় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

আজকের এ মহতী দিনে আপনার এ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য নবীন অফিসারদের দেশপ্রেম ও আত্নত্যাগে উদ্ধুদ্ধ করবে। এবং আপনার অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’

কাছে-দূরের সবাই জেনে গেছে ওদের কৃতিত্ব
চারপাশে বেজে উঠেছে মোহন বাঁশির সুর। কাছে-দূরের সবাই জেনে গেছেন মেধাবী ক্যাডেটদের কৃতিত্ব। তাদেরই একজন লেফটেন্যান্ট রায়নাল হাসান। বাবা ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান ও মা শহীদ আনোয়ার কলেজের শিক্ষক ফারজানা হাসান।

স্নেহময় বাবা ও মমতাময়ী মায়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বসিত রায়নাল বলছিলেন, ‘আমার জীবনের ঐতিহাসিক মুহুর্ত। চিরদিন এ দিনটির কথা মনে থাকবে।’

গর্বিত বাবা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান বলছিলেন, ‘আজকে খুব গর্ববোধ করছি আমার ছেলের কমিশন হচ্ছে। যে কোন বাবার জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া। দেশের জন্য আমার ছেলে সবকিছু বিসর্জন দেওয়ার প্রস্তুত থাকবে।’

অনুষ্ঠানে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন চীফ (ইএনসি) মেজর জেনারেল ইবনে ফজল সায়খুজ্জামান, বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো.ফখরুল আহসান, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ডিজি মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীমসহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে