বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিতঃ 8:27 pm | December 20, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

প্রতিটি কথাই যেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের অখন্ডতার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অব্যক্ত আকাঙ্খারই পঙক্তিমালা। নিজের প্রায় ১৪ মিনিটের বক্তৃতায় দেশপ্রেমিক এ বাহিনীটির বর্ণাঢ্য গৌরবময় ইতিহাসের পুরো ক্যানভাস তুলে ধরলেন। অনির্বাণ এক শিখার মতো অফুরন্ত শক্তি ও সাহসের বর্ণময় মন্ত্র গেঁথে দিলেন উপস্থিত সবার হৃদয়-মস্তিষ্কে।

আবার স্বপ্নের অমর জ্যোতিও জ্বালিয়ে দিলেন নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের চোখেও। বিশ্ব পরিমন্ডলে নিজেদের অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় অবস্থানের বিষয়টিও যুক্তিসঙ্গত ও তথ্যনির্ভর আলোচনায় তুলে আনলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় বক্তব্যে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনার কথা যেমন ধ্বনিত হয়েছে তেমনি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বের মহিমায় বিশ্বসভায় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো- বাদ যায়নি কোন কিছুই। দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে এক সময়কার স্বপ্নের সৌধ হিসেবে পরিচিত পদ্মাসেতুর বাস্তবতার বিষয়টিও আলোকোজ্জ্বল করেছেন।

এসবের পাশাপাশি সেনাপ্রধান মাস কয়েক যাবত দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সেনবাাহিনীকে নিয়ে একটি বিশেষ মহলের হাস্যকর ও কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচার এবং গুজবের বিরুদ্ধেও নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর দিকনির্দেশনামূলক ইস্পাত কঠিন আশীর্বাণী মানসিকভাবেই আরও উদ্দীপ্ত করেছে ৭১’র রণাঙ্গণে অভ্যুদয় ঘটা এই বাহিনীটির অকুতোভয় সদস্যদের।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকালে শীতের সোনালী রোদ্দুরের টিকড়ে পড়ার সময়টিতেই ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর নবগঠিত মিলিটারি ডেন্টাল সেন্টারের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে বিজয়ের বৈজয়ন্তী উড়ানোর মাসে সেনাপ্রধানের গৌরবদীপ্ত এমন সব উচ্চারণই যেন আরও প্রবল আত্নবিশ্বাসে বলীয়ান করেছে সূর্য সৈনিক সেনাদের।

সদর দফতর লজিস্টিকস এরিয়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তা ও বিভিন্ন পদবির সেনা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একে অপরের সমার্থক
‘বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ’ এ দু’টি নাম একে অপরের সমার্থক মন্তব্য করে সেনাপ্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গর্বিত মুজিববর্ষের এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা একটি বাস্তবতা। আর এ স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।’

সেনাবাহিনীর নবগঠিত মিলিটারি ডেন্টাল সেন্টারের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানটি ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে সফলতার ক্ষেত্রে আরও একটি মাইলফলক বলেই মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জেনারেল আজিজ আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহতী উদ্যোগে সেনাবাহিনীর পরিধি বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।’

করোনা মোকাবিলায় সেনা সদস্যদের নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক, উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশ গঠন ও বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে।

বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আমাদের সিএমএইচসমূহ স্বাস্থ্যসেবার রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেবার মানদন্ডে আমাদের সিএমএইচ’র সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বর্হিবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বপ্নের পদ্মাসেতু পূর্ণাঙ্গ দৃশ্যমান
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাসেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। নিজের বক্তব্যে এ বিষয়টি অমিত দৃঢ়তায় উপস্থাপন করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি মুগ্ধতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সকল ষড়যন্ত্রকে নসাৎ করে নিন্দুকের মুখে কালিমা লেপন করে আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু পূর্ণাঙ্গ দৃশ্যমান হয়েছে, এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যখন পদ্মার বুকচিড়ে এ সেতু দিয়ে রেলসহ সকল যানবাহন চলবে। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে গর্ব করার মতো একটি মাইফলক রচনা করার দ্বারপ্রান্তে।’

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি মোকাবিলায় যেখানে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ হিমশিম খেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সেখানে বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি দেশ করোনা মোকাবিলায় ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী করোনাযুদ্ধে অকুতোভয় সৈনিকের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমরা সদা প্রস্তুত, ভবিষ্যত প্রয়োজনেও নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কাজ করবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পূর্বের ন্যায় আমরা করোনার দ্বিতীয় ওয়েভকেও মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।’

সব প্রোপাগান্ডা ও গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার নির্দেশ
সেনাপ্রধান ড.আজিজ নিজের বক্তব্যের শেষপ্রান্তে দেশের বাইরে অবস্থানকারী একটি দেশবিরোধী চক্রের সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানামুখী প্রোপাগান্ডা ও গুজব ছড়ানোর বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘গর্ব করার মতো এতো সফলতার মাঝেও কিছু বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল দেশ ও জাতির গর্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে হাস্যকর প্রোপাগান্ডা ও রিউমার ছড়িয়ে বিরাজমান স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

কুচক্রী মহলের বোঝা উচিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অতীতের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ক, প্রশিক্ষিত ও পেশাদার সেনাবাহিনী। যাদেরকে এতো প্রোপাগান্ডা ও রিউমার ছড়িয়েও বিন্দুমাত্র বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। ইনশাআল্লাহ আগামীতেও পারবে না, এজন্য আমি সকল স্তরের কমান্ড চেইনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতেও সকল প্রকার প্রোপাগান্ডা ও রিউমারজাতীয় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করছি।’

কালের আলো/এমএএএমকে