দেশের প্রয়োজনেই সুসংগঠিত-যুগোপযোগী সেনাবাহিনী; যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 8:14 pm | October 28, 2020

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, শেখ হাসিনা সেনানিবাস ঘুরে এসে :
জীবন নামের বহতা নদীর বাঁকে বাঁকে শত ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে পড়েছেন বারবার। আবার ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন বীরদর্পেই। মৃত্যুর খাড়া সারাক্ষণ মাথার ওপর নিয়েই পরিচালনা করছেন সতের কোটির বাংলাদেশ। বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে শক্তপোক্ত নতুন চেহারায় মাথা তুলে দাঁড় করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: নজরকাড়া ও পরিবেশবান্ধব ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস’
‘বিশ্বশান্তির অগ্রদূত’র খেতাব যাকে আগেই দিয়েছে বিশ্ব, সেই প্রধানমন্ত্রী শান্তির বার্তাই দিয়েছেন প্রতিনিয়ত। তিনি কখনও যুদ্ধ চান না। শান্তির পক্ষে থেকেই বন্ধুত্ব সুদুঢ় করতে চান পড়শিদের সঙ্গে। তবে কারও চোখ রাঙানোতে ভীত সন্ত্রস্ত হওয়ার মতো ‘রাষ্ট্রনায়ক’ নন মোটেও।
যারপরেনাই দিনবদলের পালায় নানামুখী কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের প্রয়োজনেই আধুনিক, যুগোপযোগী ও সুসংগঠিত হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই বলে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সেনাবাহিনীকে নতুন নতুন ট্যাংক, অরলিকন রাডার কন্ট্রোল্ড গান বা প্রশিক্ষণ বিমানসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র সরঞ্জাম কিনে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনায় রয়েছে কাসা বিমান কেনারও। নিজেদের সক্ষমতার বিষয়টিও গর্বের সঙ্গেই জানানও দিয়েছেন বিশ্বকে।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) সকালে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে শেখ হাসিনা সেনানিবাসে নবপ্রতিষ্ঠিত তিনটি ব্রিগেড ও ৫টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। আবার সতর্কও করেছেন শান্তি বিনষ্টের লম্ফঝম্ফ করে বেড়ানো বাহ্যিক শক্তিকে।
সাফ সাফ বলেছেন, ‘আমরা শান্তি চাই, বন্ধুত্ব চাই। বৈরিতা চাই না, যুদ্ধ চাই না। কোনও ধরনের সংঘাতে আমরা জড়িত হতে চাই না। কিন্তু যদি কখনও আক্রান্ত হই, সেটা মোকাবিলা করার মতো শক্তি যেন আমরা অর্জন করতে পারি, সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই এবং সেভাবে তৈরি থাকতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী এদিন তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে শেখ হাসিনা সেনানিবাসে যুক্ত হন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দাঁড়িয়ে সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি তাঁর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে ৭ পদাতিক ডিভিশনের তিনটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ও ৫ টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সার্বিক দিকনির্দেশনায় নবগঠিত এ ইউনিটসমূহ সুদক্ষ, পেশাদার ও চৌকস হিসেবে গড়ে উঠার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর অর্জিত সুনাম ও গৌরব ধরে রাখার পাশাপাশি দেশের সেবায় গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখারও সুদৃঢ় অঙ্গীকার করেছে।
প্রায় ২৫ মিনিটেরও অধিক সময়ের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে দেশের মানুষের বিশ্বাস ও ভরসার প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। দেশের সংবিধান এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য এ বাহিনীকে সর্বদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন।

আবার বাহিনীটির সব সদস্যকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা সেনাবাহিনীর ভেতরে মূল চালিকাশক্তি, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আপনাদের স্বীয় কর্তব্য যথাযথভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাবেন সেটাই আশা করি।’
সেনাবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে নেওয়া নানামুখী পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করি। ১৯৭৪ সালের বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এ দেশের উন্নতি হলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পরিবারের উন্নতি হবে। সে কথা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সেনাপ্রধানের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা
সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ শত কর্মব্যস্ততার মাঝে এবং করোনা মহামাহারীর এই কঠিন সময়েও এ অনুষ্ঠানে সময় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

সেনাপ্রধান বিশেষ অতিথি হিসেবে নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০ অর্জনের লক্ষ্যে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বে সদা চলমান আধুনিক ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনী গঠনের অংশ হিসেবে আজ তিনটি ব্রিগেড ও ৫ টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। আপনার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে বিশেষভাবে উদ্ধুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে এবং চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে।’
অনুষ্ঠানে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস.এম.শফিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল এনায়েত উল্লাহ, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো.সাইফুল আলম, ৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আবুল কালাম মো.জিয়াউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে পর্দা উন্মোচনের মাধ্যমে ৭ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া সদর দপ্তর অফিস কমপ্লেক্সসহ ৬ টি নবনির্মিত স্থাপনার শুভ উদ্বোধন করেন সেনাপ্রধান।

কালের আলো/এমএএএমকে