নজরকাড়া ও পরিবেশবান্ধব ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস’

প্রকাশিতঃ 5:37 pm | October 29, 2020

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, শেখ হাসিনা সেনানিবাস ঘুরে এসে :

ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পায়রা নদী। অটুট রেখেছে নিজের স্বকীয়তাও। বরিশাল ও পটুয়ালীর সীমান্ত ছোঁয়া লেবুখালীতে এ নদীর তীরেই এক হাজার ৫৩২ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দেশের ৩১ তম ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস’। প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আবহে এক অপরূপ আকর্ষণে পূর্ণতা পেয়েছে এ সেনানিবাস।

আরও পড়ুন: দেশের প্রয়োজনেই সুসংগঠিত-যুগোপযোগী সেনাবাহিনী; যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

নজরকাড়া সৌন্দর্যের লীলাভূমির তকমা আঁটা এ সেনানিবাস দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় কোন সেনানিবাস না থাকার আক্ষেপ-হতাশারও পরিসমাপ্তিও ঘটিয়েছে। জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাসহ দক্ষিণ উপকূলের ৬ জেলার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতেই গড়ে তোলা হয় এ সেনানিবাস।

১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার বিশাল এলাকায় এ সেনানিবাসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন নবগঠিত ৭ পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এই সেনানিবাসের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই বছরেরও কম বয়সী এ সেনানিবাস ইতোমধ্যেই নিজেদের পরিবেশবান্ধব ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছে।

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশবান্ধব এ সেনানিবাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন।

বুধবার (২৮ অক্টোবর) সকালে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে শেখ হাসিনা সেনানিবাসে নবপ্রতিষ্ঠিত তিনটি ব্রিগেড ও ৫টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর লেবুখালীতে ৭ পদাতিক ডিভিশনের সদর দফতর প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পদ্মার এ পারে সশস্ত্রবাহিনীর কোন ব্রিগেড ছিল না, যে কারণে আমরা এখানে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আজ ৩টি ব্রিগেড সদর ও ৫টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

একদা বঞ্চিত দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ হিসেবে লেবুখালী সেনানিবাসের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নবগঠিত সেনানিবাসের উন্নয়ন কাজ পরিকল্পতভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অভাবনীয় অগ্রগতি ডিভিশনের প্রতিটি সদস্যের ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সুদূরপ্রসারী নগর পরিকল্পনার আলোকে প্রাকৃতিক শোভাকে নষ্ট না করে পরিবেশবান্ধব সেনানিবাস গঠনের পরিকল্পনার জন্য তিনি সেনাবাহিনী প্রধান ও এই ডিভিশনের জিওসিসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে।’

‘বরিশাল সেনানিবাসের উন্নয়ন এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নতুন আশা যোগাচ্ছে এবং আপনাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে’ যোগ করেন হ্যাট্টিক প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সদর দফতর ৭ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেড (চট্টগ্রাম), সদর দফতর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড (সিলেট), সদর দফতর ২৮ পদাতিক ব্রিগেড, ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৬৬ ইস্টবেঙ্গল, ৪৩ বীর, ৪০ এসটি ব্যাটালিয়ন এবং ১২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করা হয়, জানান প্যারা কমান্ডো ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসিন আলম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও কনফারেন্সের পর সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ পর্দা উন্মোচনের মাধ্যমে ৭ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া সদর দপ্তর অফিস কমপ্লেক্স, সদর দপ্তর ৭ আর্টিলারি ব্রিগেড অফিস কমপ্লেক্স, সদর দপ্তর ৬ পদাতিক ব্রিগেড অফিস কমপ্লেক্স, স্টেশন সদর দপ্তর বরিশাল অফিস কমপ্লেক্স, সিএমএইচ শেখ হাসিনা সেনানিবাস এবং গ্যারিশন মসজিদের শুভ উদ্বোধন করেন।

এ সময় শেখ হাসিনা সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের প্রতি নিজেদের কৃতজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সম্মানিত সেনাপ্রধানের সার্বিক দিকনির্দেশনা এবং আন্তরিক সহযোগিতার ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে দেশের ৩১ তম এ সেনানিবাস।

এ সময় আরও বলা হয়, ‘২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গুটিকয়েক অবকাঠামো নিয়ে এ সেনানিবাসের যাত্রা শুরু হয়। বিগত দুই বছরের অধিককাল সময়ের মধ্যে এডিপির আওতায় সর্বমোট ৪০ টি বড় স্থাপনা প্রকল্প, আভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেনেজ সিস্টেম, বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক ও পানি সরবরাহের কাজ শুরু হয়।

ইতোমধ্যে ১৭ টি স্থাপনার কাজ শেষ হয়েছে এবং ২৩ টির কাজ চলমান রয়েছে। এসব স্থাপনার মাধ্যমে সেনা সদস্যদের অপরিসীম প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনায় গতিশীলতা এসেছে।’

পথচলার শুরুতে ৭ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো.সাইফুল আলম। এখন এ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মেজর জেনারেল আবুল কালাম মো.জিয়াউর রহমান। ৭ পদাতিক ডিভিশন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সদা প্রস্তুত এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আধুনিক ও যুগোপযোগী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিত্রই উপস্থাপন করেন।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০ অর্জনের লক্ষ্যে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বে সদা চলমান আধুনিক ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনী গঠনের অংশ হিসেবে আজ তিনটি ব্রিগেড ও ৫ টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। আপনার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে বিশেষভাবে উদ্ধুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে এবং চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে।’

কালের আলো/এমএএএমকে