বাম্পার ফলনেও চীনে খাদ্য অপচয় রোধের চেষ্টা যে কারণে
প্রকাশিতঃ 10:28 am | September 17, 2020

আলিমুল হক :
আমি চীনে আসি ২০১২ সালে, অগাস্টের মাঝামাঝিতে। বিমানবন্দরে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে রিসিভ করেছিলেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইয়ুয়ে আনন্দি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ‘মুক্তার কথা’-র মুক্তা। মুক্তার চীনা নাম ছাই ইয়ুয়ে। তাঁরা আমাদেরকে বিমানবন্দর থেকে সোজা নিয়ে এলেন আমাদের নতুন ঠিকানায়। ‘নতুন ঠিকানা’ মানে এক রুমের একটি ফ্ল্যাট। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের খুব কাছেই সেটি।
পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়েছিল, মনে আছে। চীনে সন্ধ্যা মানে ডিনার বা রাতের খাবারের সময়। ম্যাডাম আনন্দি আর মুক্তা আমাদের নিয়ে গেলেন রেস্টুরেন্টে। মেনু দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই। কোন খাবারের কী স্বাদ তাও জানি না। খাবার পছন্দের দায়িত্ব তাই চাপিয়ে দিলাম আমার দুই নতুন চীনা সহকর্মীর ওপর। তারা অকৃপণভাবে খাবার অর্ডার করলেন। বেশ কয়েক পদ, পরিমাণও কম নয়। বলা বাহুল্য, চীনা জীবনের প্রথম দিনে আসল চীনা খাবার আমার ও আমার স্ত্রীর মুখে তেমন একটা রুচলো না।
ফলাফল: বেশকিছু খাবার বেঁচে গেল। মনে আছে, মুক্তা বেঁচে-যাওয়া কিছু চিংড়ি প্যাক করে নিয়ে গিয়েছিলেন বাসায়। ম্যাডাম আমাকেও কিছু খাবার সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছিলেন। আমি লজ্জায় ‘না’ করি। সেই লজ্জার কথা চিন্তা করলে আমার এখন হাসি পায়। বিগত ৮ বছরে আমি চীনাদের কাছ থেকে নতুন যাকিছু শিখেছি, তার একটি হচ্ছে রেস্টুরেন্টে খাওয়াশেষে উদ্বৃত্ত খাবার প্যাক করে বাসায় নিয়ে যাওয়া। অবশ্য, রেস্টুরেন্টে আমার খুব কমই খাওয়া হয়।
রেস্টুরেন্ট থেকে উদ্বৃত্ত খাবার প্যাক করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা চীনাদের মধ্যে আজকাল বেড়েছে। সেদিন আমার এক চীনা সহকর্মীকে দেখলাম সকালে ক্যান্টিন থেকে কেনা নাস্তার একটা অংশ বিকেলে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই একগাল হেসে বললেন: ‘খাদ্যের অপচয় রোধে ভূমিকা রাখছি।’ প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং খাদ্যের অপচয় রোধ করতে নতুন করে আহ্বান জানানোর পর চীনাদের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। এই সচেতনতার কারণেই চীনাদের মধ্যে রেস্টুরেন্ট থেকে উদ্বৃত্ত খাবার বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে।
সম্প্রতি চীনে একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘চায়না ইয়ুথ ডেইলি’-তে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৯১.২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর উদ্বৃত্ত খাবার প্যাক করে বাড়ি নিয়ে যান। তাদের মধ্যে আবার ৩০.৯ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা কমবেশি যা-ই উদ্বৃত্ত থাকুক, বাসায় নিয়ে যান। আর ৬০.৩ শতাংশ বলেছেন, উদ্বৃত্ত খাবার যদি পর্যাপ্ত ও ভালো অবস্থায় থাকে, তবে তাঁরা তা প্যাক করে নিয়ে যান। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৯২ শতাংশ মনে করেন, খাদ্য সাশ্রয় করা একটা সদ্গুণ। আর ৮৫.৭ শতাংশ মনে করেন, খাদ্যের অপচয় রোধ করা জীবনমানের আধুনিক ধারণার সঙ্গে মানানসই।
চীনে ‘ফুড ব্যাংক’ কোনো নতুন ধারণা নয়। তবে, প্রেসিডেন্ট সি’র খাদ্যের অপচয় রোধের আহ্বানের পর ফুড ব্যাংকও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। চীনে প্রথম ‘ফুড ব্যাংক’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল শাংহাইয়ে, ২০১৪ সালে। এই ব্যাংক প্রায়-মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য বিভিন্ন সুপার মার্কেট থেকে দান হিসেবে গ্রহণ করে। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের উদ্বৃত্ত খাদ্যও তারা সংগ্রহ করে। তারপর সেগুলো বিলিয়ে দেয় গরিবদের মাঝে। শুধু খাদ্যের অপচয় রোধ করা বা গরিবদের সাহায্য করাই এই ব্যাংকের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, পরিবেশ রক্ষা করাও তাদের কাজের একটা অন্যতম লক্ষ্য।
যাত্রা শুরুর পর এই ব্যাংকের শাখা বিস্তৃত হয়েছে চীনের কমপক্ষে ১১টি প্রদেশ বা প্রদেশ পর্যায়ের অঞ্চলে। বেইজিং, সিছুয়ান, সিনচিয়াং ও লিয়াওনিংয়েও আছে এই ফুড ব্যাংকের শাখা। ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত এই ফুড ব্যাংক দেশব্যাপী প্রায় ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের খাদ্য সংগ্রহ করে এবং প্রায় আড়াইশ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ও বিদ্যালয়ের মাধ্যমে সাড়ে সাত লাখ মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। বলা বাহুল্য, ফুড ব্যাংক সংগ্রহ না-করলে, খাবারগুলো নষ্ট হতো।
নিশ্চিতভাবে বলতে পারবো না, তবে ধারণা করি, এই ‘ফুড ব্যাংক’-ও যাত্রা শুরু করেছিল প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের একটি আহ্বানের কারণে। ২০১২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। আর ২০১৩ সালে খাদ্যের অপচয় রোধের আহ্বান জানান। কিন্তু তখন সেই আহ্বান তেমন একটা প্রচার পায়নি। তখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে সংস্কারের কাজ জোরেশোরে চলছিল। হতে পারে, এ কারণে খাদ্যের অপচয় রোধের বিষয়টি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পেয়েছিল। আর এ কারণে দেশে-বিদেশে সেটির খুব একটা প্রচারও হয়নি। কিন্তু এবার মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে যখন তিনি খাদ্যের অপচয় রোধের আহ্বান জানালেন ও এ ব্যাপারে দৃঢ় নির্দেশনা জারি করলেন, তখন বিষয়টি দেশের ভিতরে ব্যাপক প্রচার পায়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খাদ্যের অপচয় রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে বিশেষ বার্তা প্রচারিত হতে থাকে, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ খাদ্যের অপচয়ের ব্যাপারে আরও সচেতন হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলতে থাকে, শুরু হয় ‘চেটেপুটে খাও’ আন্দোলন। চীনে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, আর সেটা পাশ্চাত্যের সমালোচনার দৃষ্টিতে পড়বে না, তা তো হয় না! পাশ্চাত্যের কেউ কেউ বলতে শুরু করলেন যে, মহামারি ও বন্যার কারণে চীনে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে বা অচিরেই দেবে। আর সেকারণেই চীনের প্রেসিডেন্ট সি খাদ্যের অপচয় রোধের নির্দেশনা দিয়েছেন।
আপাত দৃষ্টিতে কারণটা সহিহ মনে হলেও, বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। চীনে বিগত কয়েক বছরে খাদ্যশস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। ২০১৯ সালে চীনে রেকর্ড ৬৬ কোটি ৪০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়। আগের ১৫টি বছরও দেশটিতে খাদ্যশস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে টানা। এমনকি, চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়েছে রেকর্ড ১৪ কোটি ২৮ লাখ টন, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ০.৯ শতাংশ বেশি। এদিকে, চীনে হেমন্তে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয় সারা বছরের মোট উৎপাদনের ৭০ শতাংশ। যেমনটি পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে হেমন্তেও উৎপাদনের রেকর্ড ভাঙবে। মোদ্দাকথা, মহামারির এই বছরেও চীনে খাদ্যশস্যের বাম্পার ফলন হতে যাচ্ছে। হ্যাঁ, একথা ঠিক যে, বন্যায় বেশকিছু ফসলের ক্ষেত ভেসে গেছে। কিন্তু সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে চীনের কৃষিখাতের। তাছাড়া, এবারের বন্যা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গেই মোকাবিলা করা হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে।
এটা ঠিক যে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করেও চীনকে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। মহামারির কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। নতুন করে খাদ্যশস্যের অপচয় রোধে প্রেসিডেন্ট সি’র নির্দেশনার পেছনে এটা একটা কারণ হতে পারে। মহামারি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। চীনে মহামারি নিয়ন্ত্রণে এলেও, বাইরের দুনিয়ায় মহামারির তাণ্ডব চলছে। কবে নাগাদ এই তাণ্ডব শেষ হবে বলা মুশকিল। মহামারি যতো দীর্ঘায়িত হবে, বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের সরবরাহ চেইনের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব তত বাড়বে। এ অবস্থায়, খাদ্যের অপচয় রোধ করা, খাদ্যের সাশ্রয় করা, আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় বেশি জরুরি। যথাসম্ভব ভবিষ্যতের আরও খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই সময়।
কিন্তু এটা একমাত্র কারণ নয়। প্রেসিডেন্ট সি ২০১৩ সালে খাদ্যের অপচয় রোধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। হতে পারে, খাদ্যের অভাবসম্পর্কিত তার নিজের অভিজ্ঞতা তাকে সবসময়ই খাদ্যের অপচয়ের বিরুদ্ধে তাড়িত করে। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে পার্টির কর্মী হিসেবে গরিব গ্রামাঞ্চলে কাজ শুরু করেছিলেন। তাকে তখন গ্রামের সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে মাঠে কাজ করতে হতো। তখন কাজের উপর নির্ভর করতো খাবারের পরিমাণ। শুরুতে তিনি নিজে বেশি কাজ করতে পারতেন না। ফলে তার ভাগ্যে কম খাবার জুটতো। তাকে প্রায়ই অভুক্ত অবস্থায় রাত কাটাতে হতো। পাশাপাশি, তিনি নিজের চোখে দেখেছেন গরিব কৃষকদের অভাব-অনটন; দেখেছেন তাদের দিনের পর দিন অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার করুণ দৃশ্য। বোধকরি একারণেই খাদ্যের অপচয় তাকে পীড়া দেয়। সমৃদ্ধ চীনে যখন তিনি দেখেন, চারিদিকে বেশুমার খাদ্য নষ্ট করা হচ্ছে, তখন তিনি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন, এটাই তো স্বাভাবিক!
তবে, শুধু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই তাকে খাদ্যের অপচয়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছে, তা আমার মনে হয় না। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও অন্যতম বড় দেশের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তার চোখের সামনে আছে বৈশ্বিক চিত্রটাও। এই চিত্রটা কিন্তু মোটেই প্রীতিকর নয়! বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)-এর হিসাব অনুসারে, বিশ্বে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ নষ্ট (লস্ট) ও অপচয় হয়, যার আনুমানিক ওজন ১৩০ কোটি টন ও মূল্য এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার তথা ৮৫ লাখ কোটি টাকা (বাংলাদেশের প্রায় ২৫টি বার্ষিক বাজেটের সমান!)। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর যে খাদ্য অপচয় হয়, তার মূল্য ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
ইউরোপে যে পরিমাণ খাদ্য অপচয় হয়, তা দিয়ে ২০ কোটি মানুষের এক বছরের ক্ষুধা নিবারণ করা সম্ভব। আর চীনে প্রতিবছর বিভিন্ন রোস্তোরাঁয় যে পরিমাণ খাবার অপচয় হয়, তার পরিমাণ দেড় থেকে দুই কোটি টন, যা দিয়ে ৩ থেকে ৫ কোটি মানুষের এক বছরের খাদ্যচাহিদা মিটতে পারে। আর এর বিপরীত চিত্রটা হচ্ছে: বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৮২ কোটি মানুষ অভুক্ত বা অর্ধভুক্ত অবস্থায় রাত কাটায়। আরেক হিসাব মতে, বিশ্বে প্রতিদিন ৮ হাজার শিশু মারা যায় স্রেফ পুষ্টিহীনতায়।
এমন নয় যে, খাদ্যের অপচয় রোধ করা গেলে সেসব খাদ্যের সবটুকুই বিশ্বব্যাপী গরিব মানুষগুলোর প্লেটে চলে যাবে। পুরোটা না-হলেও, একটা অংশ তো অবশ্যই যাবে! শাংহাইয়ের ফুড ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট হওয়া খাদ্যের একটা অংশও যদি উদ্ধার করতে পারে, তবে সেটাও কম না। তা ছাড়া, খাদ্যের অপচয় মানে কিন্তু শুধু না-খেতে পেরে ফেলে দেওয়া নয়! অতিরিক্ত খেয়েও খাদ্যের অপচয় করা হয়। আর অতিরিক্ত খাদ্য মানে অতিরিক্ত ওজন, অতিরিক্ত ওজন মানে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ; আর অসুখ-বিসুখ মানে কাজের দক্ষতা হ্রাস ও চিকিৎসার ব্যয় বৃদ্ধি।
এক হিসাব মতে, চীনের ৩০ কোটি মানুষ অতিরিক্ত ওজনদার। যুক্তরাষ্ট্রে তো ওবিসিটি আরেকটি মহামারির মতো। শুনেছি, বাংলাদেশের মতো গরিব দেশেও অতিরিক্ত ওজন সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। মুসলিমঅধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যেও এই সমস্যা প্রকট। অথচ ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন: ‘তোমরা যখন খাবে তখন পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাদ্য দিয়ে পূর্ণ করবে, এক ভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ করবে, এবং বাকি এক ভাগ খালি রাখবে।’ তিনি আরও বলেছেন: ‘পেটে খানিকটা ক্ষুধা থাকতে খাওয়া বন্ধ কর।’
খাদ্যের অপচয় ও নষ্টের পরিবেশগত মূল্যও কিন্তু কম নয়! এক হিসেব অনুসারে, বিশ্বে প্রতিবছর যে-পরিমাণ খাদ্য অপচয় ও নষ্ট হয়, তা উৎপাদন করতে ৮ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করতে হয়। অন্যভাবে বললে, প্রতিবছর যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীবাসী নিঃসরণ করে থাকে, তার ৮ শতাংশ নিঃসরণ হয় অপচয় ও নষ্টকৃত খাদ্যের উৎপাদনের সময়।
২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট সি খাদ্যের অপচয় রোধের ডাক দিয়েছিলেন বোধকরি এই বৈশ্বিক চিত্রটাকে সামনে রেখেই। তখন বিষয়টা নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয়নি। আমি তখন চীনে নতুন এসেছি। এ নিয়ে আলোচনা শুনেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু এখন চীনের সর্বত্র এ নিয়ে শুধু আলোচনা চলছে, তা নয়, সমাজের সকল পর্যায়ে চলছে খাদ্য অপচয় রোধে বিভিন্ন চেষ্টা। কিন্তু এই চেষ্টা চলা উচিত বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশেও খাদ্যের অপচয় হয়; বাংলাদেশেও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা উদ্বৃত্ত খাদ্য সংগ্রহ করে শাংহাইয়ের ফুড ব্যাংকের মতোই গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়। এ ধরনের কাজ আরও হওয়া দরকার।
পাশাপাশি, একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে দেশজুড়ে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। না, খাদ্যের অপচয় রোধে শুধু চীনা প্রেসিডেন্টই ডাক দিয়েছেন, তা নয়, ডাক দিয়েছে খোদ জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)-ও। সংস্থাটি চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বরকে ‘প্রথম আন্তর্জাতিক খাদ্য নষ্ট ও অপচয়বিরোধী প্রচারণা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। দেখার বিষয় এই দিবস বিশ্বব্যাপী কতোটা জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)।