‘শুচি হোক ধরা’
প্রকাশিতঃ 9:50 am | April 15, 2020

মুন্নী সাহা :
সারা শহরজুড়েই খাঁ খাঁ হাহাকার। এরইমধ্যে অফিসে যাই। ছোট্ট জায়গায়, কিছুলোক একত্রে তো দেখা যায়! করোনাকালে, ছোট্ট জায়গা সংকটের অফিসটাকে মানুষ মানুষ লাগে। আহা… প্রাণ! অতি সাবধানীরা অভিশাপ গলায় নিয়ে, আহা উহু করে উপদেশ দেয়, ফোন করে। মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে মজে যাই আনন্দের বাজারে…।
অফিসের লিফট, স্টুডিওর চেয়ার, পিসিআরের প্যানেল সাফ সুতরোর মধ্যেও করোনার ভয় পাত্তা পায় না। মাস্ক লাগিয়ে ঝগড়া, মাস্ক লাগিয়েই— তু চিজ বারি ইয়ে মাস্ক্ মাস্ক্ গান!
অফিস সহকারীদের বাইরে যাওয়া নিষেধ, ধোয়া ইস্ত্রি করা কাপড় পরতে হবে সকলকে, হাতে হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে ও টিস্যু। কে কাকে দরজাটা ঠেলে খুলে দিচ্ছেন, ফুস্ করে একটু স্প্রে মারছেন বোঝার উপায় নেই। শুধু বুঝতে পারি, এই ঘামের গন্ধের অফিসে সহমর্মিতা স্প্রে হচ্ছে, সবার সুস্থতার জন্য।
তারপরেও লখিন্দরের বাসর ঘরে করোনার অভি-সাপ ঢুকেছে। জানি, এই সুঁতোনালি সাপ তেমন কিছু করতে পারবে না… শুধু ২৪ ঘণ্টার গমগমে আনন্দটুকু মাইনাস করা ছাড়া, আমাদের করোনা কিচেনের ইলিশ পোলাও, ভুনা খিচুড়ি, বা কষা পাঠা খাওয়ার আড্ডাটুকু কেড়ে নেওয়া ছাড়া।
হ্যাঁ, আমাদের এক সহকর্মী করোনা পজিটিভ হওয়ার পর অর্ধেকের বেশি সংবাদকর্মীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছি। আর হারাধনের কয়েকটা ছেলে মেয়ে যা-ও বা বাকি ছিল— তাদের পরিবার, বন্ধু বান্ধবী, প্রেমিক-প্রেমিকা এবং বাড়িঅলা, এলাকাবাসীর ভালোবাসার দোহাই দিয়ে, দেদারসে মোবাইলে টেক্সট পাঠাচ্ছে আমাকে, দিদি… অমুক, তমুক…। সবার জন্য একটা বাক্যই কপি পেস্ট করছি—‘ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন’। খাঁটি বাংলায় যাকে বলে… ছুট্টি ই ই ই…!
গতরাতে (সোমবার) অনুষ্ঠান শেষ করে, বৈশাখের কন্টেন্ট ফাইনাল করছিলাম। এবারের থিম ‘শুচি হোক ধরা’!
গ্রাফিক্স নিয়ে আমি একটু সুচিবাইগ্রস্ত। যেটা রেডি হয়েছিল, পছন্দ হয়নি। হারাধনের একটি ছেলে, সৌরভ-ই আমার জন্যে জেগে ছিল গ্রাফিক্স বিভাগে। আমাদের সেলিব্রেটি সংবাদ পাঠিকা আঁখি ভদ্রকে নিউজের ফাঁকেই বলে গেছিলাম— বৈশাখের গানের দু লাইন বেদনা দিয়ে গেয়ে দিতে। তারপর এক্সপেরিমেন্ট! আর রমনা বটমূলের রাস্তাটার এই একাকিত্বের ড্রোন ছবি নিয়ে রেখেছিলাম, সপ্তাখানেক আগেই। সকাল থেকে যারা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছেন, তাদের অনেকেই বললেন— আমাদের এই গ্রাফিক্যাল শুভেচ্ছা কার্ড নাকি, ‘জন –আহ্বান’ শোনার জন্য, জমে থাকা আকুতি, কান্না হয়ে নামিয়ে আনার উসকানি। অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা… না ব’লে গাইতে হবে, অশ্রুর স্নানে শুচি হোক ধরা…! বাহ্, বেশ তো!
ঝাপসা চোখে, গত ১০ বছরের এটিএন নিউজ রুমের বৈশাখী হাহ্ হা- হিহ্ হি রোমন্থন করে নিলাম।
আর ১৪২৭ এর বৈশাখের আগের রাত্রে ১৩/১৪ জনের, হাহাকারের টিম। চোখটা ক্যামেরার লেন্সের মতো এক্সপোজার ঠিক করে, দিব্য চোখে দেখে নিলাম এই ছোট্ট টিমের শক্তি। করোনায়… কিছুতো করলোই! শুভ নববর্ষ ১৪২৭।
লেখক: প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন নিউজ