এবার আলোচনায় অবৈধভাবে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী মুন

প্রকাশিতঃ 11:51 am | April 23, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্রলীগের ভেতরে-বাইরে শীর্ষ দুই নেতার সাংগঠনিক দুর্বলতা চরমভাবে প্রতিয়মান হয়েছে। সবচে বেশি আলোচনায় এসেছে রগ কেটে দেয়ার গুজব এবং শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে নিয়ে।

ঘটনার রাতে ১০ এপ্রিল প্রকৃত ঘটনা না জেনেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এশাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করা হয়। এরপর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেই বহিষ্কারাদেশ। প্রায় সব নেতাই না জেনে না বুঝে, ছাত্রলীগে অপরাধীর কোনো ঠাঁই নেই বলে তা প্রচার করে এশার বিরুদ্ধে চলে যান।

ঠিক পরদিনই দুপুরের পর থেকেই অপরাধী এশার বিরুদ্ধে অবস্থান পরিবর্তন করে ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে। ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এশাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এমনকি ৩৬ ঘন্টার ব্যবধানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এশাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। এ নিয়েও নানামূখী প্রশ্ন রয়েছে। কেন সেই রাতে তারা ঘটনাস্থলে যাননি এবং ছাত্রলীগের একজন নেতাকে উদ্ধারে তাদের ভূমিকা রহস্যজনক কেন ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরপর, তদন্ত কমিটির অসম্পূর্ণ প্রতিবেদনের ভিত্তিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক খালেদা হোসেন মুনসহ সুফিয়া কামাল হল শাখার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ মোট ২৪ জনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। গঠনতন্ত্র না মেনে এবং খালেদা হোসেন মুনের সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ অথবা তদন্ত কমিটি বক্তব্য না নিয়েই কোনো এক অজানা এবং রহস্যময় কারণে তাকে বহিষ্কার করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে এই ২৪ জনের বহিষ্কারাদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতাকর্মীই তদন্ত কমিটির অসম্পূর্ণ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অগঠনতান্ত্রিক এবং অবৈধভাবে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী খালেদা হোসেন মুন ইতিমধ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ১ বছর ধরে তিনি হলেই থাকেন না। এমনকি হল রাজনীতি নিয়েও মাথা ঘামান না। তারপরও কেন, কার স্বার্থে তাকে বহিষ্কার করা হলো, সেটার জবাবও চেয়েছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতারা কাছে। কিন্তু তারা বিষয়টিকে আমলেই নিচ্ছেন না।

এদিকে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এখন পর্যন্ত সুফিয়া কামাল হল ঘটনায় মুনের কোনো ইন্ধনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। ওইদিন রাতের আকস্মিক ঘটনায় মুনের সঙ্গে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা এবং হলে তার অনুসারী কর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে কি কি কথা হয়েছে সেগুলোও সংগ্রহ করা হয়েছে।

সেখানে এশার ওপর আক্রমণ করা তো দূরে থাক উল্টো তাকে বাঁচাতে নিজে হলে যাওয়ার কথাবার্তা পাওয়া গেছে। এমনকি তার কর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে তিনি বলেছেন, যেকোনো মূল্যে এশাকে বাঁচাতে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন খালেদা হোসেন মুন।

সময় যত গড়াচ্ছে ততই সাধারণ মেয়েদের প্রতি গত এক বছরে সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বেপোরোয়া আচরণ এবং অসিহষ্ণুতার খবর বেরিয়ে পড়ছে এবং তার প্রতি মানুষের যত সহানুভূতি তিনি কুড়িয়েছিলেন তাদের সহাননুভূতির মাত্রাও কমে আসছে। এ অবস্থায় অগঠনতান্ত্রিকভাবে এবং অভিযুক্তকে অভিযোগ খণ্ডানোর সুযোগ না দিয়ে খালেদা হোসেন মুনকে কেন বহিষ্কার করা হলো, সেটাও ছাত্রলীগের অনেক সাবেক নেতা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও জানতে চান। ফলে এশাকে ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছেন খালেদা হোসেন মুন।

এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, সভাপতি এম সাইফুর রহমান সোহাগের কথা। এরপর সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা দেখছি, কি করা যায়? তবে সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লাগছে।

 

কালের আলো/এসআর