জুয়ার বিরুদ্ধে ডিএমপি’র কোন আইন নেই : সাবেক আইজিপি শহীদুল হক

প্রকাশিতঃ 9:21 am | September 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

জুয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কোন আইন নেই বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ.কে.এম.শহীদুল হক। তিনি বলেছেন, ‘পুলিশ আইনের মধ্যে থেকে আইন প্রয়োগ করে। এখন জুয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কোন আইন নেই।

কোথাও জুয়া হচ্ছে ইচ্ছে করলেই পুলিশ ধরতে পারবে না। আদালতের অনুমতি লাগবে অথবা আদালতের ওয়ারেন্ট লাগবে, অনেক বিষয় আছে। আর পানিশমেন্টও কম, ২০০ টাকা জরিমানা ও একমাস জেল।’

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২ টার দিকে নিজ বাসা থেকে একাত্তর জার্নাল’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে একযোগে অভিযান চালায় র‌্যাব। পরে খালেদ মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়া ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ক্লাবগুলো থেকে জুয়ার আড্ডা চালানোর আয়োজন, নগদ দেশি ও বিদেশি টাকা, অস্ত্র ও নেশা জাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য জব্দ করা হয়। অভিযানে ইতোমধ্যে একাধিক যুবলীগ নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। মূলত এ অভিযানের সূত্র ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।

একাত্তর জার্নাল’ অনুষ্ঠানে পুলিশের সাবেক আইজি এ.কে.এম.শহীদুল হক বলেন, ‘রাজধানীর ক্লাবগুলো তাদের নিজস্ব ইনকামের জন্য বিভিন্ন সময় ইনডোর গেম খেলে থাকে। ক্লাব, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্পোর্টিং ক্লাব, বিভিন্ন সামাজিক কাজের জন্য তাঁরা করে থাকেন। এটা ঠিক আছে, তবে ক্যাসিনো যেটা আপনারা বলছেন, এই আইটেমটা বাংলাদেশে আমদানির যোগ্য নাকি যোগ্য না সেটা আমি জানিনা। যদি আমদানির যোগ্য না হয়ে থাকে তাহলে কীভাবে আমদানি করলো।

যেহেতু দেশে আনছে সেহেতু এটা আমদানির যোগ্য বলে আমি মনে করি। আমদানির যোগ্য একটা ক্যাসিনো, এটা একটা গেমিং ইন্সট্রুমেন্ট। ইনডোর গেম বাচ্চারাও খেলে, যেমন বসুন্ধরা মার্কেটে, যমুনা ফিউচার পার্কে দেখবেন বাচ্চারা খেলে। এই গেমিং ইন্সট্রুমেন্ট যখন জুয়ার কাজে ব্যবহার করে, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে তখন এটা গেমিং ইন্সট্রুমেন্ট হিসেবে থাকে না। তখনই এটা অপরাধ। তখনই সেখানে আইনের কথা আসবে।’

২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার থাকাকালীন সময়ে ক্লাবকেন্দ্রীক জুয়া বন্ধের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন দাবি করেন শহীদুল হক। তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৯-১০ সালে পুলিশ কমিশনার ছিলাম। তখন এসে এই ক্লাবকেন্দ্রীক যে সমস্ত জুয়া হয় সেগুলো বন্ধ করতে কঠিন নির্দেশ দিয়েছিলাম।

তবে তাঁরা আদালত থেকে রায় নিয়ে আসে। তাদের দাবি, এগুলো ইনডোর খেলা। এগুলো বন্ধ করা যাবে না। একটা সিন্ডিকেট আছে তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে রায় নিয়ে আসে। এই একটা সমস্যা, রেইড করতে গেলে দুনিয়ার নানান প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পক্ষে তদবির করে। তারা বলবে, আয়ের কোন ব্যবস্থা নেই ক্লাব চলবে কেমনে? এটা একটা বিব্রতকর অবস্থা। একদিনে কোর্টের আদেশ থাকে আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তদবিরও থাকে।’

রাজধানীর ক্লাবগুলোতে জুয়ার বিষয়ে আইজিপি থাকাকালীন সময়ে কোন তথ্য ছিল কীনা উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে এ.কে.এম.শহীদুল হক বলেন, ‘আমি যখন কমিশনার ছিলাম তখন এসব তথ্য ছিল। কিন্তু যখন আইজি ছিলাম তখন এই তথ্যগুলো আমাদের কাছে আসে না।’

জুয়ার ব্যাপারে পুলিশ কঠোর অবস্থান নেবে সেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে বলেও মনে করেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক। তিনি বলেন, ‘এখন জুয়া খেলা বন্ধ করতে হলে, দেশে তো আইনই নেই জুয়া খেলা বন্ধ করার জন্য। ওয়ারেন্ট ছাড়াতো পুলিশ ধরতেই পারেনা কাউকে। পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি জুয়া হয়। পৃথিবীর ২০০ দেশে জুয়া হয়, এখন এটা বন্ধ করার জন্য নীতি নৈতিকতা লাগবে। শুধু আইন দিয়ে তো করা যাবেনা।’

জুয়া আইনের সংশোধনের দাবি তুলে সাবেক এ পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আইনেরও কিছু সংশোধন দরকার। যদি পুলিশকে ক্ষমতায়ন করা হয়, তবে পুলিশ অনেক কিছুই করতে পারবে। ক্লাবকেন্দ্রীক জুয়া বন্ধ করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। আর বাইরেরগুলো হয়তো পুলিশ পারবে।’

কালের আলো/এমএইচএ/এএ