ভালুকার আরএস টাওয়ার বিস্ফোরণের কারণ খুঁজছে র‌্যাব-পুলিশ

প্রকাশিতঃ 9:44 am | March 25, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

ময়মনসিংহের ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকার আর.এস.টাওয়ার। ৬ তলা এ ভবনের তৃতীয় তলায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে প্রাণহানি ঘটেছে এক শিক্ষার্থীর। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও ৩ শিক্ষার্থী। এ ভবনটির সামনের অংশ দেখে বিস্ফোরণের ভয়াবহতা অাঁচ করা না গেলেও পেছনের অংশে চোখ আটকে যায়।

মূলত তিন তলার সি ফাইভ ফ্ল্যাটে ভয়াবহতার ছাপ স্পষ্ট। তৃতীয় তলার দু’টি দেয়াল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ভবনের চারপাশে জানালার কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ভবনের সীমানা প্রাচীরে। এ ভবনটির মালিক আব্দুর রাজ্জাক ঢালী স্থানীয় স্কয়ার ফ্যাশনে জুট ব্যবসা করেন। তিনি থাকেন ঢাকায়।

মাঝে মধ্যে তিনি এবং তার ছেলে এখানে এসে ভবনটির খোঁজ খবর নেন বলে কালের আলোকে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪’র কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে: কর্নেল শরীফুল ইসলাম।

তিনি জানান, গত ১৫ দিন আগে মালিক ৬ তলার এ ভবনটি উদ্বোধন করেন। এখনো অনেক জায়গায় রঙের কাজ চলছে। এ ভবনের ৬ তলায় মোট ৪২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতি ফ্লোরে রয়েছে ৮ থেকে ৯টি করে ফ্ল্যাট।

এর আগে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ৬ তলা ভবনটির তৃতীয় তলার পেছনের পার্টিশন ওয়াল ও জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে। জানালার অ্যালুমিনিয়ামের স্ট্রাকচারও পড়ে আছে। একটি জানালার ৫০ কেজি ওজনের গ্রিল কমপক্ষে ৫০ মিটার দূরে গিয়ে পড়েছে।

র‌্যাব জানায়, গত ১০ মার্চ মাসিক ৯ হাজার টাকায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের চার শিক্ষার্থী তৌহিদ অপু, শাহীন, দীপ্ত সরকার ও হাফিজ। তারা স্থানীয় একটি টেক্সটাইল মিলে ইন্টার্ন করছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে র‌্যাব।

র‌্যাব প্রাথমিকভাবে আরও জানিয়েছে, নিহত তৌহিদ অপুর বাড়ি বগুড়ায়। শাহীনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ, দীপ্ত সরকারের বাড়ি মাগুড়ায় ও হাফিজের বাড়ি নওগাঁর মান্দায়। বিস্ফোরণে দীপ্ত সরকারের শরীরের ৪৫ ভাগ ও হাফিজের ৫০ ভাগ পুড়ে গেছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দীপ্ত সরকার ও হাফিজের বরাত দিয়ে ময়মনসিংহ র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার কালের আলোকে জানান, ওরা দাবি করেছে ঘটনার সময় তারা ঘুমাচ্ছিল। রান্নাঘরে তখন মোবাইল ফোন চার্জ দেয়া ছিল। তবে মোবাইল থেকে এতো বড় মাপের বিস্ফোরণ বা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে না। এর পেছনে অন্য কিছু থাকতে পারে।

বিস্ফোরণের এ ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা কিনা এ প্রশ্নের জবাবে কমান্ডিং অফিসার লে: কর্ণেল শরীফুল ইসলাম আরও জানান, অনেক বড় মাপের একটি বিস্ফোরণ এটি। বিস্ফোরণে ঘরের পার্টিশন ওয়াল বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে।

বড় ধরণের এক্সপ্লোশন হয়েছে। নাশকতা কিনা তা এখনোই বলা যাচ্ছে না। আইইডি বা অন্য কিছু থাকতে পারে। বোম ডিসপোজাল টিম আসলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আমরা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি।

গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন এ ভবনে এখনো গ্যাস সংযোগ নেই। তবে আমরা তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার দেখতে পেয়েছি। অন্য ভাড়াটিয়ারাও চলে যাওয়ায় এসব বিষয় সম্পর্কে এখনো জানতে পারিনি আমরা।

এর আগে শনিবার (২৪ মার্চ) দিনগত রাত ১টার দিকে ওই ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তৌহিদ অপু নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। অগ্নিদগ্ধ শাহীনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এবং দীপ্ত ও হাফিজকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

কালের আলো/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email