ছয় মাসে পোল্ট্রি খাতে ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি
প্রকাশিতঃ 6:28 pm | July 07, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
ডিম ও মুরগির দাম কমে যাওয়ায় গত ছয় মাসে অন্তত ১০ হাজার খামার বন্ধ এবং প্রান্তিক খামারিদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপএ)।
এমতাবস্থায় পোল্ট্রি খাতের সংকট মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের উৎপাদনে ধরে রাখতে ১০০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছে সংগঠনটি।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এ সময় সংগঠনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকারসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সুমন হাওলাদার বলেন, ‘যখন বাজারে দেখি মুরগি ও ডিমের দাম হঠাৎ করে কমে গেছে, তখন সাধারণ ভোক্তা হয়তো খুশি হন। কিন্তু আমরা প্রশ্ন করব, এই স্বস্তি কি আসলেই স্বস্তি, না কি একটা সময়ে অস্বস্তির মূল কারণ হবে।
তিনি জানান, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। অথচ খামার পর্যায় বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, যা খামার পর্যায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। ১টি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা, যা খামার পর্যায় বিক্রয় করতে হচ্ছে ৬ টাকা থেকে ৮ টাকায়। গত ৫ থেকে ৬ মাস ধরে ব্রয়লার ও সোনালি প্রতি কেজি মুরগিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং প্রতিটি ডিমে ২ থেকে ৩ টাকা লোকসান হচ্ছে।
সুমন হাওলাদার জানান, প্রতিদিন ব্রয়লার, সোনালি , লেয়ার মুরগির উৎপাদন ৫ হাজার ২০০ টন , প্রতিদিন ডিমের উৎপাদন ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি পিস । এর ভিতর যদি প্রান্তিক খামারিরা ৩ হাজার টন মুরগি এবং প্রতিদিন ৩ কোটি পিস ডিম উৎপাদন করে থাকেন প্রতি কেজি মুরগিতে গরে ৩০ টাকা লোকসান ধরলে প্রতি টনে ৩০ হাজার টাকা হয়, ৩ হাজার টন মুরগিতে প্রতিদিন লোকসান দাঁড়ায় ৯ কোটি টাকা এবং তিন কোটি পিস ডিমে প্রতিদিন ২ টাকা গরে লোকসান ধরলে প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা দাঁড়ায়। ডিম এবং মুরগিতে প্রতিদিন লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকা। যা গত ৫ থেকে ৬ মাসে ডিম এবং মুরগিতে প্রান্তিক খামারিদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা হারিয়ছে।
তিনি বলেন, এ লোকসানের প্রধান কারণ কোম্পানি ও তাদের কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে উৎপাদিত ডিম-মুরগি এবং প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচের সাথে বৈষম্য থাকায় এই সুবিধা নিচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী অসাধু চক্র। ফলে প্রতিদিন শত শত খামার বন্ধ হচ্ছে। গত ছয় মাসে অন্তত ১০ হাজার ক্ষুদ্র মাঝারি খামার বন্ধ হয়েছে। একটি খামার বন্ধ মানে শুধুমাত্র মুরগি বা ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়া নয়, একটি পরিবার আয় হারাচ্ছে, একজন যুবক বেকার হয়ে যাচ্ছে, একটা সংসার ঋণের নিচে ডুবে যাচ্ছে।
সুমন হাওলাদার বলেন, বাজারে ডিম মুরগির চাহিদার ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ উৎপাদন করে কর্পোরেট কোম্পানি এবং তাদের কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে। কোম্পানি ও কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে উৎপাদন বন্ধ ও তাদের নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিদের ৯০ শতাংশ উৎপাদনকে ন্যায্য দাম দিয়ে তাদের উৎপাদনে ধরে না রাখলে এক সময় সস্তার প্রোটিন ডিম ও মুরগি বড়লোকের পণ্য হয়ে যাবে এবং বাজারে কখনই স্বস্তি ফিরে আসবে না।
সংবাদ সম্মেলনে খামারিদের রক্ষায় ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে-১. জাতীয় পোলট্রি শুমারি ও ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি।২. সকল ডিলার খামারি ব্যবসায়ীদের কে উদ্যোক্তা আইডি কার্ড প্রদান।৩. নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ ও নীতিনির্ধারণী সরকারি মিটিং প্রান্তিক যামারিদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ।৪. প্রান্তিকদের জন্য সরকারি সকল ধরনের নীতিগত সহায়তা ও জামানতবিহীন স্বল্পসুদের ঋণ ব্যবস্থা।৫. ফিড, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দামে স্বচ্ছত্য ও নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারিভাবে ফিডমিল ও হ্যাচারি স্থাপনের উদ্যোগ।৬. আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও ল্যাব সুবিধা সম্প্রসারণ এবং জেলা উপজেলায় কোল্ড স্টোরের ব্যবস্থা করতে হবে।৭. স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ন্যায্য মূল্য ও বাজার সংযোগ নিশ্চিতকরণ, ড্রেসড মার্কেটে প্রবেশ করতে হবে।৮. নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ডিম-মুরগি উৎপাদন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে।৯. বাজার ধস সহ বিভিন্ন সংকটকালীন প্রতিকূলতায় সময় প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রণোদনা ও ভর্তুকি ব্যবস্থা করতে হবে।১০. সুষ্ঠু কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নীতিমালা প্রণয়ন ও জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন ডেভলপমেন্ট বোর্ড গঠন।
কালের আলো/এমডিএইচ