‘২০২৫-২৬ বাজেট রাজনৈতিক শূন্যতার দলিল’

প্রকাশিতঃ 7:04 pm | June 21, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

২০২৫-২৬ বাজেটটি একটি রাজনৈতিক শূন্যতার বাজেট, যেখানে সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং লুণ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

শনিবার (২১ জুন) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে “বাজেট বিতর্ক : প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ” শীর্ষক সেমিনার এবং নীতিবিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

ফাওজুল কবির খান বলেন, বর্তমান বাজেটটি একটি রাজনৈতিক শূন্যতার বাজেট, যেখানে একই সঙ্গে সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং লুণ্ঠিত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলোর দুর্নীতির চক্রের পরিধি ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি ও ব্যক্তিগত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়।

তিনি তার অধীন মন্ত্রণালয়গুলোর সাম্প্রতিক কিছু অর্জন, চলমান কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ নদীপথ সংস্কার, অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও গ্রাহকপর্যায়ে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও নীতি নির্ধারকরা অংশ নেন।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ্ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, “ঘোষিত বাজেট আপাতভাবে গতানুগতিক মনে হলেও এটি ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনায় একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।”

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা বাজেটের ৯টি প্রধান দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় স্বচ্ছতা ও টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা পরিচালক মো. গুলজার নবী বলেন, “বর্তমান জিডিপি ৪৬৭ বিলিয়ন ডলার হলেও অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে খাদ্য, রেমিট্যান্স ও পোশাক খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।”

স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দকে জিডিপির ১.৭ শতাংশ হিসেবে “অপ্রতুল” আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, “স্বাস্থ্য খাতকে খরচ নয়, বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে।”

শিক্ষাখাতে বরাদ্দ হ্রাস এবং শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অসামঞ্জস্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিআইডিএস-এর গবেষক ড. জুলফিকার আলী।

নারীখাতে বরাদ্দ হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে অধ্যাপক শারমিন্দ নীলর্মি বলেন, “এখানে টোকেন বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল।”

অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা মনে করেন, “সংকোচনমূলক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি কর্মসংস্থানে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”

ড. কাজী ইকবাল রপ্তানিমুখী শিল্পে পরিকল্পনার অভাব এবং ট্যারিফ হ্রাসের বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

অধ্যাপক রাশেদ তিতুমীর বাজেটকে “রাজনৈতিক সংগ্রামের ফসল” আখ্যা দিয়ে বলেন, “জনগণের অর্থে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বিনিয়োগে উদ্ভাবনের সংযুক্তি চান, আর অধ্যাপক আবু আহমেদ সতর্ক করেন—“সংস্কার ছাড়া ট্যাক্স বাড়লে তা দুর্নীতির অর্থায়নে পরিণত হতে পারে।”

অধ্যাপক আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “সংবিধানিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কবলে।”

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বাজেটের বাস্তবায়নে সরকারি সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জনসম্পৃক্ততার অভাবের কথা তুলে ধরেন। অধ্যাপক অতনু রাব্বানী বলেন, “ঘুষের সংস্কৃতি না কমালে কর আদায় সফল হবে না।”

কালের আলো/এসএকে