চালের দাম কমলেও স্বস্তি নেই সবজি-মুরগিতে

প্রকাশিতঃ 10:31 pm | May 02, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

বাজারে সরু তথা মিনিকেট চালের দাম নিম্নমুখী। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে মোটা ও সরু নাজিরশাইল চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। মূলত বাজারে ইরি-বোরো ধানের নতুন চাল আসায় দাম কমেছে। অন্যদিকে, কাঁচাবাজাওে উর্ধ্বমুখী সবজির দর। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে মুরগির দামও। অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। শুক্রবার (২ মে) পুরান ঢাকার নয়াবাজার, শ্যামবাজার, রায় সাহেব বাজার, শাহজাদপুর, নতুনবাজার ও বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

গত মাহে রমজানে এবং ঈদের কয়েক দিন পর পর্যন্ত বাজারে সব রকমের সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল। মৌসুমি সবজি পর্যাপ্ত থাকায় রোজার মাসে সব মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল বাজার। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবারও চড়া হচ্ছে সবজির বাজার। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় অল্প অল্প করে প্রতিদিনই বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম।

স্বস্তি দিচ্ছে চালের বাজার। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা দোকানে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গত সপ্তাহে মঞ্জুর ও সাগর ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল, যা এখন বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। একইভাবে ডায়মন্ড ব্র্যান্ডের মিনিকেটের দাম ৮৮ টাকা থেকে কমে ৮৫ টাকা ও রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেটের দাম ৭৮ টাকা থেকে কমে ৭৬ টাকা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খুচরা চাল বিক্রেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এখন বোরো ধানের মৌসুম চলছে। বোরো ধান থেকে যে চাল হয়, সেটি বাজারে এসেছে। সাধারণত মিনিকেট হিসেবে পরিচিত ছাঁটাই করা চালগুলো এ ধান থেকেই আসে। ফলে বাজারে নতুন মিনিকেট চালের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও কমেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজি কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল। করলা ও বরবটি কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চালকুমড়া ও লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা। তবে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা ১২০ টাকা কেজি, আমদানি করা রসুন ১৮০ থেকে ২২০ টাকা এবং দেশি রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শাহজাদপুর বাজারের বিক্রেতা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সবজি তো এ মৌসুমে কম হয়। এ কারণে দাম আগের চেয়ে বাড়তি। আমরা আড়ত থেকে বেশি দামে কিনে আনছি।’ এদিন সকালে খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। যেখানে রমজানে দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

খিলবাড়িটেকের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘রমজানে দাম কম থাকলেও এখন কিন্তু সবকিছুর দাম বাড়তির দিকে। বাজারে কোন কিছুর অভাব নাই। কিন্তু কিছু হলেই বলে সরবরাহ সংকট।’ তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কেন এখন বাড়তে হবে? এখন তো পেঁয়াজের মৌসুম।’

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শীতকালীন সবজির সরবরাহ প্রায় শেষ। গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ এখনও পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি। তাছাড়া নতুন করে আবার টোলের নামে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। ট্রলারে করে সবজি আনলে ঘাটে চাঁদা দিয়ে কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে যায়।

অন্যদিকে, একই সময়ে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি এখন কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সকালে ডিম বিক্রি হয়েছে ডজনপ্রতি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। গরুর মাংস কেজিতে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের কই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

গত এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পোল্ট্রি মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতা আজগর আলী বলেন, গত সপ্তাহে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করেছি। তিন দিন আগে হঠাৎ পাইকারিতে দাম বেড়ে গেছে ১০ টাকা। তার ওপর চাহিদার তুলনায় জোগান কম। আমি দৈনিক যে পরিমাণ মুরগি আনি গত কয়েক দিনে সে পরিমাণ মুরগি পাচ্ছি না। আমার মতো এ বাজারের অনেক ব্যবসায়ী পাচ্ছে না। তাই মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে।

কালের আলো/আরআই/এমএসএএকে